স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ২৩ নভেম্বর : ঋতুচক্রের নিয়মে সময়টা হেমন্তকাল। জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে আজকাল হেমন্ত ঋতু সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে না পারলেও ঝাড়খণ্ডের মাটিতে নিজের অস্তিত্ব জানান দিলেন আর এক হেমন্ত। আরব সাগরের তীরে ‘ইন্ডিয়া’র রাজনৈতিক বিপর্যয়ের মাঝে এই হেমন্ত সোরেনেই ‘সান্তনা’ খুঁজছে ইন্ডিয়া শিবির। অন্যদিকে, লোকসভার নির্বাচনের ব্যর্থতা সামলে নিয়ে মহারাষ্ট্রে নতুন স্বপ্ন বুনতে চলেছেন মোদি-শাহরা।
ঝাড়খণ্ড ও মহারাষ্ট্র, দেশের দুই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশ হচ্ছে শনিবার। এখনও পর্যন্ত ফলাফলের যা ট্রেন্ড তাতে মহারাষ্ট্রে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসতে চলেছে বিজেপি, শিবসেনা (শিন্ডে) ও এনসিপি (অজিতের) মহাজুটি। ২৮৮টি আসনের মধ্যে ২১৯টি আসনে এগিয়ে রয়েছে তারা। যেখানে ম্যাজিক ফিগার ১৪৫। অন্যদিকে, ঝাড়খণ্ডে এনডিএ শিবিরকে জোরাল ধাক্কা দিয়ে মসনদে বসার অপেক্ষায় (জেএমএম, কংগ্রেসের) ইন্ডিয়া জোট। ৮১ আসনের ঝাড়খণ্ডে ইন্ডিয়া শিবির পেয়েছে ৪৮ আসনটি আসন। এখানে ম্যাজিক ফিগার ৪১। অর্থাৎ দেশের দুই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে একটি গেল এনডিএ-এর হাতে অন্যটি ইন্ডিয়ার।
আপাত দৃষ্টিতে ফলাফল ১-১ হলেও লড়াইয়ের মাঠে অনেকখানি এগিয়ে মোদি-শাহের এনডিএ। ঝাড়খণ্ডে বিজেপি সেভাবে দাপট দেখাতে না পারলেও, লোকসভা নির্বাচনে মহারাষ্ট্রে মহাজুটির শোচনীয় ফলাফলের পর ঘুরে দাঁড়ালেন শিণ্ডে-ফড়ণবিসরা। বুথ ফেরত সমীক্ষা যেখানে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিয়েছিল, সেখানে বিরোধীদের কার্যত নাকানি চোবানি খাইয়ে অনেক বেশি আসনে জয়ের পথে মহাজুটি। এনডিএর এই ব্যতিক্রমী ফলাফল প্রসঙ্গে রাজনৈতিক মহলের দাবি, আসলে বিজেপি যেখানে ছয় মাস আগে লোকসভা নির্বাচনের ব্যর্থতা সামলাতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল, সেখানে বিরোধী শিবির ভুগছিল আত্মতুষ্টিতে। লোকসভার ধাক্কা ভুলতে লাডলি বহিন, টোল ট্যাক্সে ছাড়, ইলেকট্রিক বিলে ছাড়ের মতো খয়রাতি শুরু করে মহাজুটির সরকার। পাশাপাশি বিজেপি শুরু করে সংগঠনের কাজ। লোকসভায় যে সংঘের সঙ্গে বিবাদে ধাক্কা খেতে হয়েছিল, পুরোপুরি আসরে নেমে পড়ে সেই সংঘই। মহারাষ্ট্রে স্রেফ দলিত ভোটারদের একত্রিত করতে ৬০ হাজারের বেশি কর্মসূচি নিয়েছিল RSS। মারাঠা সংরক্ষণ ইস্যুর চাপ সামলাতে ওবিসিদের একত্রিত করার কাজটিও নীরবে করে গিয়েছে আরএসএস-বিজেপি।
অন্যদিকে অতিরিক্ত আত্মতুষ্টিতে ভোগা বিরোধী শিবির ধরেই নিয়েছিল লোকসভার ফলাফলেরই পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে। তাই তৃণমূল স্তরে নজর না দিয়ে নিজেদের মধ্যে খেয়োখেয়িতে ব্যস্ত ছিল কংগ্রেস, শিব সেনা উদ্ধব এবং এনসিপি পওয়ার। এ তারই পরিণতি বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও বিরোধী শিবিরের এমন বেহাল ছবিটা এই প্রথমবার নয়, এর আগে হরিয়ানা বিধাসভা নির্বাচনেও একই অবস্থা দেখা গিয়েছে। লোকসভা নির্বাচনে হরিয়ানাতে চরম খারাপ ফল করেছিল বিজেপি। বিধানসভাতেও আত্মতুষ্টিতে পেয়েছিল বিরোধী শিবিরকে। বুথ ফেরত সমীক্ষার রিপোর্টও ইন্ডিয়ার জয়ের ইঙ্গিত দেয়। তবে ফল প্রকাশের পর উলটে যায় সব হিসেব নিকেশ। হরিয়ানা, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে ক্ষত সামলে জেগে ওঠা বিজেপি অবশ্য থেমে থাকতে রাজি নয়। আগামী বছর বিহার ও দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচন। সেখানেও বাজিমাত করতে কোমর বাঁধছেন মোদি-শাহরা।