স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,৭ এপ্রিল: ছেলেটি কে?কাল রাতে ইডেন গার্ডেনসে যখন একের পর এক উইকেট তুলে নিচ্ছিলেন, দর্শক মহলে কৌতুহল বেড়ে চলছিল সুয়াশ শর্মাকে নিয়ে। কাঁধসমান চুল, শান্ত–সৌম্য চেহারা। স্পিনার হয়েও বেশ জোরে বল করছিলেন। উইকেটও মিলেছে। এই সুয়াশকে তো আগে দেখা গেছে বলে কারও মনে পড়ে না! ছেলেটি এত দিন কোথায় ছিল?কোথাও খেলেননি সুয়াশ। ১৯ বছর বয়সী এই স্পিনার কখনো প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেননি, লিস্ট ‘এ’ খেলেননি, এমনকি স্বীকৃত টি–টোয়েন্টিও নয়। গতকালই কলকাতার হয়ে বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে আইপিএল অভিষেক, স্বীকৃত প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে এটাই তাঁর প্রথম ম্যাচ।
প্রথম ম্যাচেই চমকে দিয়েছেন সবাইকে। ৩০ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। ভারতীয় স্পিনারদের মধ্যে এটি আইপিএল অভিষেকে দ্বিতীয় সেরা বোলিং (সেরা ২০১৮ সালে মুম্বাইয়ের মায়াঙ্ক মারকান্দের ৩/২৩)। ইডেন গার্ডেনসের ভরা গ্যালারির সামনে সুয়াশ তুলে নিয়েছেন দিনেশ কার্তিক, অনুজ রাওয়াত ও করন শর্মার উইকেট। বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে কলকাতা জিতেছে ৮১ রানের বড় ব্যবধানে।ম্যাচে সুয়াশকে নামানো হয়েছিল ‘ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার’ হিসেবে, ভেঙ্কটেশ আইয়ারের বদলে। ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হয়ে দৃষ্টি কেড়ে নেওয়া সুয়াশ দিল্লির ছেলে। স্থানীয় ক্লাব পর্যায়ের ক্রিকেটে খেলেছেন এত দিন। সেরা অভিজ্ঞতা দিল্লি অনূর্ধ্ব–২৫ দলে খেলার। মূলত ট্রায়ালেই কলকাতা ম্যানেজমেন্টের নজরে পড়েছিলেন সুয়াশ।
গত বছর আইপিএল নিলামের আগে মুম্বাইয়ে ট্রায়ালের আয়োজন করেছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। গতকালের ম্যাচ শেষ কেকেআর কোচ চন্দ্রাকান্ত পন্ডিতই জানালেন কীভাবে তুলে আনা হয়েছে এই তরুণ প্রতিভাকে, ‘সুয়াশ আমাদের ট্রায়ালে এসেছিল। সেখানেই দেখি যে ও দুই দিকেই বল ঘোরাতে পারে। সেটা দেখেও ওকে নেওয়া। অভিজ্ঞতা কম, কিন্তু প্রতিভা আছে।’নিলামে সুয়াশের নাম ডাকার পর কলকাতা ছাড়া আর কেউ সাড়া দেয়নি। ট্রায়ালে চিনে রাখা ‘রত্ন’টিকে ২০ লাখ রুপির ভিত্তিমূল্যেই পেয়ে যায় কলকাতা। অধিনায়ক নীতিশ রানা অবশ্য সুয়াশকে চিনেছেন আরও পরে, ক্যাম্প শুরুর পর। বেঙ্গালুরু ম্যাচ–পরবর্তী পুরস্কার বিতরণীতে নীতিশের সরল বয়ান, ‘আমি নিজেও জানি না ও কোথা থেকে এসেছে। দিল্লির ছেলে জানি। কিন্তু কখনো দেখিনি। আমার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ কেকেআর ক্যাম্পে।’
সুয়াশকে ধারাভাষ্যকাররা পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন রহস্য স্পিনার হিসেবে। তবে কেকেআর অধিনায়ক সেটি সংশোধন করে দিয়েছেন, ‘আমরা আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম তৃতীয় স্পিনার দরকার হলে সুয়াশকে খেলাব। ও কিন্তু রহস্য স্পিনার নয়, তবে একটা এক্স–ফ্যাক্টর আছে। ওর আর্ম স্পিড খুব জোরাল, যেটা ব্যাটসম্যানকে সমস্যায় ফেলতে পারে। ওর অ্যাকশন বোঝাও সহজ নয়। বাতাসেও জোরে বল ফেলতে পারে। যত খেলবে তত অভিজ্ঞতায় আরও সমৃদ্ধ হবে।’সুয়াশের সঙ্গে সমৃদ্ধ হচ্ছে কলকাতাও। বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে সুয়াশের ৩, বরুন চক্রবর্তীর ৪ আর সুনীল নারাইনের ২ উইকেট মিলিয়ে একটা রেকর্ড গড়ে ফেলেছে কেকেআর। আইপিএল ইতিহাসে এক ইনিংসে স্পিনারদের ৯ উইকেট এবারই প্রথম। এর আগে তিনবার ইনিংসে সর্বোচ্চ ৮ উইকেট নিয়েছিলেন চেন্নাইয়ের স্পিনাররা।নারাইন, বরুনের সঙ্গে মিলে যে রেকর্ডটা এখন এককভাবে কলকাতার করে দিলেন সুয়াশ। অথচ ক্যাম্প শুরুর আগে যাকে চিনতেন না অধিনায়কও।