Friday, February 14, 2025
বাড়িরাজ্যত্রিপুরাকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের গেটওয়ে হিসেবে পরিণত করার লক্ষ্যে জোর কদমে কাজ চলছে :...

ত্রিপুরাকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের গেটওয়ে হিসেবে পরিণত করার লক্ষ্যে জোর কদমে কাজ চলছে : প্রধানমন্ত্রী


আগরতলা, ৪ জানুয়ারি (হি.স.) : ত্রিপুরাকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের গেটওয়ে হিসেবে পরিণত করার লক্ষ্যে জোর কদমে কাজ চলছে। দীর্ঘকাল ধরে বয়ে বেড়ানো অভিশাপ থেকে এখন মুক্তির পথে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন ফেরি করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সাথে তিনি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় টিনের ঘরও সুবিধা পাওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের প্রচেষ্টার প্রশংসা করলেন। এমবিবি বিমানবন্দরে নবনির্মিত টার্মিনাল ভবনের উদ্বোধনে ত্রিপুরায় এসে আগরতলার স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে জনসভায় দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ আগরতলায় এমবিবি বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল ভবনের উদ্বোধন করেছেন। পাশাপাশি ত্রিপুরা সরকারের অভিনব প্রয়াস মুখ্যমন্ত্রী ত্রিপুরা গ্রাম সমৃদ্ধি যোজনা এবং মিশন ১০০ বিদ্যাজ্যোতি স্কুলস্ প্রজেক্টের সূচনা করেন তিনি। এদিন স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে ওই অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরার রাজ্যপাল সত্যাদেও নারাইণ আর্য, মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া এবং প্রতিমা ভৌমিক সহ ত্রিপুরা মন্ত্রিসভার সদস্য ও সাংসদ রেবতী ত্রিপুরা উপস্থিত ছিলেন।

আজ আগরতলা বিমানবন্দরে পৌঁছেই প্রধানমন্ত্রী নতুন টার্মিনাল ভবনটি ঘুরে দেখেন। টার্মিনালের প্রত্যেকটি অংশ খুব কাছে দেখে কাজের গুণমান যাচাই করেছেন তিনি। কেন্দ্রীয় অসামরিক পরিবহণ মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া নতুন টার্মিনাল ভবনের মাস্টার প্ল্যান প্রধানমন্ত্রীকে বুঝিয়েছেন। সেখান থেকে স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে আসার সময় রাস্তার দু-ধারে প্রচুর মানুষের ভিড় দেখে প্রধানমন্ত্রী আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। সে-কথা তিনি ভাষণেও উল্লেখ করেছেন এবং ত্রিপুরার মানুষের ভালবাসা দ্বিগুণ হারে ফিরিয়ে দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। আজ তাঁকে স্বাগত জানাতে ত্রিপুরার সংস্কৃতির সংমিশ্রণে নাচ ও গানের প্রদর্শনী হয়েছে।

আজ প্রধানমন্ত্রী স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে পৌঁছে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের সাথে দেখা করেন এবং তাঁদের কাছে অভিজ্ঞতা জেনে নেন। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ঘর পেয়ে এক জনজাতি কন্যা প্রধানমন্ত্রীকে সামনে পেয়ে খুশিতে কেঁদে ফেলেন। প্রত্যেকেই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধাপ্রাপ্তি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সবিস্তারে জানিয়েছেন।

এদিন জনসভায় উদাত্ত ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একুশ শতকের ভারত সকলকে সাথে নিয়ে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাওয়ার উদ্দীপনায় ভাসছে। ভারসাম্যহীন উন্নয়নের ফলে বহু রাজ্য প্রকৃত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তাতে, মৌলিক পরিষেবাগুলিও তাঁদের কপালে জুটেনি। দশকের পর দশক ধরে ত্রিপুরা সেই বঞ্চনাই সহ্য করে গেছে। তাঁর কথায়, ত্রিপুরায় পূর্বতন সরকারের জমানায় দুর্নীতির গাড়ি জোর গতিতে ছুটত। এমন-কি পূর্বতন সরকারের উন্নয়নের দিশায় সঠিক লক্ষ্য স্থির ছিল না। কিন্তু সেই পরিস্থিতি থেকে ত্রিপুরা মুক্তি পেয়েছে। এখন ত্রিপুরায় হীরা মডেল কাজ করছে। তাঁর দাবি, হীরা মডেলকে সামনে রেখে ত্রিপুরা যোগাযোগের ক্ষেত্রে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে।

