স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ৩০ আগস্ট: শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে লর্ডস টেস্টের প্রথম দিনে বৃহস্পতিবার এই সেঞ্চুরি উপহার দেন রুট। টপ ও মিডল অর্ডারে অন্যদের ব্যর্থতার দিনে ১৪৩ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন তিনি। ৩৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যানের এটি ৩৩তম টেস্ট সেঞ্চুরি। ইংল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির রেকর্ডে স্পর্শ করেন তিনি স্যার অ্যালেস্টার কুককে।দিনের খেলা শেষে রুট বললেন, তার এই সেঞ্চুরি থর্পের জন্য।“সিনিয়র ক্রিকেটার হোক, কোচ বা মেন্টর, ক্যারিয়ারজুড়ে অনেক মানুষের সঙ্গে কাজ করতে পেরে ও সংস্পর্শ পেয়ে আমি সৌভাগ্যবান। থর্পি (থর্প) তেমনই একজন, যার কাছ থেকে অনেক কিছু পেয়েছি।”
“এই মুহূর্তটিতে (সেঞ্চুরি ছোঁয়া) তাই তাকে স্মরণ করতে পারাটা দারুণ ছিল। সে এমন একজন, যার অভাব আমি যন্ত্রণাদায়কভাবে অনুভব করব। আমার খেলায় ও আমার ক্যারিয়ারে তার অবদান অনেক। আজকে আমি যেখানে এসেছি, তার সহায়তা ছাড়া এটা সম্ভব হতো না।”অনেক দিন ধরেই মানসিক অবসাদের সঙ্গে লড়াই করা থর্প গত ৪ অগাস্ট ট্রেনে কাটা পড়েন। পরে তার পরিবার জানায়, আত্মহত্যা করেছেন ৫৫ বছর বয়সী সাবেক এই ব্যাটসম্যান।
১৯৯৩ সালে অভিষেক টেস্টেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ বাঁচানো সেঞ্চুরি করে ও ম্যান অব দা ম্যাচ হয়ে শুরু হয় থর্পের ক্যারিয়ার। এক যুগের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ইংল্যান্ডের হয়ে ১০০ টেস্ট ও ৮২ ওয়ানডে খেলেছেন তিনি। তার সময়ে ছিলেন দলের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন। অ্যাশেজে তিনটিসহ মোট ১৬ সেঞ্চুরিতে টেস্টে ৬ হাজার ৭৪৪ রান করেছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ায় তার ব্যাটিং গড় ৪৮.১৮। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় সেঞ্চুরি করে সিরিজ জয়ে ভূমিকা রাখা, ক্রাইস্টচার্চে মাত্র ২৩১ বলে ডাবল সেঞ্চুরি করে দলকে জেতানোসহ ইংল্যান্ডের স্মরণীয় কিছু সাফল্যের নায়ক তিনি। ওয়ানডেতে রান করেছেন প্রায় আড়াই হাজার। খেলেছেন ১৯৯৬ ও ১৯৯৯ বিশ্বকাপে।একসময় আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের তিন নম্বর ব্যাটসম্যান ছিলেন তিনি। ওয়ানডেতে ছিলেন সেরা দশে।
খেলা ছাড়ার পর কোচিংয়ে সম্পৃক্ত হন থর্প। শুরুতে অস্ট্রেলিয়ায় নিউ সাউথ ওয়েলসের ব্যাটিং কোচ ছিলেন তিনি। সেই সময় তরুণ স্টিভেন স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নারের সঙ্গে তিনি কাজ করেছেন। পরে ব্যাটিং কোচ হয়ে ফেরেন নিজের কাউন্টি দল সারেতে। সেই পথ ধরে ইংল্যান্ড লায়ন্স বা ‘এ’ দলে কাজ করার পর জাতীয় দলের ব্যাটিং কোচ, সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করেছেন লম্বা সময়। ২০১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলেও তিনি ছিলেন সহকারী কোচ।কোচ হিসেবে সাফল্য ছাড়াও ইংল্যান্ডের ক্রিকেট মহলে তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। তরুণ রুটকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য পোক্ত করে তোলায় তার ভূমিকার কথা জানা অনেকেরই।২০২২ সালে তিনি আফগানিস্তান জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব নেন। তবে অসুস্থতার কারণে কাজ শুরু করতে পারেননি। ক্রিকেটেও তার ফেরা হয়নি আর।
পেছন ফিরে তাকিয়ে শুরুর সময়টায় ফিরে গেলেন রুট। স্মরণ করলেন, তাকে কীভাবে তুলে এনেছিলেন থর্প এবং তার ব্যাটিংয়ের উন্নতিতে কতটা কাজ করেছেন সাবেক ওই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।“প্রথমবার তার সংস্পর্শ পাই স্টামফোর্ড ব্রিজে ইয়র্কশায়ারের দ্বিতীয় একাদশের হয়ে এক ম্যাচে সারের বিপক্ষে। পরের বছর কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপের দলে জায়গা করে নেই।তিনি তখন ছিলেন ইংল্যান্ড লায়ন্সের (এ দল) কোচিং স্টাফে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কোনো সেঞ্চুরি করার আগেই লায়ন্সের হয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি ম্যাচে আমাকে নিয়েছিলেন তিনি।”
“আমার মধ্যে কিছু একটা দেখেছিলেন তিনি। এরপর সেবারের শীত মৌসুমে তিনি আমাকে বাধ্য করেছিলেন তার সঙ্গে ব্যাটিং নিয়ে কাজ করতে। স্পিন খেলায় আমার ব্যাটিং নিয়ে ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করেছেন তিনি, বলের কাছে যাওয়া, দূরে সরে যাওয়া, বিভিন্ন ধরনের সুইপ কাজে লাগানো, পেস বোলিং খেলা নিয়েও কাজ করেছেন। খেলার যেসব দিক কাউন্টি ক্রিকেটের চেয়ে ভিন্ন, সেসব নিয়ে কাজ করেছেন তিনি।”থর্পের বিদায়ের পর এই সেঞ্চুরিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে পেরে খানিকটা মানসিক তৃপ্তি খুঁজে পেয়েছেন রুট।
“চাপে পড়লেই আমি তার কাছে যেতাম। তার সংস্পর্শে এসে নিজের খেলা আরও ভালোভাবে বুঝতে শিখেছি আমি এবং আরও বিকশিত হয়েছি। খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেছি আমরা, তার সঙ্গে অনেক সময় কাটাতে উপভোগ করতাম।”“তাকে ছোট্ট একটু শ্রদ্ধার্ঘ জানাতে পেরে ভালো লেগেছে। যদিও এটা আসলে কিছুই না, তবে আমার কাছে তিনি অনেক বড় কিছু, আমার অনেকটা জুড়ে আছেন এবং এটা ছিল তার প্রতি সামান্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ।”