স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ১৭ জুন : সময় যত গড়াচ্ছে সামনে আসছে নিট পরীক্ষার ব্যাপক কারচুপির একের পর এক সন্দেহজনক দিক। এই মামলার তদন্তে নেমে বিহার পুলিশের আর্থিক অপরাধদমন শাখার হাতে এল প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ। তল্লাশি চালিয়ে তদন্তকারীদের হাতে এল ৬টি মেয়াদ উত্তীর্ণ চেক। আর সেই চেকে টাকার অঙ্ক রয়েছে ৩০ লাখ। যা দেখে তদন্তকারীদের অনুমান, পরীক্ষার আগে পরীক্ষার্থীদের হাতে প্রশ্ন তুলে দেওয়ার শর্তে এই টাকা নিয়েছিল মাফিয়ারা।
এই মামলার তদন্তকারী আধিকারিক মানবজিৎ সিং ধিলো সংবাদমাধ্যম পিটিআইকে চেক উদ্ধারের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘এই ঘটনার তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা ছয়টি পোস্ট-ডেটেড চেক উদ্ধার করেছে। পরীক্ষার আগে পরীক্ষার্থীদের হাতে প্রশ্ন তুলে দেওয়ার শর্তে এই টাকা নিয়েছিল মাফিয়ারা। আমরা উদ্ধার হওয়া চেকগুলির সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কগুলির অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য খতিয়ে দেখছি। সবমিলিয়ে বিহার পুলিশের দাবি, এখনও পর্যন্ত আমরা যতদূর দেখতে পাচ্ছি তা আসলে হিমশৈলের চূড়া মাত্র। বিহার পুলিশের আরও দাবি, এই দুর্নীতির সঙ্গে অন্তত ৩৫ জন পরীক্ষার্থী যুক্ত ছিলেন। এর মধ্যে ৪ জনকে পরীক্ষার দিনই গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া ৯ জনকে চিহ্নিত করে তলব করা হয়েছে। আরও ২২ জন পরীক্ষার্থীকে শনাক্ত করা বাকি। এখনও পর্যন্ত এই মামলার তদন্তে নেমে ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে বিহার পুলিশ।
এদিকে, সরকারের তরফে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ শুরু থেকেই অস্বীকার করা হলেও চাপের মুখে কিছুটা সুর নরম সরকারের। কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান স্পষ্ট জানিয়েছেন, নিট দুর্নীতিতে আয়োজক সংস্থা এনটিএ-র আধিকারিকেরা যদি জড়িত থাকেন, কাউকে রেয়াত করা হবে না। সে ক্ষেত্রে কড়া পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তবে মামলার তদন্তে পরীক্ষক সংস্থা এনটিএর বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছে বিহার পুলিশ। তাঁদের দাবি, এনটিএ সাহায্য করলে আরও অনেক কিছুই সামনে আসবে। যদিও সেই সাহায্য মিলছে না। বিহার পুলিশ সূত্রের খবর, অন্তত তিন বার নোটিস পাঠিয়েও এনটিএ-র কাছ থেকে অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং নথি হাতে পাননি তদন্তকারী ইওইউ-এর আধিকারিকেরা। না মিলেছে মূল প্রশ্নপত্র, না মিলেছে ওই ১১ পরীক্ষার্থী সম্পর্কে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য, যা রয়েছে নিট-কর্তৃপক্ষের কাছে।
উল্লেখ্য, নিট পরীক্ষায় দুর্নীতির প্রথম ইঙ্গিত পেয়েছিল বিহার পুলিশ। পুলিশের এফআইআরে দাবি করা হয়েছে, ৫/৫/২০২৪ রাত ২ ট নাগাদ আমাদের কাছে খবর আগে পরীক্ষা সঞ্চালন বিভাগ ও কিছু পরীক্ষার্থীদের উদ্যোগে নিট পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হয়েছে। পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরেই JH01BW-0019 নম্বরের একটি সন্দেহজনক গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেই মতো আমরা সেখানে গিয়ে গাড়িটি আটক করি। এর পর গাড়িটির ড্রাইভার পালানোর চেষ্টা করে। গাড়িটিতে মোট ৩ জন ছিলেন ৪ জন পরিক্ষার্থীর অ্যাডমিট কার্ডের জেরক্স কপি পাওয়া যায় তাঁদের থেকে। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা স্বীকার করে, পরীক্ষাকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের সঙ্গে রফা করে প্রশ্নফাঁস করছিল তাঁরা। আরও একাধিক সেন্টারে এই একই ঘটনা ঘটেছে।