স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ৪ আগস্ট : হিজাব বিতর্ককে কেন্দ্র করে বিশালগড়ের কড়ইমুড়া দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ে শুক্রবার সৃষ্টি হয় চরম উত্তেজনা। কয়েক মিনিটের মধ্যে পরিস্থিতি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। স্কুলে প্রবেশ করে চলে ভাঙচুর। মোতায়েন করা হয় পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী। আহত স্কুল ছাত্র। তার নাম আলিয়া সরকার সুমন।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেশ কিছুদিন ধরে বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রীদের হিজাব পরিধান করে বিদ্যালয়ে না আসার জন্য বলেন। এমনকি হিজাব পরিধান করে বিদ্যালয়ে আসলে তাদেরকে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেন। তার উপর বহিরাগত কিছু যুবক গত কয়েকদিন ধরে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের হিজাব পরিধান করে বিদ্যালয়ে না আসার জন্য হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। একইভাবে শুক্রবারও বহিরাগত চার যুবক বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের হিজাব পরিধান করা নিয়ে হুমকি দিতে থাকে। তখন বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর এক ছাত্র প্রতিবাদ জানায়। বহিরাগত যুবকরা সেই ছাত্রকে বিদ্যালয় থেকে টেনে হিঁচড়ে বিদ্যালয়ের বাইরে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক ভাবে মারধর করে বলে অভিযোগ। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোটা ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন। কিন্তু তিনি নীরব ভূমিকা পালন করেন। এই খবর অভিভাবকদের কাছে পৌঁছানোর পর বিদ্যালয়ে ছুটে যায় অভিভাবকরা। তারপর বিদ্যালয়ে দেখা দেয় উত্তেজনা।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকাদের কক্ষে থাকা আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখতে পেয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গা ঢাকা দেন। খবর পেয়ে ছুটে যায় পুলিশ। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে অভিভাবকরা সড়ক অবরোধে সামিল হয়। পরবর্তী সময় আলচনাক্রমে পুলিশের হস্তক্ষেপে সড়ক অবরোধ মুক্ত হয়। এইদিকে দমকল বাহিনীর কর্মীরা আহত ছাত্রকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা এইদিন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের ভূমিকা নিয়ে এক হ্রাস ক্ষোভ উগড়ে দেয়। তারা আরও জানান ছাত্রকে মারধর করার সময় সবকিছু প্রত্যক্ষ করলেও শিক্ষক শিক্ষিকারা বাঁচাতে আসেনি। এদিকে এক অভিভাবকের অভিযোগ বহিরাগত কিছু যুবক স্কুলে প্রবেশ করে গত কয়েকদিন আগে মেয়েদের বলে আসে হিজাব পড়া যাবে না। তারপর শিক্ষক স্টাফ রুমে ছাত্রীদের ডেকে নিয়ে জানিয়ে দে হিজাব পরে স্কুলে না আসার জন্য। তারপর ছাত্রীরা এই বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ জানালে স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা অভিভাবকদের ডাকে শুক্রবার। কিন্তু এদিন অভিভাবকরা স্কুলে আসার আগেই ঘটে গেল রণক্ষেত্র। স্কুলের এক শিক্ষক জানান, সরকার স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পোশাক ঠিক করে দিয়েছে। তাই ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলের পোশাক পরিধান করে আসা দরকার। তবে স্কুলে যে হিজাব পরে আসতে পারবে না বলে কোন শিক্ষক শিক্ষিকার পক্ষ থেকে ছাত্রীদের বলা হয়নি। কিন্তু এদিনের ঘটনা রাজ্যে বিরল। এ ধরনের ঘটনা বিশেষ করে দেশের অন্যান্য রাজ্যে হয়ে থাকে। এবার বিশালগড়ে এই ঘটনায় যে গোষ্ঠীর মধ্যেই প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছে অভিজ্ঞ মহল। তবে অভিজ্ঞ মহল বলছে স্কুল সবার। জাত পাত, ধনী গরিব সকলের যাতে স্কুলে এসে সমানভাবে পড়াশুনা করতে পারে তার জন্যই স্কুলের পোশাক নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। আর এই নির্দেশিকা যদি না মেনে রং বা গুষ্টি বিচার হয় স্কুলে, তাহলে তো ছেঁকা লাগবেই।