স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২৫ অক্টোবর : শুক্রবার সিপিআইএম রাজ্য কার্যালয়ে ৫৬ দিন পর সিপিআইএম রাজ্য কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, রাজ্যের গণতন্ত্রের দুর্দশা এবং অর্থনৈতিক মন্দা অবস্থা সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। পরে এদিন সন্ধ্যায় সিপিআইএম রাজ্য কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক তথা বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী।
তিনি বলেন, গত ৫৬ দিনের লক্ষ করা গেছে কদমতলা, যুবরাজ নগর, পানিসাগরে একের পর এক সাম্প্রদায়িক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। সংখ্যালঘু এবং সংখ্যাগুরুর মধ্যে বিভাজন তৈরি করতে চাইছে। এগুলোর পেছনে মূলত কারণ হলো রাজ্যের বিজেপি , আই পি এফ টি এবং তিপরা মথার জোট সরকারের চরম ব্যর্থতা, দুর্নীতি এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি আড়াল করার সৃষ্টি করছে। কিন্তু মানুষের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। ক্ষোভে ফুঁসছে মানুষ। তিনি বলেন মহারাজা বীর বিক্রম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যকলাপে মনে হচ্ছে গেরুয়াকরণ করতে চাইছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে সরকারি টাকায় এমন কর্মসূচি গ্রহণ করছে যেগুলো ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যতের জন্য কোন প্রয়োজন নেই। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো উপাচার্য ইউজিসি-র গাইডলাইন জলাঞ্জলি দিয়ে গেরুয়া কর্মসূচির আয়োজন করে চলেছে। তিনি আরো বলেন, সদ্য সমাপ্ত দুর্গাপূজায় গত কয়েক বছরের মতো বিবর্ণ দুর্গাপূজা হয়েছে। মানুষ আর্থিকভাবে অভাব অনটনে আছে।
এবার এত বড় বন্যা থেকে মানুষ উঠে দাঁড়াতে যত সামান্য সহযোগিতা তো দূরের কথা, মানুষের জন্য আসা অর্থ রাশির উপরও ভাগ বসিয়েছে বিজেপির মন্ত্রী বিধায়করা। শুধু তাই নয়, এই টাকাগুলি দিয়ে বিজেপি -র মন্ত্রী বিধায়করা নির্লজ্জের মত পোস্টারিং করছে। যা মানুষের দৃশ্য দূষণ হচ্ছে বলে জানান তিনি। সাংবাদিক সম্মেলনে জিতেন্দ্র চৌধুরী আরো বলেন, চিকিৎসক নিয়োগ না করে এবং বহির্রাজ্য থেকে ধরে এনে কিডনি প্রতিস্থাপন এবং জটিল অস্ত্র প্রচার করে একদিনের চমক এবং ক্ষণিকের ঝলক দিয়ে চিকিৎসার ক্ষেত্রে হাব তৈরি করার কথা বলছেন মন্ত্রীরা। অপরদিকে স্কুল বন্ধ করে শিক্ষা ক্ষেত্রে হাব করতে চাইছে এই মন্ত্রীরাই। ফলে রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকরা বাধ্য হয়ে ছেলেমেয়েকে বেসরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তি করছে। এভাবে ত্রিপুরার ভবিষ্যৎ নিয়ে নষ্ট করে দিচ্ছে বিজেপি, আইপিএফটি এবং তিপরা মথার জোট সরকার বলে জানান তিনি। অপরদিকে ত্রিপুরা রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার বিষয় নিয়েও সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ তুলেছেন জিতেন্দ্র চৌধুরী। তিনি বলেন, ত্রিপুরায় আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটেছে। গত কয়েকদিনে ত্রিপুরার যতগুলি ঘটনা সংঘটিত হয়েছে সেগুলির সম্পর্কে খোঁজ নিলে জানা যায় এর সাথে জড়িত বিজেপি -র দেবতুল্য কার্যকর্তারা। এই দেবতুল্য কার্যকর্তারা বিজেপি -র শীর্ষক নেতৃত্বদের সাথে সামাজিক মাধ্যমে আবার ছবি পোস্ট করার বিষয়ও মানুষের সামনে উঠে আসছে। কোন ঘটনা ঘটার পর যখন বিজেপি -র দেবতুল্য কার্যকর্তারা জড়িত থাকার বিষয় সামনে আসে তখন পুলিশ সেখানেই অবশ হয়ে যায়। পুলিশের তদন্ত প্রক্রিয়া সেখানে থেমে যায়।
কোন কিছুই করতে পারছে না পুলিশ। মুখ্যমন্ত্রী এবং ডিজি দাবি করেন রাজ্যে নাকি শান্তির পরিবেশ আছে। কিন্তু তাদের এই মিথ্যা কথা পুলিশ বাহিনীকে খাটো করছে। এর বিরুদ্ধে আগামী দিন সিপিআইএমের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে বলে জানান তিনি। আরো বলেন, গত আগস্ট মাসের বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে রাজ্যের। বামফ্রন্টের প্রত্যেকটা সংগঠন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। মানুষকে বাঁচাতে গিয়ে পোকার কামড়ে জহির হোসেন নামে একজন কর্মী নিজের জীবন পর্যন্ত বন্যায় দিয়েছে। এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি লেখা হয়েছিল যাতে এন ডি আর এফ এবং এস ডি আর এফ থেকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয় প্রয়াত কর্মীর পরিবারকে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী এখন পর্যন্ত কোন জবাব দেননি। কিন্তু সরকার নিলিপ্ত হলেও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন সংস্থা থেকে শুরু করে মানুষ জন। সরকারের এহেন ভূমিকার প্রতিবাদ জানিয়ে আগামী দিন প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হবে। পাশাপাশি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি রাজ্য সম্মেলন আগামী জানুয়ারি মাসে শেষের দিকে আয়োজন করা হবে। সে সম্মেলনেও এই পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। একই সাথে আগামী ২৬ নভেম্বর রাস্তায় নেমে এক দেশ এক ভোটের বিরোধিতা করে প্রতিবাদ কর্মসূচি সংঘটিত করা হবে। আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এদিন এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সিপিআইএম নেতা তথা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক নারায়ণ কর, প্রাক্তন মন্ত্রী মানিক দে।