স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ৪ জুলাই : কুমারঘাটে উল্টো রথ ঘিরে যে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে তার তদন্ত গত ছয় দিনেও এক পা এগোতে দেখা যায় না। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জেলা শাসক দ্বারা যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল তাও হিমঘরে চলে গেছে বলে মনে পড়ছে শোকস্তব্ধ কুমারঘাট বাসী। বুধবার ঘটনা সংগঠিত হওয়ার ছয় দিন অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পরেও তদন্তের ফাইল এখনো হিমঘরে রয়েছে।
গত ছয় দিনে শুধুমাত্র শোকাহত পরিবারদের মিলেছে সরকারি আর্থিক সহযোগিতা। কিন্তু সেদিনের ঘটনায় পেছনে কে ভিলেন প্রশ্ন এখনো জনমনে ঘুরপাক খাচ্ছে। কারণ রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে শুরু করে যারাই পরবর্তী সময় কুমারঘাটে গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে কথা বলেছেন তারাই বিভিন্ন রহস্যজনক মন্তব্য করেছেন। এর অর্থ এই নয় যে কেউ জেনে বুঝে এই ঘটনা সংগঠিত করেছে। তবে যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটা অনিচ্ছাকৃত গণহত্যা বললেও ভুল হবে না। কারণ এই ঘটনার পর ইসকন মন্দির কর্তৃপক্ষ যে বক্তব্য সামনে এনেছে সেটা হল প্রতিবছরের মত এ বছরও রথযাত্রার আয়োজন করা হয়েছিল। এ রথযাত্রার এলাকাবাসী সহযোগিতা করেছে।
এতটুকই দুঃখ প্রকাশ করে এখন পর্যন্ত চুপ বসে আছে আয়োজক কুমারঘাট ইসকনের ধর্মীয় সাধু সন্ত্রাস। এদিকে পুলিশ প্রশাসনের কাছ থেকে ঘটনার পর জানানো হয় সেদিন উল্টো রথ বের হওয়ার পর ঘটনাস্থল পর্যন্ত যাওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু কিভাবে পুলিশকে এড়িয়ে উল্টো রথ সেই জায়গায় পৌঁছেছে সেই বিষয় নিয়েও দ্বন্দ্বে রয়েছে মানুষ। অপরদিকে বিদ্যুৎ নিগম থেকে সূত্রে জানা যায় যে রোড ম্যাপ অনুযায়ী রথ ফেরার কথা ছিল সেই রোগ ম্যাপ উল্টো রথের অনুষ্ঠানের দিন পরিবর্তন করা হয়েছে। যার পরিণাম এই ঘটনা। আরো জানা গেছে বিদ্যুৎ নিগমের কাছে আবেদন পত্রে যে রোড ম্যাপটি দেওয়া হয়েছিল সেই রাস্তা যত বিদ্যুৎ লাইন ছিল সবগুলো শাটডাউন ছিল সেদিন। এদিকে পূর্ত দপ্তরের সূত্রে জানা যায় অনুষ্ঠানে আয়োজকরা রথযাত্রা উৎসব নিয়ে কোন ধরনের অনুমতি নেওয়া হয়নি। যার ফলে রথের উচ্চতা এবং দৈর্ঘ্য প্রস্থ মাপার ও কোন প্রয়োজন বলে মনে করেনি দপ্তরের কর্মীরা। কিন্তু রথের দিন সবকিছু ঠিকঠাক হলেও উল্টো রথের দিন ঘটে গেল এই মর্মান্তিক ঘটনা। এবং এই ঘটনায় সাত পুণ্যার্থীর মৃত্যু হয়েছে। স্বজন হারায় আর্তনাদ এখনো কুমারঘাটে যেন মানুষকে বাকরুদ্ধ করে রেখেছে। আবার আহত যারা হয়েছে তারাও আগামী দিন কতটা স্বাভাবিক জীবন যাপনে করতে পারবে সে তো বড় প্রশ্ন।
কিন্তু প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে এর দায়ভার সেদিন কার উপর ছিল। মূল কথা হলো যদি রোড ম্যাপ পরিবর্তন হয়ে থাকে তাহলে কার অনুমতিতে সেদিন রোড ম্যাপ পরিবর্তন হয়েছে ? এবং ঘটনার স্থল পর্যন্ত যদি রথ নিয়ে না যাওয়ার কথা থাকে, তাহলে পুলিশ প্রশাসন কেন বাধা দেয় নি? এবং পূর্ত দপ্তর থেকে যদি কোন রকম অনুমতি নাই চাওয়া হয়ে থাকে তা হল কেন রথ নির্মাণের সময় সরকারি দায়িত্ব পালন করতে যায়নি দপ্তরের আধিকারিকরা ? রথযাত্রার আগে রথ পরিদর্শন করা দপ্তরের কর্মীদের তো দায়িত্ব ছিল। যেহেতু তারা সাধারণ মানুষের করের পয়সা দিয়ে বেতন গুনে। তাহলে আমন্ত্রণের অপেক্ষা কেন করবে পূর্ত দপ্তরের কর্মীরা। বিদ্যুৎ নিগমের পক্ষ থেকে যে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে তাতে বলা যায়, সেদিন রথের সময় ঘটনাস্থলে কেন বিদ্যুৎ নিগমের কর্মী ছিলেন না ? আর যদি থেকেই থাকতো তাহলে কেন সাথে সাথে রথের রোড ম্যাপ পরিবর্তন এর বিষয়ে উদ্বোধন কর্তৃপক্ষকে অবগত করে বাধা দেওয়া হয়নি ? আর যখন রাথের উপরে তৈরি ধাতু দিয়ে চূড়া বিদ্যুতের সংস্পর্শে এসে গেছে তখন প্রশাসন নিজেদের গা বাঁচাতে দৌড়ঝাঁপ করেছে। এবং নেতা মন্ত্রীদের পিছু পিছু হাসপাতাল এবং মৃত ও আহতদের বাড়িতে ঘুরছে। এবং বলার অপেক্ষা রাখে না যখন রথ পুন্যার্থীদের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে তখন মহারথীরা নিজেকে দায় ভার অন্যের ঘাড়ে চাপাচ্ছে। এখন পর্যন্ত এক ইঞ্চি তদন্ত এগিয়েছে বলা মুশকিল। কারণ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন কিছুই জানা যাচ্ছে না। এক প্রকারভাবে আহত ও নিহতদের বাড়ি, ঘরে এবং হাসপাতালে গিয়ে নাটক মঞ্চ তৈরি করে রেখেছে হাইপ্রোফাইল লোকেরা। ব্যাঘাত করছে হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবাও। আর এভাবে চলতে থাকলে নেতা মন্ত্রীদের খোঁজখবর নেওয়াও দিন দিন কমে যাবে। আর কয়েকদিন পরে তদন্তের ফাইল বন্ধ হয়ে যাবে। ভুলে যাবে রাজ্যবাসী এই ঘটনা। এবং সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো আয়োজক ধর্মীয় বিশ্ব সামাজিক সংস্থা ইসকনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত শোক প্রকাশ ছাড়া আর কিছুই করতে দেখা গেল না। সুতরাং উদ্বেগ গত ছয় দিন কেটে গেলেও সুষ্ঠু তদন্ত করার বিষয়ে মাথা ব্যাথা নেই কারোর।