স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ৪ অক্টোবর: ফিলিস্তিন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (পিএফএ) দুটি দাবি তুলেছিল গত মে মাসে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত ফিফা কংগ্রেসে। প্রথম দাবি ছিল ইসরায়েলি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনকে (আইএফএ) সাসপেন্ড করা, পাশাপাশি দেশটির জাতীয় ফুটবল দল যেন ফিফা আয়োজিত কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে না পারে। দাবির পক্ষে পিএফএর যুক্তি ছিল, ইসরাইল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (আইএফএ) ফিফার বৈষম্যবিরোধী নীতি লঙ্ঘন করেছে।ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, আইএফএর বিরুদ্ধে ওঠা বৈষম্যের অভিযোগের তদন্ত করবে ফিফার ডিসিপ্লিনারি কমিটি। ফিফার এই সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করে পিএফএ বলেছে, এটি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের পথে ইতিবাচক পদক্ষেপ।
গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজায় সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ করছে ইসরাইল। এই যুদ্ধ শুরুর সাত মাস পর ইসরায়েল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ও দেশটির জাতীয় দলকে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলে ফিলিস্তিন। যেসব অভিযোগ তুলে ধরা হয়, তার মধ্যে আছে আরব খেলোয়াড়দের বিষয়ে বৈষম্য এবং ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের ক্লাবকে ইসরায়েলের লিগে অন্তর্ভুক্তকরণ।অভিযোগ পাওয়ার পর ফিফা প্রাথমিকভাবে একটি স্বাধীন আইনি প্যানেলকে সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা ও পরবর্তী প্রক্রিয়া নির্ধারণের দায়িত্ব দেয়। এ জন্য ২০ জুলাই ধার্য করে দিলেও পরে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনের জন্য সময়সীমা বাড়িয়ে দেওয়া হয়।বৃহস্পতিবার জুরিখে ফিফা কাউন্সিলে বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ, সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হয়। এরপর সিদ্ধান্ত হয়, আইএফএর বিরুদ্ধে তোলা পিএফএর বৈষম্যবিরোধী নীতিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত করবে ফিফার ডিসিপ্লিনারি কমিটি। আর ফিফার গভর্ন্যান্স, অডিট ও কমপ্লায়েন্স কমিটি ‘ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েলি প্রতিযোগিতায় ইসরাইলি ফুটবল দলগুলো অংশ নিতে পারবে কি না, সে বিষয়ে তদন্ত করবে।’
ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ফিফা কাউন্সিল এই স্পর্শকাতর ব্যাপারটি নিয়ে স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ মেনে কাজ করছে। সেখানে চলমান সহিংসতা দাবি করে, সবকিছুর ওপরে আমাদের শান্তি প্রয়োজন। যা যা ঘটছে, সেসব নিয়ে আমরা খুব মর্মাহত। ভুক্তভোগীদের প্রতি সমবেদনা জানাই।তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে আমরা সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাই।’ব্যাংককে পিএফএ প্রধান জিব্রিল রাজৌব দাবি করেছিলেন, ইসরায়েলি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (আইএফএ) ফিফার নিয়ম লঙ্ঘন করেছে, ‘এ নিয়ম ভাঙার বিষয়ে ফিফা উদাসীন থাকতে পারে না।’ ফিফা থেকে ইসরাইলকে ‘তাৎক্ষণিকভাবে’ নিষিদ্ধ করার দাবিও করেছিলেন তিনি। আইএফএ প্রধান শিনো মোশে জুয়ারেজ এই দাবি নাকচ করে বলেছিলেন, ‘ব্যাপারটি নিষ্ঠুর, রাজনৈতিক ও শত্রুতামূলক।’ তিনি দাবি করেন, আইএফএ ফিফার কোনো নিয়ম ভাঙেনি।
গতকাল ফিফার রায় ঘোষণা স্থগিত করার প্রতিক্রিয়ায় পিএফএ সভাপতি জিব্রিল রাজৌব বলেছেন, ‘আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো, ফিফা কাউন্সিল সর্বসম্মতিক্রমে তদন্তের অনুমোদন দিয়েছে। আমরা নিজেদের অবস্থানে অনড় থেকে ব্যাপারটিতে নজর রাখব।’ পিএফএর বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ফিফা কাউন্সিল কর্তৃক অভিযোগটি একটি দক্ষ বিচারিক সংস্থায় পাঠানোর সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। এটিকে আমরা ফিফার গঠনতন্ত্রের অভিলক্ষ্য, মানবাধিকার ও সদস্য অ্যাসোসিয়েশনের অধিকারকে ভূলুণ্ঠিত করার বিষয়ে যথাযথ ও প্রক্রিয়াগত ব্যবস্থা গ্রহণের পথে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছি। আমরা আমাদের দাবির নায্যতা বিষয়ে সুনিশ্চিত ও বিচারিক প্রক্রিয়ায় আস্থাশীল।’
গতকাল জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দল জানিয়েছে, দখলীকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের আটটি ক্লাবের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আরও একটি ক্লাব আছে, যারা নিজেদের কয়েকটি ‘হোম ম্যাচ’ খেলেছে সেখানে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘ফিলিস্তিনের অঞ্চলে এটি ইসরাইলের অবৈধ উপস্থিতি, যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।’ এমন বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে ফিফাকে ‘জিরো টলারেন্স’নীতি গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা।গাজায় সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ১১ মাস ধরে যুদ্ধ করছে ইসরাইল। গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে হামলা চালিয়ে সহস্রাধিক ব্যক্তিকে হত্যা ও আড়াই শর মতো মানুষকে জিম্মি করে নিয়ে আসেন হামাস যোদ্ধারা। এর জবাবে ওই দিন থেকেই গাজায় হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। হামাসকে নির্মূল করার অভিযানের কথা বলে ইসরায়েলি বাহিনীর এক বছর ধরে সেখানে নির্বিচারে বোমা হামলা চালিয়ে আসছে। এর মধ্যে সেখানে স্থল অভিযানও চালিয়েছেন ইসরায়েলি সেনারা। তাঁদের হামলায় ৪১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।