এমবিবি বিমানবন্দরে নবনির্মিত বিমানবন্দর সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, ত্রিপুরার সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধার সংমিশ্রণে নতুন টার্মিনাল ভবনের নির্মাণ হয়েছে। তাঁর দাবি, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আকাশপথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই বিমান বন্দরটি বিরাট ভূমিকা পালন করবে। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, ত্রিপুরাকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের গেটওয়ে হিসেবে পরিণত করার লক্ষ্যে জোর কদমে কাজ চলছে। সড়ক, রেল, আকাশপথ এবং জলপথে যোগাযোগের পরিকাঠামো উন্নয়নে অভূতপূর্ব বিনিয়োগ করা হচ্ছে। তাতে বাণিজ্য ও শিল্পের হাব হিসেবে পরিণত হওয়ার সাথে ব্যবসার করিডর হতে চলেছে ত্রিপুরা, দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ডাবল ইঞ্জিন সরকার যখন ডাবল স্পিডে কাজ করে তখন তার জুরি মেলা ভার। তাঁর মতে, ডাবল ইঞ্জিন সরকারের অর্থ হচ্ছে সম্পদের সঠিক ব্যবহার, অর্থাৎ সংবেদনশীলতা এবং জনগণের শক্তি বৃদ্ধি করার সাথে সমৃদ্ধির জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা। এদিন প্রধানমন্ত্রী জনকল্যাণে গৃহীত প্রকল্পের জন্য ত্রিপুরা সরকারকে বাহবা দিয়েছেন। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী ত্রিপুরা গ্রামীণ সমৃদ্ধি যোজনার মাধ্যমে গ্রাম স্বরাজের লক্ষ্যকে পূরণের দিকে পা বাড়িয়েছে ত্রিপুরা। কারণ, গ্রাম শক্তিশালী হলে তবেই দেশ মজবুত হবে।

সাথে তিনি যোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর জন্যই টিনের ছাদ দেওয়া ঘর এখন ওই প্রকল্পের সুবিধার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, বিগত সরকারের নীতির কারণে টিনের ছাদ দেওয়া ঘর প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ঘর পাওয়ার যোগ্য ছিল না। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের প্রস্তাবে কেন্দ্রীয় সরকার নতুন করে ভাবতে বাধ্য হয়েছে এবং নীতির পরিবর্তন করে এখন টিনের ছাদ দেওয়া ঘরও ওই যোজনায় সুবিধা পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, একুশ শতকের ভারতকে আধুনিক করে তোলার জন্য নতুন প্রজন্মের চিন্তায় জাতীয় শিক্ষা নীতি প্রনয়ণ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এতে স্থানীয় ভাষায় পঠন-পাঠনে অধিক জোর দেওয়া হয়েছে। তারই অন্তর্গত ত্রিপুরার ছাত্রছাত্রীরা এখন মিশন-১০০ বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্পের সহায়তা পাবে।

প্রধানমন্ত্রীর দাবি, ১৫ থকে ১৮ বছরের ছেলেমেয়েদের কোভিডের টিকাকরণের লক্ষ্যই হল তাঁদের পড়াশুনায় কোনওভাবেই যাতে ব্যাঘাত না ঘটে। সেই লক্ষ্যে গতকাল থেকে টিকাকরণ শুরু হয়েছে। তাতে কোভিড নিয়ে ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকদের চিন্তা অনেকটাই কমবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি টিকাকরণ নিয়ে ত্রিপুরার প্রশংসাও করেছেন। তিনি জানান, ত্রিপুরার ৮০ শতাংশ মানুষ টিকার প্রথম ডোজ এবং ৬৫ শতাংশ মানুষ টিকার দুটি ডোজ নিয়েছেন। ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের টিকাকরণেও ত্রিপুরা একই ভাবে সাফল্যের নাজির স্থাপন করবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।

এদিকে, ত্রিপুরার বাঁশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্লাস্টিকের বিকল্পের স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, প্লাস্টিকের বিকল্প প্রদানে ত্রিপুরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। এখানে তৈরি বাঁশের ঝাড়ু, বোতল এবং এমন অনেক সামগ্রীর সারা দেশের বাজারে ভীষণ চাহিদা রয়েছে। তাতে বাঁশ দিয়ে পণ্য উৎপাদনে প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। সাথে তিনি জৈব চাষ নিয়েও ত্রিপুরা যথেষ্ট সম্ভাবনাময় বলে দাবি করেছেন।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য