Thursday, April 18, 2024
বাড়িরাজ্যজল্পনার অবসান, মথা ছাড়া যৌথ মঞ্চ হলো বিরোধী দলগুলোর

জল্পনার অবসান, মথা ছাড়া যৌথ মঞ্চ হলো বিরোধী দলগুলোর

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১৯ জানুয়ারি : বৃহস্পতিবার দুপুরে রুদ্ধশ্বাস বৈঠকের পর চূড়ান্ত হলো বাম এবং কংগ্রেস সহ অন্যান্য দলের জোট। পরে এদিন দুপুরে আগরতলা প্রেস ক্লাবে এক মঞ্চের ঘোষণা দেন সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বীরজিৎ সিনহা, বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন, প্রাক্তন বিধায়ক আশীষ কুমার সাহা সহ বামফ্রন্টের শাখা সংগঠনের নেতৃত্ব। গত পাঁচ বছরে ভোট লুটের কারণে মানুষের গণতন্ত্র বিপন্ন। আর সেই চাহিদা থেকে কংগ্রেস, সিপিআইএম, পিপলস পার্টি, ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপি, সিপিআই এক মঞ্চে আসতে বাধ্য হয়েছে। রাজ্যবাসীকে গণতন্ত্রের যে স্বাদ, প্রশ্বাস, নিঃশ্বাস সুরক্ষিত রাখতে এবং সুরক্ষিত করতে সমস্ত গণতান্ত্রিক দলকে একমঞ্চে আসার আহ্বান করা হয়েছে।

যাতে বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের পরাজয় নিশ্চিত করা যায়। আর যারা ব্যক্তি স্বার্থের ভুলে মানুষের স্বার্থের কথা ভাবেন তারা এই এক মঞ্চে আসবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি। আরো জানান সবকটি রাজনৈতিক দল এক ছাতার নিচে আসার মূল কারণ হলো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা। গণতন্ত্র না থাকলে মানুষের অধিকার বিপন্ন। মানুষ মত প্রকাশ করতে পারছে না। বাক স্বাধীনতা পর্যন্ত হারিয়ে গেছে পাঁচ বছরে বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন শুধু বিরোধী রাজনৈতিক দলের জোট নয়, সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রিয় মানুষের জোট চাওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। আগামী ২১ জানুয়ারি চিফ ইলেক্টোরাল অফিসারের কাছে গিয়ে সারা রাজ্যের মানুষের পক্ষ থেকে শান্তিপূর্ণভাবে একটি ডেপুটেশন দেওয়া হবে। এদিন সকাল দশটায় রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের সামনে থেকে মিছিল করে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন কমিশনের আধিকারিক এর কাছে যাওয়া হবে বলে জানান সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী।

জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেন, তিপ্রা মথার সুপ্রিমোর কাছে একমঞ্চে আসার বিষয়ে আপিল করা হয়েছে। যেহেতু তিনি গণতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ সবকটি রাজনৈতিক দলকে একসাথে পেতে চাইছেন। সুতরাং রাজ্যবাসী আশা আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী কংগ্রেস এবং সিপিআইএমের সাথে এক ছাতার নিচে আসবে বলে আসা ব্যক্ত করে জিতেন্দ্র চৌধুরী। গণতন্ত্র সুরক্ষিত করতে সব অংশের মানুষকে “মাই ভোট মাই রাইট” স্লোগান তুলেন। এবং জাতীয় পতাকা নিয়ে হবে পথ চলা। কারণ বিজেপি গণতন্ত্রের বিপদ। তাই বিপন্ন গণতন্ত্র রক্ষা করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিজেপিকে যারা হটাতে চায় তাদের এক মঞ্চে আসা দরকার। বিজেপি প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে পারবে না বলে জানান জিতেন্দ্র চৌধুরী। বিরজিৎ সিনহা বলেন, বহু আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে মানুষ বিজেপি ও আই পি এফ টি জোট সরকার প্রতিষ্ঠিত করেছিল। কিন্তু মানুষ এই সরকারের উপর তিতি বিরক্ত হয়েছে। আর এটা বুঝতে পেরে বিজেপির সন্ত্রাসের পথ অবলম্বন করেছে। তাই রাজ্যের মানুষ এই সন্ত্রাসের সঠিক জবাব দিতে প্রস্তুত। তাই কংগ্রেস এবং সিপিআইএম একটি প্লাটফর্মে আসতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বীরজিৎ সিনহা। মানুষকে সাথে নিয়ে বিজেপি সরকারকে পরাস্ত করতে পারবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি বলেন, আগামী ২১ জানুয়ারি গনতন্ত্র প্রিয় মানুষ একটি মিছিল এবং ডেপুটেশন প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবং সকলের হাতে জাতীয় পতাকা থাকবে। কোন দলীয় পতাকা নিয়ে এই কর্মসূচি হবে না। মূল স্লোগান থাকবে “আমার ভোট আমার অধিকার এবং আমি ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চাই।” তিনি এদিন সাংবাদিক সম্মেলন থেকে আরো জানান, আসন ভাগাভাগি করে হবে লড়াই। যে আসনে যে দল প্রার্থীকে দায়িত্ব দিলে বিজেপি জামানত জব্দ করা যাবে সেই অনুযায়ী দেওয়া হবে প্রার্থী। বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন বলেন কংগ্রেস এবং সিপিআইএমের কাছাকাছি আসার বিষয়ে রাজ্যের মানুষ অত্যন্ত খুশি হয়েছে। এদিন তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, কংগ্রেসের জোট জামানায় যেমন খুন হয়েছে, বামফ্রন্টের জামানাতেও খুন হয়েছে। মানুষ পরবর্তী সময় বিজেপি ও আইপিএফটি জোটকে সুযোগ দিয়েছিল তাদের জামানায় হয়তো এগুলো বন্ধ হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এগুলি বন্ধ হয়নি। বরং দেখা গেছে গত পাঁচ বছরে খুন, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, অপহরণ, বাড়িঘরে আক্রমণ সহ সমস্ত অপরাধমূলক ঘটনার গ্রাফ উর্ধ্বমুখী। অর্থাৎ অন্যায় অবিচার এগুলি ছাপিয়ে গেছে এই জোট সরকারের আমলে। আর এই তথ্য প্রশাসনিকভাবে লোপাট করার চেষ্টা হয়েছে বলে দাবি করে তিনি। আগামী দিনে এ জোট সরকার এই অপরাধমূলক ঘটনা শূন্যের কোটায় নিয়ে আসবে বলে জানান তিনি। আরো বলেন, যারা দুর্নীতি এবং সন্ত্রাস করেছে তাদের কংগ্রেসের স্থান দেওয়া হবে না। তারা আসতে চাইলেও লাভ হবে না বলে জানান তিনি। দলীয় সূত্রের খবর এদিন বৈঠকে আসন ভাগাভাগি নিয়ে ও চূড়ান্ত আলোচনা হয়েছে। ৭০:৩০ আসলে রফা হচ্ছে কংগ্রেস এবং সিপিআইএম। ৭০ শতাংশ আসনে প্রার্থীদের সিপিআইএম, ৩০ শতাংশ আসনে প্রার্থী হবে কংগ্রেস। দুই দলই প্রার্থীর তালিকায় যুবকদের নিয়ে আসতে ইচ্ছুক। কিন্তু এদিন একটি মঞ্চে দেখা গেল না বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার। দীর্ঘ দিনের পুড় খাওয়ার রাজনীতিবিদ মানিক সরকারকে ব্রাত্য করে জোটের মঞ্চ সেজেছিল। দীর্ঘ সময়ের পলিটব্যুরোর সদস্যও তিনি। তাকে দূরে সরিয়ে হয়েছে এদিনের জোটের ঘোষণা। কিন্তু ২০ বছর মুখ্যমন্ত্রী পদে ছিলেন এবং দলের মূল দিশারী হয়ে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এদিন এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বামফ্রন্টের আহ্বায়ক নারায়ণ কর, কংগ্রেস নেতা আশীষ কুমার সাহা সহ অন্যান্য দলের নেতৃত্ব।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য