স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২৮ সেপ্টেম্বর : গলছে না বরফ। আবারো আশার বাণী শুনে অসন্তোষ্ট হয়ে বাড়ি ফিরলেন চাকরি হারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রতিনিধি দল। বুধবার পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী ১০,৩২৩ চাকরিচ্যুত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দুটি প্রতিনিধি দল পৃথকভাবে সচিবালয়ে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করেন। প্রদীপ বণিকের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি মুখ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করে জানান তাদের স্কুলমুখী করার জন্য সরকার যাতে ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহণ করেন, সেই বিষয়ে দীর্ঘক্ষণ মুখ্যমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করেছেন, মুখ্যমন্ত্রীকে অবগত করা হয়েছে সম্প্রতি চাকরিচ্যুত শিক্ষক শিক্ষিকারা তথ্য জানার অধিকার আইনে জানতে পারেন ২০১৪ সালে হাইকোর্টের রায় এবং পরবর্তী সময় সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী কতিপয় শিক্ষককে বিরুদ্ধে রায় হয়।
অর্থাৎ যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল তাদের চাকরি গেছে। বাকি চাকরিচ্যুত শিক্ষকরা এই মামলায় পক্ষ ভুক্ত নয়। সেই নথিপত্র এদিন মুখ্যমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর সাথে থাকা গভমেন্ট অফ ত্রিপুরার অ্যাডভোকেট জেনারেল ও ল সেক্রেটারির কাছে তুলে ধরা হয়। পরবর্তী সময় মুখ্যমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন বিষয়টি কিভাবে আইনিভাবে তাদের সহযোগিতা করা যায় এবং পূর্বের স্থানে ফেরানো যায় সেই বিষয়ে গভমেন্ট অফ ত্রিপুরার অ্যাডভোকেট জেনারেল, ল সেক্রেটারির এবং মন্ত্রিসভার সদস্যদের সাথে আলোচনা করবেন। পরবর্তী সময় সেই বিষয়ে তাদের অবগত করা হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন বলে জানান চাকরিচ্যুত শিক্ষক প্রদীপ বণিক।
এদিকে চাকুরী হারা বিজয় কৃষ্ণ সাহার নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল মুখ্যমন্ত্রী সাথে দেখা করে চরম অসন্তুষ্ট ব্যক্ত করেন। এ প্রতিনিধি দলে উপস্থিত বিজয় কৃষ্ণ সাহা জানান মুখ্যমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের পর বুঝা গেছে এতদিন ধরে আরটিআই অনুযায়ী যে দাবিটি করে আসা হয়েছিল সেটা ন্যায্য দাবি। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন আইনি বিশেষজ্ঞদের সাথে এই বিষয়ে আলোচনা করবেন।
এ দলের চাকরিচ্যুত শিক্ষিকা ডালিয়া দাস জানান, মুখ্যমন্ত্রী চাপে পড়ে তাদের সাথে দেখা করেছেন। কিন্তু স্পষ্ট হয়ে গেছে সরকারের কোন সদিচ্ছা নেই তাদের চাকুরী ফিরিয়ে দেওয়ার। এবং তাদের চাকুরী দেওয়ার জন্য কোন সময়সীমাও বেঁধে দেয়নি বলে এদিন তিনি অসন্তুষ্ট ব্যক্ত করেন। তিনি আরো বলেন প্রতিনিধি দলের একজন বলেছিলেন যে সরকার চাইলে তাদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে পারে। তখন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন এ ধরনের কথা বললে পুনরায় যাতে মুখ্যমন্ত্রী কাছে না যায়। মুখ্যমন্ত্রীর এ ধরনের বিরক্তি হওয়ার বিষয়টি তীব্র নিন্দা জানান ডালিয়া দাস। ডালিয়া দাস বলেন, একজন শিক্ষককে এভাবে অসম্মান করাটা ঠিক হয়নি। কারণ তিনিও কোন শিক্ষক দ্বারা মুখ্যমন্ত্রী এবং চিকিৎসক হয়েছেন। তাই আগামী দিনে তাদের মরিয়া হয়ে আন্দোলনে নামতে হবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, আগামী দিনে কতটা পথ দেখাবে দিশেহারা চাকরিচ্যুত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। কিন্তু বহু চাকরিচ্যুত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দেখা যায়নি আসতে। কারণ দুদিন আগে যে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস শহরের বুকে চাকুরিচ্যুত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নামিয়ে আনা হয়েছে সেটা হয়তো তারা ভুলতে পারেনি। কারণ বিধানসভা অধিবেশনে তাদের জন্য সদর্থক ভূমিকা নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি ছিল। কিন্তু দেখা যায় ২৩ সেপ্টেম্বর বিধানসভা অধিবেশনে সরকার তাদের জন্য কোনরকম ঘোষণা দেয়নি। তাই তারা ২৬ সেপ্টেম্বর শহরে কয়েক শতাধিক চাকরিচ্যুত শিক্ষক শিক্ষিকা জমায়েত হয়ে বিধানসভা চলো অভিযান সংগঠিত করেছিল। কিন্তু সার্কিট হাউস সংলগ্ন এলাকায় আসতে তাদের উপর সেদিন নেমে আসে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। চলে পুলিশের টিয়ার গ্যাস, বেপরোয়া লাঠিচার্জ। আর এদিন পুরুষ পুরুষদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি চাকুরিচ্যুত মহিলা শিক্ষিকারাও। রাস্তার পাশে লুটিয়ে পড়েছিল বহু চাকুরিচ্যুত শিক্ষক শিক্ষিকা। এমনকি সেদিন কলঙ্কিত হয়েছিল রাজ্যের প্রশাসন। কারণ যারা একটা সময় স্কুলে শিক্ষক শিক্ষিকা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এবং যাদের হাতে খড়ি দিয়ে আজ বিভিন্ন পেশায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ছেলে মেয়েরা, সেই শিক্ষক-শিক্ষিকাকে রাস্তায় ফেলে লাঠিপেটা, বুটের লাথি খেতে হয়েছে। চোখ দিয়ে পড়েছে জল। কেউ কেউ সংজ্ঞা হীন হয়ে পড়েছিল রাস্তায় পাশে। কিন্তু কোন এক সময় এই শিক্ষকরাই মেরুদন্ড ছিলেন। যারা আজও বহু ছেলে মেয়ের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র। যাই হোক আগামী দিনে এই জটিলতা কতটা নিদর্শন হবে সেটা হয়তো সময় বলবে।