Friday, March 29, 2024
বাড়িখেলামেসি মানে কি?

মেসি মানে কি?

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা,২২ নভেম্বর: দোহার কাতার ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে (কিউএনসিসি) সোমবার আর্জেন্টিনার সংবাদ সম্মেলন শুরুর কথা ছিল স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায়। কিন্তু ঘড়ির কাটা ঘুরে, নির্ধারিত সময় পেরিয়ে শুরু হয় যোগ করা সময়ের অপেক্ষা। প্রতীক্ষার প্রহর যেন পেরুতে চায় না কোনোভাবে। এক মিনিট যেন মনে হয় এক-একটি বছর। মিনিট দশেক অপেক্ষায় রেখে এলেন মেসি। মহাতারকাকে দেখার আনন্দস্রোত যেন বয়ে গেল সম্মেলন কক্ষের চার ধার দিয়ে।কদিন ধরে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন নম্বর মাঠে অনুশীলনের সময়ও গণমাধ্যমকর্মীদেরকে এভাবে অপেক্ষায় রেখেছেন তিনি। কখনও একাকী প্রস্তুতি সেরেছেন, দেখা দেননি সেভাবে। সংবাদ সম্মেলনে আসার আগে দুপুরের দিকে প্রস্তুতির সময় প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে শুরু থেকে অনুশীলন সেরেছেন তিনি। এরপর সংবাদ সম্মেলনে দেখা দিলেন।

মেসি সম্মেলন কক্ষে আসার আগের সময়টুকুতে চারপাশে সব ভিনদেশি সাংবাদিক, ফটোগ্রাফার। ইংরেজি ছাড়া কারো কথা বোঝা দায়। কেউ স্প্যানিশে, কেউ পর্তুগিজে, কেউ আরবিতে গুনগুনিয়ে গল্প চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ নোট ঠুকছেন আপন মনে, কেউ সাজাচ্ছেন প্রশ্ন। এর মধ্যেও একটা শব্দ বুঝতে কোনো সমস্যা হয় না, সেটা মেসি। সব ভাষাতেই তিনি মেসি।মেসি সম্মেলনে কক্ষে ঢুকতেই ক্যামেরার ট্রিগারগুলোতে যেন চাপ পড়ল একযোগে। তার প্রতিটি চাহনি, প্রতিটি মুভ, কথা বলার সব মুহূর্ত যে ফ্রেমবন্দী করে রাখতে হবে। শান্ত পায়ে এসে তিনি চেয়ারে বসলেন। একবার-দুবার ইতি-উতি তাকালেন। প্রশ্ন পর্ব শুরুর ঘোষণা পুরোটা শেষ করতে পারলেন না অফিসিয়াল, তার আগেই জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে সবার হাত উঠল আকাশে। মেসিকে যে একটা প্রশ্ন করতে হবে। যতগুলো হাত উঠল, ততগুলো প্রশ্নের উত্তর তাকে দিতে হলে সৌদি আরবের বিপক্ষে মঙ্গলবারের ম্যাচের সময়ও পেরিয়ে যেত বোধহয়!তারপরও প্রশ্ন হলো বেশ কিছু। সৌদি আরবের বিপক্ষের ম্যাচের চেয়ে তাকে ঘিরে রটে যাওয়া চোট শঙ্কা নিয়েই বেশি। কখনও স্মিত হেসে, শান্ত কিন্তু সিরিয়াস ভঙ্গিতে, লম্বা শ্বাস নিয়ে উত্তরগুলো একের পর এক দিতে থাকলেন তিনি।

আর্জেন্টাইন সমর্থকদের মনে জেগে ওঠা শঙ্কা, গণমাধ্যমকর্মীদের কৌতুহল তিনি মিটিয়ে দিলেন ‘খুব ভালোবোধ করছি’ বলে। চোট নয়, অ্যাকিলিস টেন্ডনে একটু টান পড়ার কারণে একটু সতর্ক ছিলেন বলে জানালেন। সতর্ক থাকারই কথা। আর্জেন্টিনা যে তার চওড়া কাঁধে সওয়ার হয়ে ৩৬ বছরের খরা কাটাতে মরিয়া এবার। তিনি নিজেও পেতে চান বিশ্বকাপের অনির্বচনীয় স্বাদ। তাতে সৌদি আরবের বিপক্ষে ফুটবলের এই জাদুকরকে লুসাইল স্টেডিয়ামের আঙিনায় জাদু ছড়াতে দেখার আশাও পেল শক্ত ভিত।ইদানিং প্রায়ই বয়স নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় তাকে। কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলের বৈশ্বিক আসরে তার শেষবারের মতো পা পড়া কিনা-এ প্রশ্ন ওঠে ঘুরেফিরে। এদিনও এই একই প্রশ্নের মুখোমুখি হলেন তিনি। নিখুঁত লব শটের মতো উত্তরটা দিলেন একটু ঝুলিয়ে; বললেন ‘খুব সম্ভবত এটাই শেষ।” শেষ কি-না, সেটা সময়ই বলে দেবে। আপাতত কাতার বিশ্বকাপে তার বাঁ পায়ের জাদু দেখার অপেক্ষা।চার বিশ্বকাপ মিলিয়ে খেলা ১৯ ম্যাচে তার গোল মাত্র ছয়টি। যদিও এই পরিসংখ্যান তার নামের পাশে যায় না, কিন্তু মেসি মানে ঠিকই গোলের ফল্গুধারা, ভুরিভুরি রেকর্ড, ফুটবলের সুবজ মাঠের শত বাঁকে বয়ে চলা এক শিল্পির গল্প, চোখ ধাঁধানো ড্রিবলিং, মুগ্ধতা ছড়ানো পাস, অবাক বিস্ময়ে চোখ কপালে তুলে দেওয়া ফ্লিক কিংবা ব্যাক হিল-এমন আরও কত কী!সংবাদ সম্মেলন শেষ করে মেসি যখন বেরিয়ে যাচ্ছেন, ততক্ষণে অনেকে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছেন। কৃতজ্ঞতায়, ভালোবাসায়, শ্রদ্ধায়। করতালির রোল পড়ে গেল। মেসি মানে আসলে অন্য কিছু নয়। মেসি মানে মেসি।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য