স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১ জুলাই : রাজ্যের সকল অংশের মানুষের জন্য উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছে বর্তমান সরকার। এই লক্ষ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়নে বিভিন্ন কাজকর্ম করা হচ্ছে। উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানে সরকারিভাবে বিভিন্ন ধরণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ – এই দিশা নিয়ে কাজ করছে রাজ্য সরকার। এর পাশাপাশি হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য অ্যাপোলো হাসপাতালের সাথে মৌ স্বাক্ষর করেছে রাজ্য সরকার। সেই সঙ্গে ২০২৫ সালের মধ্যে ১০০% টিবি-মুক্ত গ্রাম পঞ্চায়েত গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়েছে সরকার।
সোমবার আগরতলার প্রজ্ঞাভবনে আয়োজিত স্টপ ডায়রিয়া ক্যাম্পেন এর আনুষ্ঠানিক সূচনা করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
দুই মাস ব্যাপী এই অভিযান চলবে ১ জুলাই থেকে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্ষাকালে জলবাহিত রোগ ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাবে আক্রান্ত হয় প্রচুর শিশু ও বয়স্ক মানুষ। এমনকি বহুক্ষেত্রে অকালে প্রানসংশয় পর্যন্ত হয়। তাই এই রোগকে নির্মূল করার লক্ষ্য নিয়ে সরকার নিরন্তর কাজ করে চলছে। পাশাপাশি এই অভিযানে শূন্য থেকে পাঁচ বছর বয়সী প্রায় ৩ লক্ষ শিশুকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ওআরএস এবং জিংক ট্যাবলেট দেবেন স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মীরা। সেই সঙ্গে এদিন আশা কর্মীদের কাজের ভুয়সী প্রশংসা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
ডাঃ সাহা বলেন, হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে রাজ্য সরকার। এজন্য চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালের সাথে মৌ স্বাক্ষর করা হয়েছে। এর পাশাপাশি আমাদের সরকারি মেডিকেল কলেজ, কলকাতার মেডিকা হাসপাতাল এবং মণিপুরের শিজা হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা বিনামূল্যে করা হবে। এর খরচ রাজ্য সরকার বহন করবে এবং অভিভাবকদেরও আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে।
মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, টিবি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। টিবি বা যক্ষ্মা শনাক্তকরণেরও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিগত ৫ বছর ধরে ভারতবর্ষে ৫০ লক্ষের নিচে বসবাসকারী যেসমস্ত রাজ্যগুলি রয়েছে তারমধ্যে আমাদের রাজ্যও যক্ষ্মা দূরীকরণ কর্মসূচিতে সেরা পরিষেবা প্রদানের জন্য সম্মান পেয়েছে। এছাড়া আমাদের রাজ্যের ৪৮ শতাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত ও এডিসি ভিলেজ টিবি মুক্ত পঞ্চায়েত হিসেবে শংসাপত্র পেয়েছে। আর আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ১০০ শতাংশ পূর্ণ করা। সেটা ২০২৫ এর মধ্যে পূর্ণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের উন্নয়নকে অন্যতম অগ্রাধিকার দিয়েছে। ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ – এই শ্লোগান নিয়ে রাজ্য সরকার কাজ করছে। জটিল অস্ত্রোপচার এখন ত্রিপুরাতেই সম্ভব হচ্ছে। স্বাস্থ্য কর্মীরাও চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্যে সমস্ত জায়গায় রয়েছেন। রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা উন্নয়নের ফলে শিশু মৃত্যুর হারও অনেক কমেছে। মায়েদের মৃত্যুর হারও অনেক কমে গিয়েছে। যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়ায় আগে অনেক মৃত্যু হতো। সেটাও এখন অনেক কমেছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্য সরকার মোবাইল ফুড টেস্টিং ল্যাবরেটরি চালু করেছে। এর কাজ হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে খাদ্যের গুণগতমান পরীক্ষা করা। সরকারের তরফে যা যা করার দরকার সেটা করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি জনগণকেও নিজেদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে আরো সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে শিশুদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে অভিভাবকদের আরো সতর্ক থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তরের সচিব তাপস রায়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব ড. ব্রহ্মনিত কৌর, স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা ডাঃ সঞ্জীব দেববর্মা, পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধ দপ্তরের অধিকর্তা ডাঃ অঞ্জন দাস, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের মিশন অধিকর্তা রাজীব দত্ত সহ অন্যান্য আধিকারিকগণ। অনুষ্ঠানে শিশুদের ওআরএস ও জিংক ট্যাবলেট খাওয়ান মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা।