স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ১৮ জুলাই: ম্যাচের তখন ৮৫তম মিনিটের খেলা চলছে। স্টেডিয়ামের ঘোষক গলা ফাটিয়ে জানিয়ে দিলেন, “মাঠে নামছেন ৬ নম্বর জার্সিধারী ক্যাভান সুলিভান।” এরপরই টিভি ধারাভাষ্যকারের রোমাঞ্চকর উচ্চারণ, “ইতিহাসের নির্মাতা এখন পা রাখলেন এই আঙিনায়।” ১৪ বছর বয়সেই যিনি এরকম পেশাদার লিগের সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলেন, তাকে ঘিরে এমন উত্তেজনা তো থাকবেই!এই ইতিহাসই গড়েছেন সুলিভান। যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারে (এমএলএস) ফিলাডেলফিয়া ইউনিয়নের হয়ে বুধবার নিউ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নেমেই ইতিহাসে নাম লেখা হয়ে গেছে তার। এমএলএস তো বটেই, যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ ক্রীড়ার ইতিহাসেই সর্বকনিষ্ঠ ক্রীড়াবিদ তিনি।১৪ বছর ২৯৪ দিন বয়সে মাঠে নেমে এই কীর্তি গড়েন সুলিভান। এমএলএসে গত ২০ বছর ধরে রেকর্ডটি ধরে রেখেছিলেন ফ্রেডি এডু। ২০০৪ সালের ৩ এপ্রিল ডি.সি ইউনাইটেডের হয়ে মাঠে নামার সময় তার বয়স ছিল ১৪ বছর ৩০৬ দিন।
আমেরিকার অন্যান্য খেলার মেজর লিগ –এনবিএ, এনএইচএল, এনএফএল, ডব্লিউএনবিএ ও মেজর লিগ বাস্কেটবল, সব মিলিয়েই ১৯৭০ সাল থেকে সবচেয়ে কম বয়সে মাঠে নামার রেকর্ডটি এখন সুলিভানের। আমেরিকার বিখ্যাত ক্রীড়া পরিসংখ্যান ভিত্তিক সংস্থা ইলাইয়াস স্পোর্টস ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, অন্যান্য খেলায় সর্বকনিষ্ঠ ক্রীড়াবিদ লস অ্যাঞ্জেলস লেকার্সের অ্যান্ড্রু বাইনাম, ২০০৫ সালে তিনি কোর্টে নেমেছিলেন ১৮ বছর ৬ দিন বয়সে। ১৯৭০ সালের আগের সব রেকর্ড সংরক্ষিত নেই।১৯৮৮ সাল থেকে ফুটবলবিশ্বের প্রধান পাঁচটি লিগের রেকর্ড অনুযায়ী সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার এখন সুলিভান। আর্সেনালের ইথান নোয়ানেরি ২০২২ সালে মাঠে নেমেছিলেন ১৫ বছর ১৮১ দিনে সুলিভানের কীর্তির ম্যাচে নিউ ইংল্যান্ডকে ৫-১ গোলে বিধ্বস্ত করে ফিলাডেলফিয়া।
সুলিভানের রেকর্ড গড়ার সম্ভাবনা জেগেছিল তাকে মূল দলে যুক্ত করার পরই। ফিলাডেলফিয়া এই ম্যাচে দুজন গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারকে পায়নি যুক্তরাষ্ট্রের অলিম্পিক দলে চলে যাওয়ার কারণে। ম্যাচের আগের দিন ২০ জনের দলে যুক্ত করা হয় কিশোর মিডফিল্ডার সুলিভানকে।কোচ জিম কার্টিন তখন বলেছিলেন, “স্রেফ সংখ্যা পূরণের জন্য তাকে দলে নেওয়া হয়নি। দ্বিতীয় একাদশের হয়ে তার পারফরম্যান্স ও গোলগুলি দেখলেই বুঝবেন। অবশ্যই কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারকে আমরা পাচ্ছি না। তবে ক্যাভানের পরিসংখ্যান দেখলেই বুঝবেন, সুযোগটি সে অর্জন করে নিয়েছে।”
