Tuesday, July 15, 2025
বাড়িজাতীয়বন্যায় বিধ্বস্ত উত্তর পূর্ব ভারত! মৃত ৩৬, ঘরছাড়া ৫.৫ লক্ষ, তিন রাজ্যের...

বন্যায় বিধ্বস্ত উত্তর পূর্ব ভারত! মৃত ৩৬, ঘরছাড়া ৫.৫ লক্ষ, তিন রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা মোদীর

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ৩ জুন : গত কয়েক দিন ধরেই এক টানা ভারী বৃষ্টি চলছে উত্তর পূর্বে। ভূমিধস ও বন্যায় বিপর্যস্ত অসম, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ-সহ বিভিন্ন রাজ্য। সোমবার পর্যন্ত উত্তর-পূর্ব ভারতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৬ জনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘরছাড়া সাড়ে পাঁচ লক্ষেরও বেশি মানুষ। এই মুহূর্তে সব চেয়ে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি অসমে। সেখানে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। অরুণাচল প্রদেশে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। মেঘালয়ে ছ’জন, মিজোরামে পাঁচ জন, সিকিমে তিন জন এবং ত্রিপুরায় এক জনের মৃত্যু হয়েছে। ইতিমধ্যে পরিস্থিতি নিয়ে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা, সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিংহ তামাং এবং মণিপুরের রাজ্যপাল অজয়কুমার ভল্লার সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কেন্দ্রের তরফে সর্বতোভাবে পাশে থাকার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।

অসম

অসমের ২২টি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ৫ লক্ষেরও বেশি মানুষ। সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১ জনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে ১৫টি নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। বেশ কয়েকটি জায়গায় অবিরাম ভারী বৃষ্টির কারণে পরিবহণ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়েছে। ব্যাহত হয়েছে সড়ক, রেল এবং ফেরি পরিষেবাও। সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলির মধ্যে প্রথমে রয়েছে লখিমপুর। ইতিমধ্যে ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত। রাজ্যবাসীকে পূর্ণ সহায়তার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।

সিকিম

টানা বৃষ্টি ও ভূমিধসে বিপর্যস্ত সিকিম। রবিবার সন্ধ্যায় সিকিমের মঙ্গন জেলার লাচেনের কাছে একটি সেনাশিবিরে ভূমিধসে তিন সেনা জওয়ান মারা যান। ন’জন এখনও নিখোঁজ। মৃতেরা হলেন হাবিলদার লক্ষবিন্দর সিংহ, ল্যান্সনায়েক মুনিশ ঠাকুর এবং পোর্টার অভিষেক লাখা। নিখোঁজ ছয় জওয়ানকে খুঁজতে শুরু হয়েছে উদ্ধারকাজ। সিকিমের ডিজিপি অক্ষয় সচদেব জানিয়েছেন, লাচুং এবং চুংথাং শহরে আটকে পড়া ১,৬৭৮ জন পর্যটককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। লাচেনে এখনও আটকে আছেন ১০০ জনেরও বেশি মানুষ। বেশ কিছু জায়গায় এখনও রাস্তা বন্ধ। লাচেন, লাচুং, গুরুদোংমার, ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স এবং জ়িরো পয়েন্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রগুলি ক্ষতির মুখে পড়েছে। মেঘভাঙা বৃষ্টিতে প্রবল বেগে ফুঁসছে তিস্তাও।

মণিপুর

গত চার দিন ধরে টানা ভারী বৃষ্টির জেরে মণিপুরের বেশ কয়েকটি নদীর জলস্তর বিপজ্জনক ভাবে বেড়ে গিয়েছে। হাজার হাজার মানুষ বন্যার কবলে পড়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩,৩৬৫টিরও বেশি ঘরবাড়ি। ১০৩টি এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ১৯,৮১১ জন। স্থানীয়দের আশ্রয় ও সহায়তা প্রদানের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ৩১টি ত্রাণ শিবির স্থাপন করা হয়েছে। যৌথ ভাবে ত্রাণকার্যে নেমেছে মণিপুর ফায়ার সার্ভিস, অসম রাইফেলস, এসডিআরএফ, এনডিআরএফ এবং ভারতীয় সেনা। ইম্ফল নদীবাঁধেও চারটি জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে, যার ফলে পূর্ব ইম্ফল জেলায় ব্যাপক বন্যা সৃষ্টি হয়েছে।

অরুণাচল প্রদেশ

অরুণাচল প্রদেশে বন্যা ও ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১০ জনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। সোমবার লোহিত জেলা থেকে আরও এক জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। ২৩টি জেলার ১৫৬টিরও বেশি গ্রামের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ভূমিধস এবং বন্যাপ্রবণ এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পশ্চিম কামেং, কামলে, সুবানসিরি, পাপুম পারে, দিবং উপত্যকা, লোহিত, চাংলাং, লংডিং-সহ বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। রাজ্যের বেশিরভাগ নদী ও তাদের উপনদীগুলি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ত্রিপুরা

গত কয়েক দিনে ত্রিপুরায় বন্যা পরিস্থিতির খানিক উন্নতি হয়েছে। সোমবার থেকে বৃষ্টিপাতও কমেছে। তবে পরিস্থিতির উন্নতি সত্ত্বেও এখনও ১০,০০০-এরও বেশি মানুষ বিভিন্ন সরকারি ত্রাণ শিবিরে অবস্থান করছেন। ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলিতে ৬৬টি ত্রাণ শিবির তৈরি করেছে রাজ্য প্রশাসন, যেখানে বর্তমানে ২,৯২৬টি পরিবার বা ১০,৮১৩ জনকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।

মিজোরাম

গত ২৪ মে থেকে মিজোরামে ভারী বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে মায়ানমারের তিন জন শরণার্থীও রয়েছেন। ভূমিধসের জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে ২১২টি রাস্তা। ধস এবং জল জমার কারণে বিভিন্ন এলাকায় জনজীবন বিপর্যস্ত। সোমবারও ভারী বৃষ্টির জেরে রাজ্য জুড়ে সমস্ত স্কুলকলেজ বন্ধ রাখার ঘোষণা করা হয়।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য