স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ১৫ নভেম্বর: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রশান্ত মহাসাগরের সলোমন দ্বীপপুঞ্জে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রবালের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এ প্রবাল নীল তিমির চেয়েও বড়।সলোমন দ্বীপ পাপুয়া নিউগিনির পূর্বে এবং ভানুয়াতুর উত্তর-পশ্চিমে ওশেনিয়ার ছয়টি বড় দ্বীপ এবং ৯০০টিরও বেশি ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত একটি দ্বীপদেশ। সেখানে পাওয়া প্রবালটি অনেক ক্ষুদ্র জীবের সমন্বয়ে তৈরি একটি একক জীব। এটি ৩০০ বছরেরও বেশি পুরানো হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফির ভিডিওগ্রাফার মানু সান ফেলিক্স প্রশান্ত মহাসাগরের প্রত্যন্ত অঞ্চল পরিদর্শনের সময় এ প্রবালের সন্ধান পান। তিনি মূলত গিয়েছিলেন প্রশান্ত মহাসাগরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কী ধরনের প্রভাব পড়েছে তা দেখতে।মানু সান ফেলিক্স বলেন, “আমি এমন একটি জায়গায় ডাইভিং করতে নেমেছিলাম, যেখানে এর আগে একটি জাহাজডুবি হয়েছে। কিন্তু জাহাজের ধ্বংসাবশেষের বদলে অন্য কিছু আমার চোখ পড়ে। কৌতুহল বসত ডাইভিং সঙ্গী আমার ছেলেকে নিয়ে আরও নিচে যাই দেখতে।”
তিনি বলেন, “আকস্মিক বিশাল এক প্রবাল দেখে আমি খুবই বিস্মিত হই। সলোমন দ্বীপপুঞ্জে এত বিশাল আকৃতির প্রবালটি দেখার অনুভূতিটা ছিল ‘পানির নিচে গির্জা’ দেখার মতো।”প্রকৃতি প্রেমী মানু সান স্বভাবতই প্রবালটি দেখে তিনি খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি বিবিসি-কে বলেন, “আমি কেবল ভাবছিলাম প্রবালটি এই এক জায়গায় শত শত বছর ধরে বেঁচে আছে। বলতে গেলে সেই নেপোলিয়ানের যুগ থেকে এটি এখানে আছে। সেটি এখন আমার চোখের সামনে।”অভিযানে থাকা বিজ্ঞানীরা পানির নিচে দৈর্ঘ্য মাপার একটি ফিতা ব্যবহার করে প্রবালটি পরিমাপ করেন। এটি প্রায় ৩৪ মিটার চওড়া, ৩২ মিটার লম্বা এবং ৫ দশমিক ৫ মিটার উঁচু।বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মহাসাগরগুলো উষ্ণ হতে থাকায় প্রবাল বিলুপ্তির ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
প্রবাল পলিপ নামক হাজার হাজার জীবন্ত জীবের সমন্বয়ে গঠিত, যার প্রত্যেকটির নিজস্ব শরীর এবং মুখ রয়েছে। নতুন সন্ধান পাওয়া বিশাল প্রবালটি সমুদ্রের গভীর জলে থাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চ তাপমাত্রা থেকে রক্ষা পেয়েছে।আজারবাইজানের বাকুতে জাতিসংঘের জলবায়ু আলোচনা কপ-২৯ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অগ্রগতি অর্জনের চেষ্টায় সম্মেলন চলাকালেই এই প্রাচীন প্রবালের সন্ধান পাওয়ার মত বিস্ময়কর ঘটনা ঘটল।সম্মেলনে উপস্থিত সলোমন দ্বীপপুঞ্জের জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রী ট্রেভর মানেমাহাগা বিবিসি-কে বলেন, “নতুন পাওয়া প্রবালটি আমার দেশের জন্য গৌরবের।” তিনি আরও বলেন, “আমরা বিশ্বকে জানাতে চাই, এটি একটি বিশেষ স্থান এবং এই গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।
“আমাদের অর্থনীতি অনেকটাই সামুদ্রিক সম্পদের উপর নির্ভরশীল। তাই আমাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রবাল অন্তত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রবাল যাতে ক্ষহতিগ্রস্ত না হয় সেটি নিশ্চিত করা আমাদের এবং আমাদের অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুরত্বপূর্ণ।” সলোমন দ্বীপপুঞ্জের মতো ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের মুখে অত্যন্ত ঝুঁকিতে আছে।প্রবাল হল, ‘পাভোনা ক্লাভস’ নামক একটি প্রজাতি এবং এটি চিংড়ি, কাঁকড়া, মাছ ও অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর একটি বাসস্থান। প্রবালের বয়স অতীতের সামুদ্রিক অবস্থার জীবিন্ত প্রতিফলক।‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য কনজারভেশন অব নেচার’ অনুসারে, চলতি সপ্তাহে একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, উষ্ণ পানিতে বসবাসকারী ৪৪ শতাংশ প্রবাল বিলুপ্তির হুমকির মুখে রয়েছে। ২০০৮ সালে সর্বশেষ জরিপের পর থেকে এ হুমকি এক তৃতীয়াংশ বেড়েছে।