Friday, February 7, 2025
বাড়িজাতীয়প্রয়াত গায়ক-সুরকার বাপ্পি লাহিড়ী, শোকের আবহে সমগ্র দেশ

প্রয়াত গায়ক-সুরকার বাপ্পি লাহিড়ী, শোকের আবহে সমগ্র দেশ


মুম্বই, ১৬ ফেব্রুয়ারি (হি.স.): সঙ্গীত জগতে অপূরণীয় শূন্যতার সৃষ্টি করে না-ফেরার জগতে চলে গেলেন গায়ক ও সুরকার বাপ্পি লাহিড়ী। মঙ্গলবার গভীর রাতে মুম্বইয়ের জুহুর ক্রিটিকেয়ার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন বাপ্পি লাহিড়ী। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। ৮০ ও ৯০-এর দশকে ভারতে ডিস্কো সঙ্গীতকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী, সেই ‘বাপ্পি দা’-র শরীরে একাধিক সমস্যার কারণে তাঁর জীবনাবসান হয়েছে। গত বছর এপ্রিল মাসে তাঁর করোনা ধরা পড়ে। সেই সময় মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বাপ্পি লাহিড়ি। কিছুদিন পর সুস্থ হয়ে বাড়িও ফেরেন। মঙ্গলবার মধ্যরাতে ‘অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (ওএসএ)’-তে আক্রান্ত হয়ে মুম্বইয়ের ক্রিটিকেয়ার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। পরিবার সূত্রের খবর, বাপ্পি লাহিড়ীর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে বৃহস্পতিবার।

ক্রিটিকেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ দীপক নামজোশি (বাপ্পি লাহিড়ীর চিকিৎসক) জানিয়েছেন, অবসট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া ও বুকে সংক্রমণে ভুগছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী। এই অসুস্থতার কারণে ২৯ দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। সুস্থ হয়ে ওঠেন ও ১৫ ফেব্রুয়ারি তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে, বাড়িতে একদিন থাকার পর পুনরায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন, সঙ্কটজনক অবস্থায় তাঁকে ক্রিটিকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। মঙ্গলবার রাত ১১.৪৫ মিনিট নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি। গত বছরের কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। বিগত ১ বছর ধরে অবসট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় ভুগছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী। অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া হল ঘুম-সম্পর্কিত শ্বাস-প্রশ্বাসের একটি ব্যাধি। এই রোগে ঘুমানোর সময়ে শ্বাস-প্রশ্বাস অনিয়মিত হয়ে যায়। অর্থাৎ শ্বাস কখনও শুরু হয়, কখনও আচমকা বন্ধ হয়ে আসে। বিভিন্ন ধরনের স্লিপ অ্যাপনিয়া আছে, তবে সবচেয়ে বেশি যা দেখা যায়, তা হল অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া।

১৯৭০ থেকে ৮০-এর দশকে হিন্দি ছায়াছবির জগতে অন্যতম জনপ্রিয় নাম বাপ্পি লাহিড়ির। হিন্দিতে ‘ডিস্কো ডান্সার’, ‘চলতে চলতে’, ‘শরাবি’, বাংলায় অমর সঙ্গী, আশা ও ভালবাসা, আমার তুমি, অমর প্রেম প্রভৃতি ছবিতে সুর দিয়েছেন। গেয়েছেন একাধিক গান। ২০২০ সালে তাঁর শেষ গান ‘বাগি- ৩’ এর জন্য। কিশোর কুমার ছিলেন বাপ্পির সম্পর্কে মামা। বাবা অপরেশ লাহিড়ি ও মা বাঁশরী লাহিড়ি— দু’জনেই সঙ্গীত জগতের মানুষ। ফলে একমাত্র সন্তান বাপ্পি ছেলেবেলা থেকেই গানের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। মা, বাবার কাছেই পান প্রথম গানের তালিম। মা-বাবা নাম দিয়েছিলেন অলোকেশ, কিন্তু জনপ্রিয়তা পান বাপ্পি নামে।

১৯৫২ সালের ২৭ নভেম্বর জলপাইগুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন বাপ্পি। তার পর দীর্ঘদিন বাংলা ও হিন্দি ছবির গান গেয়েছেন। সুর দিয়েছেন। শরীরে প্রচুর সোনার গয়না পরতে ভালবাসতেন। বলতেন, ‘আমার ভগবানের নাম সোনা!’ ছিল গায়কির নিজস্ব কায়দা, যা তাকে হিন্দি ছবির জগতে অনন্য পরিচিতি দিয়েছিল। পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার এবং সম্মান। বাপ্পি লাহিড়ি রাজনীতিতেও নেমেছিলেন। বিজেপি-তে যোগ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুর কেন্দ্র থেকে ভোটেও লড়েছিলেন।


বাপ্পি লাহিড়ীর প্রয়াণে বিষণ্ণ রাষ্ট্রপতি

কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী ও সুরকার বাপ্পি লাহিড়ীর প্রয়াণে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। বুধবার সকালে বাপ্পি লাহিড়ীর মৃত্যুর দুঃসংবাদ শুনেই শোকে ভেঙে পড়েছেন রাষ্ট্রপতি। শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি জানিয়েছেন, শুধু দেশ নয় বিশ্বেও বাপ্পি লাহিড়ীর গান জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তাঁর গান শ্রোতাদের আনন্দ দিয়ে যাবে।

মঙ্গলবার গভীর রাতে মুম্বইয়ের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন সঙ্গীতশিল্পী বাপ্পি লাহিড়ী। বুধবার সকালে শোকপ্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি জানিয়েছেন, “বাপ্পি লাহিড়ী ছিলেন একজন অতুলনীয় গায়ক ও সুরকার। তাঁর গান শুধু ভারতে নয়, বিদেশেও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তাঁর স্মরণীয় গান শ্রোতাদের আনন্দ দিয়ে যাবে বহুদিন। তাঁর পরিবার ও অনুরাগীদের প্রতি সমবেদনা।”



বাপ্পি লাহিড়ীর প্রয়াণে স্তব্ধ প্রধানমন্ত্রী

ভারতীয় সঙ্গীত জগতের নক্ষত্র-পতনে শোকস্তব্ধ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিংবদন্তী গায়ক ও সুরকার বাপ্পি লাহিড়ীর প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, পরিবেষ্টিত ছিল বাপ্পি লাহিড়ীর সঙ্গীত। প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাঁর গানে মুগ্ধ হবে। মঙ্গলবার গভীর রাতে মুম্বইয়ের জুহুর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে গায়ক ও সুরকার বাপ্পি লাহিড়ীর। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। বাপ্পি লাহিড়ীর প্রয়াণের দুঃসংবাদ শোনার পরই শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। টুইটারে নিজের মনের ভাব ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, “বাপ্পি লাহিড়ীর সঙ্গীত ছিল পরিবেষ্টিত, সুন্দরভাবে বিভিন্ন আবেগ প্রকাশ করে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাঁর গানে মুগ্ধ হবে। তাঁর প্রাণবন্ত স্বভাব সবাই মিস করবেন। তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত, পরিবার ও ভক্তদের প্রতি সমবেদনা। ওম শান্তি।”


সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য