স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ৭ ফেব্রুয়ারি : বিজেপি দলের দুই বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ ও আশীষ কুমার সাহা সোমবার বিধানসভায় গিয়ে অধ্যক্ষের কাছে বিধায়ক পদ থেকে তাদের পদত্যাগ পত্র তুলে দেন। আগামী দিনে তাদের রাজনৈতিক রূপরেখা কি হবে তাও স্পষ্ট করেছেন। এই নিয়ে দীর্ঘ কয়েকদিন ধরেই চলছিল বহু জল্পনা ও কল্পনা। তা সোমবার স্পষ্ট হয়েছে। পদত্যাগ দেওয়ার পর তারা জানিয়েছেন খুব শীঘ্রই এই সরকারকে মাইনোরিটি করে দেওয়া হবে। এর মানে ফেলে দেওয়া হবে।
২০১৮ সালে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। বাম ফ্রন্টের শাসনে রচিত ২৫ বছরের কালো অধ্যায় কালো দিন থেকে ত্রিপুরার মানুষকে মুক্তি দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাস্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবকে সামনে রেখে এই মুক্তি এনে দিয়েছেন তারা। ২০১৮ সালের মুক্তির পর সুদীপ রায় বর্মণ এই মন্ত্রী সভায় মন্ত্রিত্ব পান। এখন বলছেন সরকার ফেলে দেওয়ার কথা। এর থেকে স্পষ্ট উপরে মানুষের কথা বললেও সরকার ফেলে দেওয়াই তাদের আসল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। এর তীব্র ভাষায় নিন্দা ও বিরোধীতা করে সরকার ও দল। এদিন প্রদেশ বিজেপি কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করতে গিয়ে এই কথা বলেন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী। বর্তমানে সরকার ও সরকারের কাছে কোন ঝুঁকি নেই। ভালো জায়গায় রয়েছে সরকার। দুই বিধায়কের পদত্যাগে সরকার পড়বে না। আগামী দিনে চেষ্টা করলেও এটা সম্ভব হবে না বলে জানান মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী। আগে যে দল ছেড়ছ এসেছিলেন তখনও একই স্বস্তির কথা বলেছিলেন।
সেই দল ছিল দিল্লিতে দোস্তি আর রাজ্যে ছিল কুস্তি। তা কমিউনিস্টদের উপঢৌকন হিসাবে রাজ্যকে শাসন করার ক্ষমতা তুলে দিয়েছিল। এটা কংগ্রেস দল করতে পারেনি বলেই সেই দলত্যাগ করে বেরিয়ে এসেছিলেন সকলে। বিজেপি রাজ্যের মানুষকে মুক্ত করেছে। সেদিন কংগ্রেস খারাপ ছিল। আজ সেই কংগ্রেস তার কাছে ভাল হয়েগেছে। এর থেকে স্পষ্ট তাদের রাজনৈতিক স্ট্যান্ড কি হবে । চার বারের কংগ্রেসের বিধায়ক। শেষে বিজেপি-র বিধায়ক হয়ে মন্ত্রিত্ব লাভ । বিচক্ষন এই নেতার রাজনৈতিক দৃষ্টি ভঙ্গি রাজ্যের মানুষ বুঝে গেছে। তবে কোন ধরনের ষড়যন্ত্র হলে তা মেনে নেবেনা রাজ্যের জনগণ। আগামী দিনে রাজ্যবাসী এই ষড়ন্ত্রের জবাব দেবে। কোন নেতার জন্য রাজ্যের মানুষ ভুগবে তা হতে দেওয়া হবে না বলে স্পষ্ট করেন তিনি। তিনি আরও বলেন ইতিমধ্যে সিপিএম দল থেকে কিছু গতি বিধি শুরু হয়েছে। তারা চাইছিল একটা অংশকে লেলিয়ে দিয়ে ঘোলা জলে কিভাবে মাছ ধরা যায় । জন গনের দ্বারা প্রত্যাখ্যায়িত হয়ে এরা ফের লড়াইয়ের ময়দানে নামতে চাইছে। বাকা পথে কমিউনিস্টদের হাতে সরকার তুলে দেওয়ার প্রয়াস এটা মানুষ উপলব্ধি করতে পারে। তিনি মানুষের কাছে আহ্বান জানান যে কোন মুল্যে এই সরকারকে রক্ষা করতে হবে। ২৫ বছর সহ্য করা গেলেও চার বছর সহ্য করা যাচ্ছে না।
২৫ বছর গনতান্ত্রিক পরিবেশ ছিল না রাজ্যে। তা বড় করে না দেখে চার বছরের পরিবেশকে বড় করে দেখার প্রয়োজনীয়তা চলে এসেছে বলে কটাক্ষ করেন তিনি। ২০১৮-র পরিবর্তনে যারা ভূমিকা নিয়েছিল সেই পরিবেশ যাতে না আসে সেদিকে নজর রাখার আহ্বান জানান তিনি। দল বিরোধী কার্যকলাপের একাধিক অভিযোগ ছিল তাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু বিজেপি দল তাদের সংশোধন করার সুযোগ দেয়। লোকসভা ও পরবর্তী নির্বাচন গুলিতে তাদের ভূমিকা কি ছিল তা জানে রাজ্যের মানুষ। এত সবের পরেও দলীয় নেতৃত্ব তাদের বারং বার সুযোগ দিয়েছে। সব শেষে তারা সুযোগ না নিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাদের জন্য বাম জামানাই ভাল ছিল। অনেক সুযোগ সুবিধা পেতেন। বিজেপি সরকার আসার পর সেই সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত হন। স্বাভাবিক ভাবে তাদের সমস্যা হবেই। এই সরকার ব্যক্তি বিশেষের জন্য নয়। প্রত্যেকটি মানুষের জন্য। সরকার মানুষের ভোটে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। মানুষের কাছে দায়বদ্ধ সরকার। দলও তাই মনে করে । এই সমস্ত ঘটনা ক্রমের ইতি টানা হয় এদিন। রাজ্যের মানুষ সব বোঝেন। যারা ভাবছেন মানুষ কিছুই বোঝেন না – তাহলে তারা ভুল করছেন । সাংবাদিক সম্মেলনে দলীয় অবস্থান সম্পর্কে বলতে গিয়ে এই কথা বলেন মুখপাত্র নব্যেন্দু ভট্টাচার্য। এখন পরিত্রাণ পাওয়ার জায়গা কোন কোনটা এটা তারাই ঠিক করবেন। বিজেপি তার অবস্থানে অনড় আছে। ব্যক্তি বিশেষ নয়, জনগণের স্বার্থে কাজ করতে হবে। বিরোধী দলনেতার বক্তব্য থেকে স্পষ্ট কারা কোথায় ছিলেন , আগামী দিনে তাদের গন্তব্য কি হতে চলেছে বলে জানান তিনি। দল যখন যাকে যেমন দায়িত্ব দেবে সে সেই দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করতে হবে বলে জানান মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী। অন্যদিকে বিজেপি-র মুখপাত্র নব্যেন্দু ভট্টাচার্য বলেন সাংবিধানিক ও সাংগঠনিক কোন ধরনের সংঙ্কট সৃষ্টির চেষ্টা সফল হবে না।