স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১ অক্টোবর : ‘সবার জন্য সুস্বাস্থ্য’ সুনিশ্চিত করাকে অন্যতম অগ্রাধিকার দিয়েছে রাজ্য সরকার। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্প এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিশ্বদরবারে সমাদৃত হচ্ছে। বিগত ৬ বছরে আয়ুষ্মান ভারতের অধীনে প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় উপকৃত হয়েছেন অসংখ্য দেশবাসী। ত্রিপুরাতেও এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পে উপকৃত হয়েছেন ৩,৪৩,৯৮৫ জন নাগরিক।
আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার ৬ বছর পূর্তি এবং আয়ুষ্মান ভারত ডিজিটাল মিশন উদযাপন উপলক্ষে মঙ্গলবার প্রজ্ঞাভবনে আয়োজিত রাজ্য স্তরের কর্মসূচির উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, আজ প্রখ্যাত চিকিৎসক ডাঃ জয় গোপাল জলির জন্মদিন। প্রতি বছরই এই দিনটি পালন করা হয়। তিনি দেশের ট্রান্সফিউশান মেডিসিনের জনক। তাঁর জন্মদিনকে সামনে রেখে ১৯৯৫ সাল থেকে এই দিনটি উদযাপন করা হয়। ভারতে ১ অক্টোবর দিনটি জাতীয় স্বেচ্ছা রক্তদাতা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান থেকে রক্তদান শিবিরে উপস্থিত থাকতে আমাকে আমন্ত্রণ করা হয়। আমি চেষ্টা করি বিভিন্ন রক্তদান শিবিরে উপস্থিত থেকে মানুষকে স্বেচ্ছা রক্তদানে এগিয়ে আসতে উৎসাহ প্রদান করার। ত্রিপুরার রক্তদান শিবিরকে কেন্দ্র করে সারা দেশের মানুষ তাকিয়ে থাকে কিভাবে এত সুন্দরভাবে রক্তদানের জন্য মানুষ এগিয়ে আসেন। এটা আমাদের কাছে খুবই গৌরবের। আমাদের ব্লাড ব্যাংকগুলিতে জনসংখ্যার অনুপাতে ১ শতাংশ রক্ত মজুত থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে ত্রিপুরার জনসংখ্যা যদি ৪০ লক্ষ হয় তবে আমাদের ৪০ হাজার ইউনিট রক্ত মজুত থাকতে হবে। রক্তের চাহিদা এবং সরবরাহের ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে প্রতিনিয়ত রক্তদান শিবির হয়। যারা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী অথচ রক্তদানে অনীহা রয়েছে তাদেরকেও উদ্বুদ্ধ করতে হবে। মহিলারাও এখন স্বেচ্ছা রক্তদানে এগিয়ে আসছেন। রক্ত এমন একটা জিনিষ যে কেউ বলতে পারবেন না তাদের রক্ত কার কাছে যাচ্ছে। রক্ত দেওয়া ও নেওয়ার ক্ষেত্রে একটা আধ্যাত্মিক ভাব চলে আসে। রক্তদানের ক্ষেত্রে রাজ্যে এখন উৎসবের মেজাজ পরিলক্ষিত হচ্ছে। পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রতি তিন মাস অন্তর এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রতি চার মাস অন্তর রক্ত দেওয়া যায়। এবিষয়গুলি কিন্তু জেনেও আমাদের মনে থাকে না। রক্তদান করা আমাদের সামাজিক দায়িত্ব। এতে নিজের শরীরও ভালো থাকবে। আর শরীরে কোন অসুস্থতা থাকলে সেটাও ধরা পড়বে। সার্জারি করার সময়েও রক্তের মজুত রাখতে হয়। তাই একজনের প্রয়োজনে অন্যজনকেই রক্তদানে এগিয়ে আসতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গরীব মানুষের কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। গরিবী কাকে বলে তিনি নিজে দেখেছেন। চা বিক্রি করতেন তিনি। আর সেই চা ওয়ালা এখন আমাদের স্বপ্নের সওদাগর। ভারতকে কিভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে সেটা দেখাচ্ছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর আয়ুষ্মান ভারত জন আরোগ্য যোজনা এখন সারা পৃথিবীর মধ্যে আলোচিত বিষয়। সমাজের আর্থিকভাবে দুর্বল অংশের মানুষের কথা চিন্তা করে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন তিনি। ২০১৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা শুরু হয়েছিল। আমি ত্রিপুরাবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই এমন একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য। প্রায় ৩ লক্ষ ৪৩ হাজার ৯৮৫ জন সুবিধাভোগী বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে এই প্রকল্পে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা পেয়েছেন। মোট ১৯৫ কোটি ৫১ লক্ষের অধিক টাকা দাবির নিষ্পত্তি হয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে রাজ্যে ১৫ লক্ষ ৩৫ হাজার ৩৬৪ জন সুবিধাভোগী রয়েছেন। আর বাকি জনসাধারণকে মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। ২০২৪ এর ১৫ ফেব্রুয়ারি এই প্রকল্পের সূচনা করা হয়েছিল। এই অল্প সময়ের মধ্যে ২ লক্ষ ৩ হাজার পরিবারে প্রায় ৪ লক্ষ ৪৮ হাজারের মতো কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। এই কার্ড তৈরির প্রক্রিয়া এখনো চলছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১২ হাজারের অধিক রোগী বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে পরিষেবা পেয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার অধীনে এখন পর্যন্ত ২ কোটি ২০ লক্ষের অধিক টাকার দাবি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সবসময় বলেন আমাদের মৌলিক অধিকারের মধ্যে স্বাস্থ্য একটি অন্যতম বিষয়। বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবার সুযোগ প্রদানে ইউনিভার্সাল হেল্থ কভারেজের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্য বিমা কভারেজ নিশ্চিত করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, রাজ্যের মানুষকে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানে সরকার খুবই আন্তরিক। এই লক্ষ্যে আয়ুষ্মান ভারত ডিজিটাল মিশনের মাধ্যমে চিকিৎসার সুযোগ প্রদান করতে আভা অ্যাপ চালু করা হয়েছে। আর এই পদ্ধতিতে এখন পর্যন্ত ২১ লক্ষ ৫১ হাজার ৯৪৯ জনকে আভা আইডি প্রদান করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দেশের গরীব অংশের মানুষের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে বিশেষ নজর রেখে কাজ করছেন। তাঁর নির্দেশিত দিশায় দেশ এখন বিকাশের লক্ষ্যে এগিয়ে চলছে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, মেডিকেল এডুকেশনের অধিকর্তা ডাঃ এইচ পি শর্মা, অতিরিক্ত সচিব রাজীব দত্ত, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের এমডি সমিত রায় চৌধুরী, রাজ্য পুলিশের ডিআইজি ইপ্পার মনচাক, ড. শুভেন্দু দেববর্মা সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ।