স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ১৮ জুলাই: এই দুই প্রান্তের মাঝে, ওই দুজনের সম্মিলিত ৩৫৫ টেস্ট আর ১ হাজার ৩০৮ টেস্ট উইকেটের সীমানা পেরিয়ে ইংলিশ পেস আক্রমণের নতুন যুগের সূচনা হবে বৃহস্পতিবার। ১২ বছরের মধ্যে প্রথমবার দেশের মাঠে ইংল্যান্ডের পেস আক্রমণে থাকবেন না অ্যান্ডারসন-ব্রডের কেউই। এখন থেকে এটিই হবে নিয়মিত চিত্র। নতুন সেই পথচলায় ইংলিশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হবে ‘গতি।’হ্যাঁ, মিডিয়াম পেসার ক্রিস ওকস এখনও আছেন। ট্রেন্ট ব্রিজ টেস্ট দিয়ে ম্যাচ খেলা হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ হবে তার। কিন্তু পেস আক্রমণের বাকি দুইজনকে দলে নেওয়ার ক্ষেত্রে মূল বিবেচনায় ছিল গতিই। অ্যান্ডারসনের জায়গায় নতুন বল হাতে নেবেন গাস অ্যাটকিনসন। পরে আক্রমণে আসবেন একাদশে ফেরা আরেক গতিময় বোলার মার্ক উড।
উডের গতির ঝড় আগেই দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। অ্যাটকিনসন গত টেস্টে লর্ডসের খানিকটা মন্থর উইকেটেও ঘণ্টায় ৯০ মাইলের বেশি গতিতে বল করেছেন নিয়মিতই।২০২১ সালে নিউ জিল্যান্ডে একটি টেস্টে উড ও অলি স্টোনকে একসঙ্গে খেলিয়েছিল ইংল্যান্ড। এরপর এই প্রথমবার তারা একাদশে রাখছে সত্যিকারের অর্থেই গতিময় দুজন ফাস্ট বোলারকে।অ্যান্ডারসন-ব্রড যুগের পর ইংল্যান্ড যে গতি দিয়েই প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে চায়, তা পরিষ্কার করে দিলেন বেন স্টোকসও। বিশেষ করে, ২০২৫-২৬ অ্যাশেজে তাকিয়ে। ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে ইংলিশ অধিনায়ক স্পষ্ট বার্তাই দিয়ে রাখলেন।
“বিশ্বের যে কোনো ব্যাটারকে জিজ্ঞেস করুন, সেটা জো রুট হোক, স্টিভেন স্মিথ কিংবা মার্নাস লাবুশেন, গতি মানেই বিশাল এক অস্ত্র, যেটির কারণে অনেক কিছুই ভিন্নভাবে করতে বাধ্য হতে হয়। গতির কারণে ভিন্নভাবে ভাবতে হয় ব্যাটসম্যানদের।”তবে গতিই যে সবকিছু নয়, তা জানেন ও মানেন স্টোকস। উড তো নিজের স্কিল নানা সময়েই দেখিয়েছেন। গত অ্যাশেজে তিনি একাদশে ফেরার পরই ইংল্যান্ড দলের চিত্র বদলে গিয়েছিল। অ্যাটকিনসন অভিষেকেই ১২ উইকেট নিয়ে ইতিহাস গড়ে নিজের উজ্জ্বল অভিষ্যতের ছবি মেলে ধরেছেন। স্টোকসও সেটিই তুলে ধরলেন।
“গতির সঙ্গে অবশ্যই স্কিলের সংযোগও থাকতে হয়। গাস (অ্যাটকিনসন) গত সপ্তাহে দেখিয়েছে যে, সে স্রেফ একমুখী গতিময় বোলার নয়, অসাধারণ স্কিলও তার আছে। মার্ক উডের ক্ষেত্রেও সেটা সত্যি। জোরে বল করার সামর্থ্য তো আছেই, কিন্তু যে নিয়ন্ত্রণ ও সুইং তার আছে, এতটা গতিময় বোলারের ক্ষেত্রে এটা বেশ বিরল বলা যায়।”“এটা বাড়তি সুবিধা যে, এমন বোলারদের আমরা নির্বাচন করতে পারি, যারা ৯০ মাইল বা এর চেয়েও বেশি গতিত বল করতে পারে এবং দারুণ স্কিলও তাদের আছে।”শুধু একাদশ নির্বাচনেই নয়, ইংল্যান্ডের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় ‘গতি’ যে দারুণ প্রাধান্য পাচ্ছে, তা ফুটে ওঠে তাদের কেন্দ্রীয় চুক্তিতেও। উডকে যেমন তিন বছরের চুক্তিতে রাখা হয়েছে, তেমনি ডেভেলপমেন্ট চুক্তির তিনজনের মধ্যে দুজন হলেন গতিময় দুই পেসার ম্যাথু ফিশার ও সাকিব মাহমুদ। দুজনই এর মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন।
ডেভেলপমেন্ট চুক্তির বাকি একজনের নামটি আরও কৌতূহল জাগানিয়া-জন টার্নার। গত এক বছরে কোনো চারদিনের ম্যাচে তিনি খেলেননি। তার পরও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এই সিরিজের শুরুত প্রস্তুতি ম্যাচে তাকে খেলানো হয় চমক উপহার দিয়ে। সেই ম্যাচে প্রথম ইনিংসে চার উইকেট শিকার করেন ২৩ বছর বয়সী এই পেসার। মাত্র তিনটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা পেসারের দিকে এত নজর দেওয়ার মূল কারণ তার গতি।গতির কথা বললে অবশ্য সবার আগে আসে জফ্রা আর্চারের নাম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবির্ভাবের পর গতি ও বাউন্স দিয়ে যিনি হয়ে উঠেছিলেন ব্যাটসম্যানদের দুঃস্বপ্ন। সেই তিনিই কনুই আর পিঠের চোট মিলিয়ে মাঠের বাইরে কাটিয়েছেন বিভীষিকাময় দেড় বছর। সম্প্রতি দলে ফিরেছেন তিনি, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজের সেরা বিধ্বংসী চেহারায় না থাকলেও শিকার করেছেন ১০ উইকেট। তবে টেস্ট ক্যারিয়ার তার এখনও থমকে আছে।
সহসা তাকে টেস্টে ফেরানোর সম্ভাবনাও নেই। স্টোকস জানালেন, আর্চারের ক্যারিয়ারের স্বার্থেই তাকে নিয়ে সাবধানে পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।“আমাদের জন্য ব্যাপারটি হলো । ধরুন, পরবর্তী গ্রীষ্ম পর্যন্তও আমরা যদি তাকে না পাই (টেস্টে)… ধরুন এক বছর তাকে পেলাম না, এতে যদি তার ক্যারিয়ার আরও দুই-তিন বছর বেশি দীর্ঘ হয়, আমরা সেরকম কিছু করারই চেষ্টা করছি।”“জফকে (আর্চার) তাড়াহুড়ো করে ফেরাতে চাই না আমরা। আমি নিজেও জফ্রা আর্চারের বিরাট ভক্ত… সে ইংল্যান্ডের জার্সিতে ফিরেছে, এটাই দারুণ ব্যাপার।”