ক্যাভান সুলিভানের বড় ভাই ২০ বছর বয়সী কুইন সুলিভানও খেলেন ফিলাডেলফিয়ায়। এই ম্যাচে বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত এক শটে দলের পঞ্চম গোলটি করেন কুইনই। বাইরে থেকে মাঠে গিয়ে বড় ভাইয়ের গোল উদযাপন করেন ক্যাভান। একটু পরই তাকে নামানো হয় মাঠে। তার নাম খোদাই হয়ে যায় ইতিহাসে।মাঠে নামার পর ক্যাভান প্রথম পাস দেন বড় ভাইকেই। কয়েক মিনিটের উপস্থিতিতে নিজের প্রতিভার ঝলক খানিকটা দেখাতে পারেন তিনি। যোগ করা সময়ে বক্সের বাইরে থেকে তার বাঁ পায়ের শট ঠেকিয়ে দেন প্রতিপক্ষ গোলকিপার।সুলিভানদের বাবা, মা, চাচা, সবাই ছিলেন ফুটবলার। দাদা ছিলেন ফুটবল কোচ। কুইন ও ক্যাভানের বড় দুই ভাইও ফুটবলার।
ক্যাভান ফিলাডেলফিয়ার একাডেমিতে যোগ দেন ১০ বছর বয়সে। গত মার্চে দলের দ্বিতীয় একাদশের হয়ে তার অভিষেক হয় এমএলএস ডেভেলপমেন্ট লিগে। দ্বিতীয় একাদশের হয়ে পাঁচটি ম্যাচ খেলার পর মূল দলে সুযোগ পেয়ে গেলেন তিনি।তার প্রতিভার খবর আমেরিকার ফুটবল ছাড়িয়ে বিশ্বময় ছড়িয়েছে আগেই। ইউরোপের বেশ কিছু ক্লাবের নজর ছিল তার প্রতি। শেষ পর্যন্ত তার চুক্তি হয়েছে ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গে। বয়স ১৮ হলেই ইংলিশ ক্লাবটিতে যোগ দেবেন তিনি।চুক্তি অনুযায়ী অবশ্য ১৬ বছর বয়সেই তিনি ইউরোপের অন্য কোনো ক্লাবে যেতে পারেন, তবে ইংল্যান্ডের কোনো ক্লাবে নয়। তবে বয়স ১৮ হলেই তিনি হয়ে যাবেন সিটির ফুটবলার।
ক্যাভান সুলিভানের আগে রেকর্ডটি ছিল যার, সেই ফ্রেডি এডুর আর্ভিবাবও ছিল দারুণ সাড়া জাগানো। বল পায়ে তার কারিকুরি ও প্রতিভার বিচ্ছুরণে তাকে বলা হচ্ছিল ‘ভবিষ্যৎ পেলে।’ ১৬ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় দলের হয়ে খেলেন তিনি, এখনও যা রেকর্ড। তবে তার সম্ভাবনার পূর্ণতা পায়নি সেভাবে। দেশ থেকে দেশে, ক্লাব থেকে ক্লাবে ঘুরেছেন। ৯ দেশের ১৫টি ক্লাবে খেলেছেন। সবশেষ ২০২১ সালে তাকে দেখা গেছে সুইডেনের একটি ক্লাবে। তার ক্যারিয়ারকে তাই একরকম ব্যর্থই বলা যায়।সুলিভানের রেকর্ডের জন্য অবশ্য তাকে সামাজিক মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এডু।“রেকর্ড ভেঙে দুর্দান্ত অভিষেকের জন্য ক্যাভান সুলিভানকে অনেক অভিনন্দন। এই রেকর্ড ভাঙা কঠিন ছিল এবং এই ছেলেটি তা পেরেছে। দারুণ করেছো, তোমার জন্য শুভ কামনা।”