স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২২ আগস্ট : প্রবল বর্ষণে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতেও জল থৈ থৈ।বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী নিজ বাসভবন থেকে কিছুটা পথ পায়ে হেঁটে জল দিয়ে রওনা হয়েছেন অফিসের উদ্দেশ্যে। তখন মুখ্যমন্ত্রী সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, বন্যায় এত ভয়াবহ অবস্থা আগে কখনো হয়নি। রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা অমরপুর মহকুমায়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ -র সাথে বৃহস্পতিবার সকালে কথা হয়েছে।
তিনি জানিয়েছেন মানুষকে উদ্ধারের জন্য দুটি হেলিকপ্টার পাঠাবেন। এই হেলিকপ্টার দিয়ে মানুষকে এয়ার লিফটিং করা হবে। পাশাপাশি অনেকগুলি এনডিআরএফ -এর টিম পাঠানো হবে। পাশাপাশি কিছু বোটও পাঠানো হবে বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন প্রাকৃতিক দুর্যোগ সরকারের হাতে নেই। তারপরও পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি তিনি আরো বলেছেন রাজ্যের নদীগুলি অবস্থা অত্যন্ত উদ্বেগ জনক। বিপদ সীমার উপর দিয়ে জল বইছে।
জলসম্পদ বিকাশ দপ্তরের আধিকারিকদের সাথে কথা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন এখন পর্যন্ত কোন নদী লিকেজ হওয়ার খবর নেই। এদিকে মুখ্যমন্ত্রী সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছেন, সচিবালয়ে মুখ্য সচিব ও অন্যান্য দপ্তরের আধিকারিকদের সাথে বৈঠক করে প্লাবিত এলাকা থেকে মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় ফিরিয়ে আনার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এবং যারা এখনো আটকে আছেন তাদের দ্রুত উদ্ধারে হাত লাগানোর জন্য বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। গোমতি জেলার বিভিন্ন স্থানের বন্যার পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে খাদ্য ও জনসংভরন দপ্তরের সচিব রাভেল হেমেন্দ্র কুমারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে গোমতী জেলার বিশেষ জেলা শাসক হিসেবে। তাঁর নেতৃত্বে রয়েছেন একজন আইএস সহ পাঁচজন টিসিএস অফিসার। তাঁরা নাগরিকদের সুরক্ষা এবং ত্রাণ বিতরণের বিশেষ দায়িত্ব পালন করবেন। এদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়েও বড় ঘোষণা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কারণ এখন পর্যন্ত যতটা খবর ৩০ হাজারের অধিক মানুষ অস্থায়ী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের বাড়িঘর জলের নিচে। বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা ব্যাপক ব্যাঘাত ঘটছে। বিভিন্ন বেসরকারি স্কুলে পরীক্ষা চলছে। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে মুখ্যমন্ত্রী তথা শিক্ষা মন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা জানিয়েছেন, পরবর্তী নির্দেশ জারি না করা পর্যন্ত রাজ্যের সমস্ত স্কুল, কলেজ সহ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার জন্য। বর্তমানে আগরতলা শহরের আনাচে কানাচে সর্বত্র জলে জলাকার। নাগেরজলা, দুর্গা চৌমুহণি, উত্তর গেট, রাধানগর, শকুন্তলা, মোটর স্ট্যান্ড, রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবন সংলগ্ন এলাকা সহ বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন। বন্ধ যান চলাচল। দুপুরের নাগাদ পরিদর্শনে বের হন আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার।
সঙ্গীত ছিলেন আগরতলা পুর নিগমের ডেপুটি মেয়র মনিকা দাস দত্ত, কমিশনার শৈলেশ কুমার যাদব সহ অন্যান্য আধিকারিক। পরিদর্শনের পর মেয়র জানান আগরতলা শহরের মধ্যে নদীর জলগুলি প্রবেশ করছে। তাই শহরে কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, গত তিনদিন ধরে জল সামাল দিতে গিয়ে কিছু কিছু পাম্প মেশিন বিকল হয়ে যায়। তারপর এগুলি আবার মেরামত করা হয়েছে। বর্তমানে পাম্প মেশিনের মধ্যে ১৬ টি চালু রয়েছে। আরেকটি ইলেকট্রিক পাম্প চালু করার জন্য সারাই করা হচ্ছে। আগামী কিছুক্ষণের মধ্যেই জলস্তর নেমে যাবে শহর এলাকার থেকে।
কিন্তু যেসব এলাকা জলমগ্ন ছিল সেসব এলাকা গুলির মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে এনে নিয়মিত খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মানুষকে সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসতে আহ্বান জানান মেয়র। তিনি জানিয়েছেন নদীর জল ওভার ফ্লু হয়ে কিছু কিছু জায়গায় লিকেজ হয়েছে। সেগুলি দুটো নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তবে আতঙ্ক কোন কারণ নেই বলে জানান মেয়র। তবে এই দিন সকাল থেকে আগরতলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলমগ্ন থাকার কারণে গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। বিভিন্ন অফিস ছিল জলের নিচে। সরকারি কাজকর্ম অনেকটা ব্যাঘাত ঘটেছে অফিস গুলিতে। কর্মীরা বাড়ি থেকে বের হলেও যানবাহনের অভাবে তারা অফিসে পৌঁছাতে পারেনি। সব মিলিয়ে মিলিয়ে বলা যায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতির মুখে পড়েছে রাজ্য।