স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ৭ জুন : রাজ্য বিদ্যুতের চাহিদা এবার ছাপিয়ে গিয়েছে সর্বকালীন রেকর্ড। এতদিন পর্যন্ত যেখানে দুর্গাপূজার সময় একদিনে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা থাকতো প্রায় ৩৩২ মেগাওয়াট। সেখানে এবার পুজোর আগেই গ্রীস্মের দাবদাহে চাহিদা ৩৫৭ মেগাওয়াট ছাপিয়ে গেছে।
শুধু তাই নয়, বিদ্যুতের অত্যধিক ব্যবহারের ফলে চাপ বাড়ছে ট্রান্সফর্মার সহ অন্যান্য যন্ত্রাংশে। যে কারণে অসম্ভব দাবদাহের সময়ে ট্রান্সফর্মার কিংবা তার পুড়ে গিয়ে বিভিন্ন এলাকা অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ নিগমের কর্মী আধিকারিকরা রাত দিন এক করে ত্রুটি সারাই করছেন। অত্যধিক চাপ এর ফলে ফের বিকল হয়ে যাচ্ছে যন্ত্রাংশ। তীব্র দাবদাহের মাঝে রাজ্য বিদ্যুৎ নিগমের এই অসহায় অবস্থার কথা ব্যাখ্যা করে বুধবার মহাকরণে সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা জানান বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতন লাল নাথ। বিদ্যুৎ নিগমের ব্যবস্থাপক অধিকর্তা দেবাশীষ সরকারকে পাশে বসিয়ে বিদ্যুৎ মন্ত্রী বিদ্যুৎ ভোক্তাদের অনুরোধ করে জানিয়েছেন, নিজের অসচেতনতার জন্য গোটা এলাকার কষ্টের কারণ হবেন না। অসম্ভব দাবদাহ থেকে নিস্তার পেতে বিদ্যুৎ ভোক্তারা বাড়িতে বা কার্যালয়ে এসি মেশিন এর ব্যবহার সহ ফ্যান, কুলার এর ব্যবহার বাড়াতেই পারেন। এটা তাদের ব্যক্তিগত ইচ্ছা অনিচ্ছার বিষয়।
কিন্তু তা করার আগে অবশ্যই বিদ্যুৎ নিগমের স্থানীয় কার্যালয় কে অবহিত করতে হবে। কারণ স্থানীয় বিদ্যুৎ চাহিদার উপর ভর করেই ওই এলাকায় ট্রান্সফর্মার বসানো হয়। গ্রাহকরা বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়িয়ে দিলে ট্রান্সফরমারের শক্তিবৃদ্ধি সহ প্রয়োজনে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তার ব্যবহারও করা যেতে পারে । আর এটা না হবার কারণেই এবার ঘনঘন ট্রান্সফর্মার বিকল হয়ে যাচ্ছে, তার পুড়ে যাচ্ছে। যে কারণে বেশ কিছু সময়ের জন্য বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট এলাকায়। আর এটাকেই একাংশ মানুষ লোডশেডিং বলে বিরক্তি প্রকাশ করছেন, গরমে কষ্টের কারণে ক্ষোভের কথা জানাচ্ছেন। কিন্তু যতদিন পর্যন্ত না গ্রাহকরা সচেতন হবেন, বিদ্যুৎ নিগমকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন, ততদিন এ জাতীয় সমস্যা থেকেই যাবে। বিদ্যুৎ মন্ত্রী এদিন আরও জানিয়েছেন, বর্তমানে রাজ্যে এক মিনিটের জন্যও লোডশেডিং নেই। বিদ্যুতের অসম্ভব চাহিদার সময়েও লোডশেডিং না দিয়ে বহি রাজ্য থেকে চড়া দামে বিদ্যুৎ কিনে প্রায় অর্ধেক দামে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানো হচ্ছে। কিন্তু যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে এক্ষেত্রে নিগমের কিছুই করার থাকেনা। তারপরেও শুধুমাত্র আগরতলায় শহরেই ত্রুটি সারাইয়ের জন্য ১৫ টি গাড়ি দিন রাত ২৪ ঘন্টার জন্য তৈরি করে রাখা হয়েছে। প্রতিটি গাড়ির জন্য তিনজন করে অভিজ্ঞ কর্মীও রাখা আছে।
তার পরেও সময় মত সব কাজ সারিয়ে তোলা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ নিগমের কর্মীরা তারপরেও যেভাবে কোন কোন জায়গায় মানুষের ক্ষোভ সামলে ২৪ ঘন্টা পরিষেবা বজায় রেখেছেন, এজন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানান মন্ত্রী। বিদ্যুৎ মন্ত্রী এদিন জানিয়েছেন, গরমের তীব্রতা লক্ষ্য করেই নিগম গত এপ্রিল মাসে জনসাধারণের কাছে আবেদন জানিয়েছিলো,একজন সচেতন গ্রাহক হিসেবে তারা যেন বিদ্যুতের ব্যবহার বৃদ্ধি সম্পর্কিত বিষয় স্থানীয় কার্যালয়ে অবহিত করেন। কিন্তু এতে খুব কম পরিমাণে সাড়া পাওয়া গিয়েছে। অথচ সর্বকালের রেকর্ড ছাপিয়ে গিয়েছে এবারকার বিদ্যুৎ চাহিদা। আর এ কারণেই ঘনঘন বিকল হয়ে যাচ্ছে যন্ত্রাংশ। লোডশেডিং মুক্ত রাজ্য গড়তে বিদ্যুৎ নিগমকে সহযোগিতা করার জন্যও বিদ্যুৎ ভোক্তাদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন মন্ত্রী।