স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ৪ জুলাই : প্রাকৃতিক দুর্যোগের কয়েক মাস কেটে যাওয়ার পর অবশেষে কৃষকদের ভাগ্যে জুটল আর্থিক সহায়তা। বৃহস্পতিবার জমকালো অনুষ্ঠান করে দপ্তরের মন্ত্রী রতনলাল নাথের উপস্থিতিতে এ আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয় রাজ্যের কৃষকদের। মূল অনুষ্ঠানটি হয় রাজধানীর নজরুল কলাক্ষেত্রে। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী রতন লাল নাথ।
সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আগরতলা পুর নিগমের মেয়র তথা বিধায়ক দীপক মজুমদার, বিধায়িকা মিনারানী সরকার, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা পরিষদের সভাধিপতি হরিদুলাল আচার্য সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিকরা। গাছে জল দিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী রতন লাল নাথ। তারপর তিনি বক্তব্য রেখে বলেন, আজ সারা রাজ্যে ৩৯ টি সেক্টরে জাতীয় বিপর্যয় ত্রান তহবিল থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মিধিলেতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আর্থিক সহায়তা করা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে রাজ্যের ৭৮ হাজার ২৭৯ জন কৃষককে আর্থিক সহায়তা করা হয়। সেই অর্থ রাশির পরিমাণ ২১ কোটি ৯৭ লক্ষ ১৮ হাজার টাকা। আবার কয়েকদিন পর প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার মাধ্যমে আরো ৩০১৩ জন কৃষক ১ কোটি ১৩ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা। অর্থাৎ সর্বমোট ৮১ হাজার ২৯২ জন কৃষক আর্থিক সহযোগিতা পাবেন। মন্ত্রী আরও জানান এই সিস্টেম আগে ছিল না।
দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হওয়ার পর থেকে এই আধুনিক সিস্টেম চালু হয়েছে। মন্ত্রী আরো বলেন বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য হলো এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা এবং আত্মনির্ভর ত্রিপুরা। এ সরকারের মূল লক্ষ্য হলো গ্রাম, কৃষক ও গরিব মানুষদের উন্নয়ন করা। কারণ কৃষক হলো সকলের অন্নদাতা। তাই কেন্দ্র সরকার এবং রাজ্য সরকার ত্রিপুরার ৪ লক্ষ ৭২ হাজার কৃষক পরিবারের স্বার্থে কাজ করে চলেছে। তিনি আরো বলেন, কৃষকদের যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হয় সে বিষয়টা নিয়ে অতীতে কোন সরকার ভাবেনি। কিন্তু বর্তমান সরকার সবচেয়ে বেশি কৃষকদের গুরুত্ব দিয়ে সব ধরনের সহযোগিতা হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ কৃষকরা স্বয়ংবর হলে রাজ্য স্বয়ম্বর হবে বলে দাবি করেন মন্ত্রী রতন লাল নাথ। অনুষ্ঠানের শেষে এক মহিলা কৃষককে দিয়ে বোতাম টিপে একযোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের একাউন্টে টাকা প্রেরণ করে দপ্তর।
অন্যদিকে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে মিধিলি সাইক্লোনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আর্থিক সহায়তা তুলে দেওয়ায় বৃহস্পতিবার দূর্গা চৌমুহনী কৃষি মহকুমার পক্ষ থেকে কমলপুরের নজরুল ভবনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে উক্ত অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন বিধায়ক মনোজ কান্তি দেব, এছাড়াও উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দূর্গা চৌমুহনী পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারপার্সন শম্পা দাস, বিএসি চেয়ারম্যান দেবপ্রসাদ দেববর্মা, কমলপুর নগর পঞ্চায়েতের চেয়ারপার্সন প্রশান্ত সিনহা, ভাইস চেয়ারপার্সন সুব্রত মজুমদার, কমলপুর মহকুমা শাসক এল ডারলং, দূর্গাচৌমুহনী কৃষি তত্ত্বাবদায়ক বলেন্দ্র দেববর্মা সহ অন্যান্যরা। পাশাপাশি খোয়াই পঞ্চায়েত সমিতির কনফারেন্স হলে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতিগ্রস্ত ২৫৩৩ জন কৃষকের ব্যাংক একাউন্টে অর্থ প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিধায়ক পিনাকী দাস চৌধুরী।
তাছাড়া উপস্থিত ছিলেন খোয়াই পঞ্চায়েত সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান তাপস দাস, খোয়াই জেলা পরিষদের সুব্রত মজুমদার, খোয়াই কৃষি মহকুমা কৃষি তত্ত্বাবধায়ক শ্রীকান্ত নাথ সহ অন্যান্যরা। এদিন খোয়াই মহকুমা কৃষি এলাকার ২৫ টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও একটি পৌর পরিষদের ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতিগ্রস্ত ২৫৩৩ জন কৃষককে সর্বমোট ৫১ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। অপরদিকে সোনামুড়া মহকুমা বক্সনগর ব্লক অধীনস্থ কৃষি দপ্তরের উদ্যোগে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় যেসব কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেমন ধান চাষ কৃষিকাজ যারা করে তাঁদের ৮ হাজার টাকা,সবজি চাষ কৃষকদের প্রতি হেক্টরে ১৭ হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক তফাজ্জল হোসেন, বক্সনগর ব্লক চেয়ারম্যান সঞ্জয় সরকার,বিশিষ্ট সমাজসেবিক সুভাষ চন্দ্র সাহা,কৃষি তত্ত্বাবধায়ক নির্ধারক মনীশ দাস সহ অন্যান্যরা। প্রায় সাত থেকে আট মাস পর কৃষকরা আর্থিক সহযোগিতা পেয়ে অনেকটাই উপকৃত হয়েছে। উল্লেখ্য রাজ্যের কৃষক সংগঠন সারা ভারত কৃষক সভার পক্ষ থেকেও একাধিকবার দপ্তরের আধিকারিক, মন্ত্রী রতন লাল নাথ এবং মুখ্য সচিব সহ বিভিন্ন আধিকারিকদের কাছে ঘূর্ণিঝড় মিধিলিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহযোগিতার দাবি জানানো হয়েছে।