স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা,৮ নভেম্বর: ১৯৩২ সালে অনুষ্ঠিত গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক থেকে বাদ পড়ে ফুটবল। এজন্য তৎকালীন ফিফা সভাপতি জুলে রিমে একটি আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। ১৯২৪-এ প্যারিস অলিম্পিক এবং ১৯২৮- এ অ্যামস্টারডাম অলিম্পিক ফুটবল প্রতিযোগিতার সোনাজয়ী উরুগুয়েকে স্বাগতিক করে ১৯৩০ সালে যাত্রা শুরু করে ‘দি গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ ফুটবল বিশ্বকাপ । ফিফার এই সিদ্ধান্তে অসুবিধায় পড়ে ইউরোপের দেশগুলি। তৎকালীন মহামন্দা এবং সুদূর আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে খেলতে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়ে প্রথম বিশ্বকাপে অনুপস্থিত থাকে তিনবারের অলিম্পিক সোনাজয়ী ইংল্যান্ড এবং ইতালি, স্পেন, নেদারল্যান্ডস ও জার্মানিসহ ইউরোপীয় পরাশক্তি দলগুলি। পরবর্তীতে যখন উরুগুয়ে ভ্রমণ খরচ দিয়ে সাহায্য করতে রাজি হয়, তখন জুলে রিমে বেলজিয়াম, ফ্রান্স, রোমানিয়া এবং (তৎকালীন) যুগোস্লাভিয়াকে ভ্রমণের খরচ বহনের শর্তে খেলতে আসতে রাজি করান। রোমানিয়াতে কিং ক্যারল নিজেই দলের সদস্যদের বাছাই এবং তাদের চাকরি নিশ্চিত করে তিন মাসের ছুটি দিয়ে খেলতে পাঠান। ইউরোপের চারটি (বেলজিয়াম, ফ্রান্স, রোমানিয়া ও যুগোস্লাভিয়া), উত্তর আমেরিকার দুটি (যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো) এবং লাতিন আমেরিকার এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সাতটিসহ (উরুগুয়ে, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, পেরু, বলিভিয়া, প্যারাগুয়ে, চিলি) মোট ১৩টি দেশ নিয়ে শুরু হয় বিশ্বকাপের প্রথম আসর। গ্রুপ করা হয় চারটি। গ্রুপ ‘১’ এ আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্সের সঙ্গী ছিল চিলি ও মেক্সিকো। পরবর্তীতে এই চারটি দেশেই হয় বিশ্বকাপ। গ্রুপ ‘২’ ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ ছিল যুগোস্লাভিয়া এবং বলিভিয়া। গ্রুপ ‘৩’ এ স্বাগতিক উরুগুরের সঙ্গী ছিল পেরু ও রোমানিয়া। গ্রুপ ‘৪’ এ ছিল তিন মহাদেশের তিন দেশ- যুক্তরাষ্ট্র, বেলজিয়াম ও প্যারাগুয়ে।
১৩ই জুলাই উদ্বোধনী দিনে মুখোমুখি হয় ফ্রান্স ও মেক্সিকো। বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম গোলটি করেন ফ্রান্সের লুসিয়েঁ লরাঁ। একই দিনে গ্রুপ ‘৪’ এ মুখোমুখি হয় যুক্তরাষ্ট্র-বেলজিয়াম।গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচে তিন জয় নিয়ে সেমি-ফাইনালে যায় আর্জেন্টিনা। ১৯শে জুলাই অনুষ্ঠিত ম্যাচে মেক্সিকোর বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করেন আর্জেন্টিনার গিয়েরমো স্তাবিলে।গ্রুপ ‘২’ থেকে ফেভারিট ব্রাজিলকে টপকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমি-ফাইনালে উঠে যুগোস্লাভিয়া। তবে গ্রুপ পর্বে ছিটকে পড়া বলিভিয়া সবাইকে চমকে দেয় তাদের দুটি ম্যাচের জার্সিতেই ‘ভিভা উরুগুয়ে’ লিখে।গ্রুপ ‘৩’ এর প্রথম ম্যাচে বহিষ্কার হন পেরুর প্লাসিদো গালিন্দো; রোমানিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে। পরপর দুই ম্যাচ জিতে সেমি-ফাইনালে উঠে টপ ফেভারিট স্বাগতিক উরুগুয়ে।গ্রুপ ‘৪’ থেকে প্রথম দুই ম্যাচ জিতে সেমি-ফাইনালে উঠে আসে যুক্তরাষ্ট্র। ১৭ জুলাই প্যারগুয়ের বিপক্ষে ফুটবল বিশ্বকাপের প্রথম হ্যাটট্রিক করে ইতিহাস গড়েন যুক্তরাষ্ট্রের বার্ট প্যাটেনড। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো ২০০৬ সালের আগ পর্যন্ত স্তাবিলের হ্যাট্রিককেই মনে করা হতো ফুটবল বিশ্বকাপের প্রথম হ্যাট্রিক। কিন্তু ফিফা ২০০৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে জানায় যে বার্ট প্যাটেনডই বিশ্বকাপের প্রথম হ্যাট্রিকের মালিক।
সেমি–ফাইনাল
২৬ শে জুলাই ১৯৩০ সালে প্রথম সেমি-ফাইনালে যুক্তরাষ্ট্রকে ৬-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে যায় আর্জেন্টিনা। হারিয়ে নিশ্চিত করে ফাইনাল। এ মাচে আর্জেন্টিনার হয়ে জোড়া গোল করেন স্তাবিলে আর কার্লোস পেউচেলে। ২৭ শে জুলাই ১৯৩০ সালে দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে যুগোস্লাভিয়াকে একই ব্যবধানে হারায় উরুগুয়ে! ৬-১ গোলের জয়ে হ্যাটট্রিক করেন হোসে পেদ্রো সিয়া। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রকে তৃতীয় দেখানো হলেও ১৯৩০ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুগোস্লাভিয়ার দুই অধিনায়ককেই ব্রোঞ্জ পদক দেওয়া হয়।
ফাইনাল
১৯৩০ সালের ৩০ জুলাই। প্রায় ৯৩ হাজার দর্শক নিয়ে মন্তেভিদিওর ইস্তাদিও সেন্তেনারিও স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় ফাইনাল। খেলা শুরুর আগেই শুরু হয় ঝামেলা, আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা উরুগুয়ের তৈরি বল দিয়ে খেলতে অস্বীকৃতি জানালে ফিফার সিদ্ধান্তে ম্যাচের প্রথমার্ধে খেলা হয় আর্জেন্টিনার বলে এবং দ্বিতীয়ার্ধ হয় উরুগুয়ের বলে। প্রায় লাখো দর্শককে সাক্ষী রেখে ১-২ গোলে পিছিয়ে থাকা স্বাগতিক উরুগুয়ে ৪-২ ব্যবধানে দুর্দান্ত এক জয় তুলে নেয়। আট গোল করে প্রথম আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা আর্জেন্টিনার স্তাবিলে। ১৩ দেশের এই মিলন মেলায় ১৮ ম্যাচে গোল হয় ৭০টি। এভাবেই পর্দা নামে বিশ্বকাপ আসরের। বিশ্বজয়ের পরদিন বিজয় উদযাপনের জন্য উরুগুয়েতে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়।