স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ২৭ নভেম্বর: ২০২২ সালে ইউক্রেইনে আগ্রাসনের শুরুর দিনগুলো থেকেই রুশ বাহিনী সবচেয়ে দ্রুত হারে অগ্রসর হচ্ছে। গত জুলাই থেকে তাদের অগ্রগতি আরও ত্বরান্বিত হয়েছে। গত মাসে লন্ডনের অর্ধেক আয়তনের সমান এলাকা দখল করে নিয়েছে রাশিয়া। বিশ্লেষক ও যুদ্ধ বিষয়ক ব্লগাররা এই অভিমত প্রকাশ করেছেন।কিছু রুশ ও পশ্চিমা কর্মকর্তারা বলছেন, যুদ্ধ এখন রাশিয়া ও ইউক্রেইন দু’য়ের জন্যই অত্যন্ত বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে। রুশ বাহিনী ভূখণ্ড দখলে সবচেয়ে বড় কিছু অগ্রগতি সাধন করা এবং যুক্তরাষ্ট্র তাদের সরবরাহ করা ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে কিইভকে রাশিয়ার গভীরে হামলা চালানোর অনুমতি দেওয়ার পর এই বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
স্বাধীন রুশ সংবাদ গোষ্ঠী এজেন্টস্টভো এক প্রতিবেদনে বলেছে, “ইউক্রেইনে দখল করা এলাকার আয়তনের নতুন সাপ্তাহিক এবং মাসিক রেকর্ড সৃষ্টি করেছে রাশিয়া। গত সপ্তাহে রুশ বাহিনী ইউক্রেইনের প্রায় ২৩৫ বর্গকিলোমিটার (৯১ বর্গমাইল) এলাকা দখল করেছে। ২০২৪ সালে এক সপ্তাহের মধ্যে এটি একটি রেকর্ড।ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত গ্রুপডিপস্টেটের তথ্য উদ্ধৃত কেরে এজেন্টস্টভো বলেছে, নভেম্বরে রুশ বাহিনী ৬০০ বর্গকিলোমিটার (২৩২ বর্গমাইল) এলাকা দখল করে নিয়েছে।
রাশিয়া গত জুলাই মাসে পূর্ব ইউক্রেইনে দ্রুতগতিতে অগ্রসর হতে শুরু করেছিল। সে সময়ই ইউক্রেইনের সেনারা রুশ সীমান্তবর্তী কুরস্ক এলাকায় ঢুকে কিছু ভূখণ্ড দখল করে। ওপেন সোর্স মানচিত্র অনুসারে, রাশিয়ার অগ্রগতি তখন থেকেই ত্বরান্বিত হয়েছে।ওপেন সোর্স মানচিত্রের হিসাবে, পুরো ক্রাইমিয়াসহ ইউক্রেইনের ১৮ শতাংশ, ডনবাসের ৮০ শতাংশের কিছু বেশি (যার মধ্যে আছে লুহানস্ক এবং দোনেৎস্ক), দক্ষিণের জাপোরিজিয়া ও খেরসন অঞ্চলের ৭০ শতাংশের বেশি এবং পূর্ব খারকিভ অঞ্চলের প্রায় ৩ শতাংশ রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে।
গত মে মাসে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পরিবর্তন করে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বারবার বলেছিলেন, রুশ বাহিনী অনেক বেশি কার্যকরভাবে অগ্রসর হচ্ছে এবং রাশিয়া ইউক্রেইনে সব লক্ষ্য পূরণ করবে।ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন পুতিনের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত পুরো ডনবাস দখল করা এবং রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনাদের বিতাড়িত করা।
রাশিয়ার অগ্রযাত্রা:
দোনেৎস্ক অঞ্চলে এগুচ্ছে রুশ বাহিনী। তারা পোকরভস্ক এবং কুরাখোভ শহরে শহরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। রুশ বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া উত্তোরত্তোর অঞ্চলটি ঘিরে ফেলছে এবং তারপর আর্টিলারি এবং গ্লাইড বোমা দিয়ে ইউক্রেনীয় বাহিনীর ওপর আঘাত হানছে।রাশিয়ার ফরেন ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের (এসভিআর) প্রধান সের্গেই নারিশকিন মঙ্গলবার বলেছেন, “যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়া সম্পূর্ণ কৌশলগত ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।” কোনও পক্ষই নিজেদের ক্ষয়ক্ষতির সঠিক তথ্য প্রকাশ করেনি। যদিও পশ্চিমা গোয়েন্দারা হতাহতের সংখ্যা কয়েক লাখ অনুমান করেছে।
ইউক্রেইনের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ সোমবার বলেছেন, সন্ধ্যায় ফ্রন্ট লাইনের কুরাখোভ অংশে বিভিন্ন মাত্রার ৪৫ টি যুদ্ধ চলছে।রাশিয়ান যুদ্ধ বিষয়ক ব্লগাররা বলেছেন, রাশিয়া যদি কুরাখোভের চারপাশে ইউক্রেইনীয় প্রতিরক্ষা ভেদ করতে পারে, তবে তারা পশ্চিম দিকে জাপোরিজিয়ার দিকে অগ্রসর হতে পারবে এবং তাদের পেছনদিক সুরক্ষিত করে পোকরোভস্কের দিকে অগ্রসর হতে পারবে।
ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার রিপোর্ট এবং রুশপন্থি সামরিক ব্লগাররা বলছেন, রুশ সেনারা কুরাখোভে রয়েছে। সোমবার ডিপস্টেটও তাদের মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে জানিয়েছে, রুশ বাহিনী কুরাখোভের কাছে রয়েছে।ওয়াশিংটনভিত্তিক স্টাডি অব ওয়ার ইন্সটিটিউট এক প্রতিবেদনে বলেছে, যুদ্ধক্ষেত্রে বিভিন্ন অবস্থানে ইউক্রেইনের দুর্বলতাগুলো খুঁজে বের করার ফলেই মূলত রুশ বাহিনী দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অগ্রগতি অর্জন করতে পারছে।