Friday, March 21, 2025
বাড়িখেলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এই প্রথম কোনও বড় টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ...

দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এই প্রথম কোনও বড় টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম।

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ১৯ ফেব্রুয়ারি : দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এই প্রথম কোনও বড় টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম। গত সাতমাসে বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতি যেমন টলমল, তেমনই হাল ক্রিকেটেরও, দলের অন্দরে অশান্তি, হঠাৎ করে নিয়ামক সংস্থা বিসিবির খোলনলচে বদলে যাওয়া, বিতর্কে ভরা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ, এবং গুচ্ছ গুচ্ছ ব্যর্থতা। গত কয়েক মাসে কী দেখেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট! সেই সব ব্যর্থতা পিছনে ফেলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভালো পারফর্ম করাটা যেন নিজেদেরকেই চ্যালেঞ্জ করা।

বাংলাদেশে হাসিনা জমানায় বোর্ড সভাপতি ছিলেন নাজমুল হাসান পাপন। এক-দুবছর নয়, টানা ১২ বছর বিসিবির শীর্ষপদে ছিলেন তিনি। তাঁর আমলে বিস্তর দুর্নীতি, বিস্তর বেনিয়ম, বিস্তর ব্যর্থতার অভিযোগ ছিল বটে তবু বিসিবি চলত একটি সুপরিকল্পিত সিস্টেমের মধ্যে দিয়ে। সেই সিস্টেম কার্যত পুরোপুরি ভেঙে গেল হাসিনা বিদায়ের পর। বাংলাদেশ বোর্ডের প্রধান হিসাবে বসে পড়লেন অন্তর্বর্তী সরকারের পছন্দের ফারুখ আহমেদ।

ফারুখের আগমনের পর কী হল? যে সিস্টেমে এতদিন বিসিবি চলছিল সেটা ভেঙে গেল। শাকিব আল হাসানের মতো ক্রিকেটার দেশেই ঢুকতে পারলেন না। তামিম ইকবাল অবসর ভেঙে ফিরলেও ফের অবসরে চলে গেলেন। লিটন দাসের মতো সিনিয়র ক্রিকেটারকে স্রেফ বাদ দিয়ে দেওয়া হল। ফলে যেটা দাঁড়াল, সেটা হল অনভিজ্ঞ কিছু ক্রিকেটার। যারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিতান্তই শিশু, তাঁদের পাঠানো হচ্ছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে। গোটা বাংলাদেশ দলে সে অর্থে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার জনা চারেক। মুশফিকুর রহিম, মহম্মদউল্লাহ, যারা ফর্ম নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন, তাস্কিন আহমেদ এবং বাতিলের খাতায় চলে যাওয়া মুস্তাফিজুর রহমান। অধিনায়ক শান্ত নিজেও তুলনায় নতুন, মেহেদি হাসান মিরাজ প্রতিভাবান, তবে অভিজ্ঞতা তারও কম।

এর বাইরেও সমস্যা অনেক। বিসিবিতে রদবদলের পর থেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেটে ডামাডোল পরিস্থিতি। এ বছর যে বিপিএল ওপার বাংলায় হয়েছে, সেটাও বিতর্কে ভরা। কখনও ক্রিকেটাররা মাইনে পাননি। কখনও বিদেশিরা ম্যাচ বয়কট করেছেন, কখনও বাসচালক বিদেশিদের টাকা আটকে দিয়েছেন, এসবের বাইরে গড়াপেটার অভিযোগ তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটে বিতর্কের আবহ। অধিনায়কত্ব নিয়েও টালবাহানা হয়েছে বিস্তর। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে হঠাৎ করেই অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। একপ্রকার জোর করেই তাঁকে অধিনায়ক করে রাখা হয়েছে। রয়েছে স্বজনপোষণের অভিযোগও। শোনা যাচ্ছে স্রেফ সেই সব ক্রিকেটাররাই সুযোগ পাচ্ছেন, যারা শাসক শিবিরের তল্পিবাহক। সব মিলিয়ে সমস্যা জর্জরিত বাংলাদেশ ক্রিকেট। এত সমস্যা পেরিয়ে অনভিজ্ঞ বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভালো কিছু করলে সেটা অবাক হওয়ার মতোই বিষয় হবে।

দিন কয়েক আগে দেশের ক্রিকেটের হাল ফেরানোর লক্ষ্যে একটি মহাগুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ডেকেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। দেশের সব প্রাক্তন অধিনায়ককে ডেকে তাঁদের মতামত নিয়ে দেশের ক্রিকেটের খোলনলচে বদলে ফেলতে চাইছিলেন বিসিবির বর্তমান সভাপতি ফারুখ আহমেদ। দুঃখের বিষয়, ফারুখের ডাকা সেই বৈঠকে দেশের অর্ধেক প্রাক্তন অধিনায়কই গরহাজির ছিলেন। যারা হাজির ছিলেন, তাঁদের চেয়ে গরহাজিরদের ওজন অনেক বেশি। তামিম ইকবাল, খালেদ মাহমুদ সুজন, খালেদ মাসুদ পাইলট, রকিবুল হাসান, শফিকুল হক হীরা, শাকিব আল হাসানরা ওই বৈঠকে যাননি। আসলে এটাই বাংলাদেশ ক্রিকেটের সার্বিক চিত্র। সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ক্রিকেটটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াস নেই। সেখানে ক্রিকেট বোর্ডে নৈরাজ্য, সেখানে ক্রিকেটারদের বেতন সমস্যা এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও অস্থিরতাই প্রাধান্য পায়।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য