স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২৩ আগস্ট : পূর্বের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে গত ২০ এবং ২১ আগস্ট সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগরতলা শহরে বৃষ্টি হয়েছে ৩৩৩ মিলিমিটার। বিগত দিনের চেয়েও সবচেয়ে ভয়ানক বৃষ্টিপাত হয়েছে এই দুই দিন। ২১ আগস্ট পর্যন্ত রাজ্যে স্বাভাবিক বৃষ্টি হওয়ার প্রয়োজন ছিল ২১৪ মিলিমিটার। কিন্তু ২১ আগস্ট পর্যন্ত রাজ্যে বৃষ্টি হয়েছে ৫৩৮.৭ মিলি মিটার। অর্থাৎ ১৫১ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। দক্ষিণ জেলায় বৃষ্টিপাত হওয়ার প্রয়োজন ছিল ২৫২.৮ মিলিমিটার। কিন্তু বৃষ্টি হয়েছে ৯৮১.১ মিলিমিটার।
গোমতি জেলাতে স্বাভাবিককে চেয়ে ২৩৪ শতাংশ বেশি, পশ্চিম জেলায় ১৩৭ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে, সিপাহীজলা জলাতে ৯২ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে, খোয়াইতে ১৫০ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে, ধলাই জেলায় ১৬৩ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে, উত্তর জেলায় ৫৮ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে, ঊনকোটি জেলায় ৮৮ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। যার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষি ও বিদ্যুতের। শুক্রবার বিকেলে সচিবালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে এ কথা জানান কৃষি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতন লাল নাথ। তিনি বলেন প্রবল বৃষ্টিতে রাজ্যের ৬৮ হাজার ৮২৬ হেক্টর জমি নষ্ট হয়েছে। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী ২ লক্ষ ৮১৬ মেট্রিক টন প্রোডাকশন নষ্ট হয়েছে। যার ক্ষতি পরিমাণ ৫৩২ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা। এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এক লক্ষ ৪১ হাজার ৪০৬ জন কৃষক। রাজ্যে বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছে ৯ লক্ষ ৯০ হাজার ৪৫১ জন।
এর মধ্যে সক্রিয় গ্রাহক হলো ৯ লক্ষ ৫ হাজার ৬১৪ জন। এর মধ্যে ক্ষতি হয়েছে তিন লক্ষ ১৯ হাজার ৭৭৩ জন। ৩৫.৩১ শতাংশ গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত। আগরতলা শহরের ১ লক্ষ ৬৭,৬৩২ জন গ্রাহকের মধ্যে ৪০ হাজার ৫০০ গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২৪ শতাংশ গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত। সারাই করার ফলে বর্তমানে তেরো শতাংশ গ্রাহক কর্তৃপক্ষ রয়েছে। বিশেষ করে ৫০১ টি বিদ্যুতিক ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে। আরো বহু ট্রান্সফর্মার এখনো জলের নিচে রয়েছে। সুতরাং সংখ্যা আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ৬৪২ কিলোমিটার তার ছিঁড়ে গেছে। এবং আগরতলা শহরে যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়েছিল সেসব এলাকার মধ্যে অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সংস্কার হয়েছে। তারপরও বাকি সমস্ত জায়গায় বিদ্যুৎ সংস্কার করার জন্য সার্কেল ওয়ানে ২৫ টি গ্রুপ কাজ করছে। অতি গ্রুপে পাঁচজন করে বিদ্যুৎ কর্মী রয়েছে। দিনরাত কাজ করে বিদ্যুৎ কর্মীরা মানুষকে পরিষেবা দিচ্ছে। তবে যেসব এলাকায় ঢুকে রয়েছে সেসব এলাকায় বিদ্যুতিক লাইন বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। মন্ত্রী আরো জানান গোমতীর হাইড্রোইল প্রোজেক্টের গেট খুলে দেওয়ার বিষয় নিয়ে বিভ্রান্ত সৃষ্টি হয়েছে। সেটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কারণ এর ধারন ক্ষমতা ৯৪ মিটার। ৯৪ মিটারের উচ্চতে জল চলে গেলে নিজে থেকেই গেট খুলে যায়, আবার ৯৪ মিটারের নিচে জল চলে আসলে সেই গেট নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে সেটা নিয়ে অনেক বিভ্রান্ত সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু পার্শ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশের কোন ব্যাঘাত ঘটানোর ইচ্ছে ভারতের নেই। ভারত এমন একটি দেশ যারা পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে চলে। বর্তমানে বিদ্যুতের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ১৪০ কোটি বিদ্যুৎ বকেয়া দেবে ভারতকে। তারপরও বাংলাদেশকে ভারত বিদ্যুৎ দিয়ে চলেছে। সুতরাং বাংলাদেশের সাথে ভারত কোনভাবেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট করতে চায় না বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।