স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ৫ জুন : সারা দেশের মতো রাজ্যে সোমবার বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন হয়। ১৯৭৩ সালের ৫ই জুন প্রথম বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয় সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে। রাষ্ট্রসংঘ পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে সচেতনতামূলক কর্মসূচি প্রচার ও প্রসারের অঙ্গ হিসেবে প্রতিবছর এই দিনটিতে নতুন নতুন ভাবনার উপর গুরুত্ব আরোপ করে।
এই বছর ২০২৩ সালের ভাবনা- প্লাস্টিক দূষণ রোধের সমাধান। পার্বত্য রাজ্য ত্রিপুরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জৈব বৈচিত্রের এক অতুলনীয় সমাহার। প্লাস্টিক দূষণের কারণে জনগণের স্বাস্থ্যের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি প্রাকৃতিক ভারসাম্য ব্যাহত হচ্ছে। দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এই সমস্যার সমাধানে দায়িত্বশীল ও সচেতন নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকের পরিবর্তন আবশ্যক। পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে পরিবেশ বান্ধব করতে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছেন মিশন লাইফ। যাতে পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বেছে নেওয়া যায় তাঁর একটি বিষয় হচ্ছে একক ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জন। সোমবার বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আগরতলা পুর নিগমের সেন্ট্রাল জনের উদ্যোগে মহারাজগঞ্জ বাজারে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ স্বচ্ছতা অভিযান ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি। আমার জীবন , আমার স্বচ্ছ শহর অভিযান- এই আহ্বানকে সামনে রেখে এদিনের কর্মসূচির সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী ডঃ মানিক সাহা। উপস্থিত ছিলেন মেয়র দীপক মজুমদার, ডেপুটি মেয়র মনিকা দাস দত্ত, কর্পোরেটর রত্না দত্ত সহ অন্যান্যরা।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী সকলের সঙ্গে সাফাই অভিযানে হাত লাগান। একই সঙ্গে করেন বৃক্ষরোপণ। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পরিবেশ ঠিক না থাকলে মানুষের অস্তিত্ব থাকবে না। আজকের দিনের মূল বিষয় হলো প্লাস্টিক মুক্ত করা। মানুষ যাতে প্লাস্টিক ব্যবহার না করে তার জন্য মানুষের মধ্যে সচেতনতা বোধ জাগ্রত করা হচ্ছে। সারা বিশ্ব প্লাস্টিক মুক্ত করার স্লোগান তুলেছে। মুখ্যমন্ত্রীর এদিন আরো বলেন, প্লাস্টিক বর্জন না করলে বন্যা থেকেও পরিত্রাণ পাওয়া যায় না। কারণ ড্রেইনে নিকাশি ব্যবস্থা উপর প্রভাব পড়ে। গাছ ছাড়া পরিবেশ নির্মল রাখা সম্ভব নয়। তাই অন্যতম হলো বৃক্ষরোপণ করা। কারণ পর্যাপ্ত পরিমাণে গাছ থাকলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হয়। তাই বৃক্ষরোপণ করার দিকেও সকলকে গুরুত্ব দিতে হবে। রাজ্যের পরিবেশ ভাল। দূষণের মাত্রা কম। পরিবেশকে রক্ষা করতে গিয়ে সমস্ত ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বন কর্মীদের বলা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রয়োজনে গাছ কাটলে তাঁর পরিবর্তে নতুন দুটি গাছ লাগিয়ে ভারসাম্য বজার রাখার দিকটিও তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রন পর্ষদের উদ্যোগে ৫০ তম বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন করা হয়। এই উপলক্ষ্যে সুকান্ত একাডেমিতে বসে আঁকো প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এবছরের ভাবনা প্লাস্টিক দূষণের সমাধান। এই দূষণ একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এককালীন ব্যবহার যোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে দুটি বিভাগে অনুষ্ঠিত হয় বসে আকো প্রতিযোগিতা। এছারা শ্রেষ্ঠ ইকো ক্লাব ও এন জি ও – কে পুরস্কৃত করা হবে বলে জানান ত্রিপুরা দূষণ নিয়ন্ত্রন পর্ষদের মেম্বার সেক্রেটারি ডঃ বিশু কর্মকার। প্রধানমন্ত্রী মিশন লাইফের সূচনা করেছেন। এতে সাতটি বিষয় রয়েছে। সেগুলির উপর সকলকে সচেতন হতে আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে পরিবেশকে রক্ষা করার শপথ নিয়ে দিনটি উদযাপন করা হয় টিএসইসিএল-র উদ্যোগে। বিশ্বায়নের ফলে পরিবেশ দিন দিন দূষিত হচ্ছে। পরিবেশকে রক্ষা না করলে ভবিষ্যতে এই পৃথিবীকে আর বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। আর পরিবেশ দূষণের একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে যানবাহন। দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে যানবাহনের সংখ্যা। যানবাহনের এই কার্বন-ডাই-অক্সাইড পরিবেশকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ছোট ছোট দূরত্বে গাড়ি, বাইকের ব্যবহার না করে বাইসাইকেলের ব্যবহার পরিবেশকে অনেকটাই রক্ষা করতে সহায়ক হবে। এই বার্তাকে সামনে রেখে টিএসইসিএল-র উদ্যোগে সোমবার ভুতুরিয়া স্থিত প্রধান কার্যালয়ের সামনে থেকে বাইসাইকেল মিছিলের আয়োজন করা হয়। এই বাই সাইকেল মিছিলে অংশ নেন বিদ্যুৎ নিগমের এমডি দেবাশিষ সাহা।
অপরদিকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে ভারতের গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশনের উদ্যোগে সিটি সেন্টারের সামনে পথচারী মানুষদের মধ্যে চারা গাছ বিতরণ করা হয়। উপস্থিত ছিলেন ভারতের গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশনের রাজ্য সম্পাদক নবারুণ দে, রাজ্য সভাপতি পলাশ ভৌমিক সহ অন্যান্য নেতৃত্বরা। সারা রাজ্যে ডি ওয়াই এফ এ-র সদস্যরা নিজ বাড়িতে চারা গাছ রোপণ করবে। পরিবেশ রক্ষায় সকলকে এগিয়ে এসে গাছ লাগানোর আহ্বান জানান যুব সংগঠনের রাজ্য সভাপতি পলাশ ভৌমিক।