Saturday, May 17, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদবিতর্কের ঝুলি নিয়েও ট্রাম্পের অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন কীভাবে

বিতর্কের ঝুলি নিয়েও ট্রাম্পের অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন কীভাবে

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ৭ নভেম্বর: কেলেঙ্কারির তার শেষ নেই, আদালতের বিচারে তিনি ফৌজদারী অপরাধে দোষী, বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে কান পাতলেই তার নিন্দা শোনা যায়।প্রথমবার নির্বাচনে জিতে হোয়াইট হাউসে উঠলেও সেই চার বছর গেছে ‘বিশৃঙ্খলা আর সমালোচনার’ মধ্যে; নিজ দলের ভেতরেই অনেকে তার প্রতি হারিয়েছিলেন আস্থা।

এরপর ২০২০ সালে দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়লেও হেরে যান জো বাইডেনের কাছে। তখন ধরেই নেওয়া হয়েছিল, তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বুঝি শেষ।ভোটের হারের পর ক্যাপিটল হিলে তার কট্টর সমর্থকদের হামলার ঘটনা আর পর্ন তারকার মুখ বন্ধ রাখতে টাকা দেওয়ার অভিযোগ থেকে শুরু করে নানা বিতর্ক তার পিছু ছাড়েনি। দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন ফৌজদারি মামলায়।

আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেও ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়তে তিনি ছিলেন অনড়। যদিও অতীত ইতিহাস তাকে হোয়াইট হাউজের দৌড়ে কতটুকু সামনে এগোতে দেবে, তা নিয়ে সংশয় ছিল। আর এখন সেই সংশয় দূরে ঢেলে দিয়ে, দুই দফায় আততায়ীর বুলেট এড়িয়ে ফের হোয়াইট হাইজের চাবি হাতে পেয়ে গেলেন ৭৮ বছর বয়সী রিপাবলিকান ডনাল্ড ট্রাম্প।

এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে ইলেকটোরাল কলেজ ভোটে বড় ব্যবধানে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হয়ে গেছেন ট্রাম্প। তার এই জয় নিশ্চিতভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসে নাটকীয় এক প্রত্যাবর্তন।যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে ইলেকটোরাল কলেজের ৫৩৮টি ভোটের মধ‌্যে ২৭০টি পেলেই চলে। সর্বশেষ প্রাপ্ত ফলে ট্রাম্প জিতে নিয়েছেন ২৭৯টি ইলেকটোরাল ভোট। আর হ্যারিস পেয়েছেন ২২৩ ভোট।

ট্রাম্পের এই জয়ের মধ্য দিয়ে একবার হেরে যাওয়ার পর দ্বিতীয় চেষ্টায় প্রেসিডেন্ট হওয়ার দ্বিতীয় ঘটনা ঘটল যুক্তরাষ্ট্রে।খাদের কিনার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে একেবারে হোয়াইট হাইজে গিয়ে ওঠার পথ সহজ নয়। রিপাবলিকান ডনাল্ড ট্রাম্প এবার সেটিই করে দেখালেন। কিন্তু সেই পথ তিনি কীভাবে তৈরি করলেন, সেটিই এক প্রতিবেদনে তুল ধরেছে বিবিসি।

অর্থনীতি নিয়ে তার বক্তব্য সাড়া ফেলেছে

নির্বাচনি প্রচারের সময় নানা বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকের নিয়ে আক্রমণাত্মক কৌতুক আর প্রতিহিংসার হুমকি দিয়েছেন।বিবিসি লিখেছে, নির্বাচনি প্রচারের সময় তারা যেসব ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেছে, তাদের বেশিরভাগই বলেছেন যে ট্রাম্প যদি তার ‘দুর্গন্ধযুক্ত কথাবার্তা’ বন্ধ রাখতেন! কিন্তু তারপরও তারা সেটিকে অতীত হিসেবেই দেখেছেন।

এর পরিবর্তে তারা ট্রাম্পের একটি কথার ওপর মনোযোগ দিয়েছেন। সেটি হল, প্রত্যেক সমাবেশেই ট্রাম্প একটি প্রশ্ন করতেন, “আপনারা চার বছর আগের চেয়ে ভালো আছেন?”ট্রাম্পকে ভোট দেওয়া অনেক ভোটারই বিবিসিকে বলেছেন, ট্রাম্প যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখনই অর্থনীতি ভালো ছিল। এখন তারা প্রয়োজনীয় খরচ সামলাতেই বেদিশা হয়ে পড়েছেন।

যদিও জো বাইডেনের সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার পেছনে কোভিড-১৯ সহ আরও কিছু কারণের কথা বলে থাকেন বিশ্লেষকরা, তবে এর জন্য ভোটাররা বিদায়ী বাইডেন প্রশাসনের ঘাড়েই দোষ চাপাচ্ছেন।বাইডেনের সময়ে অভিবাসন রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছানো নিয়েও উদ্বেগ ছিল ভোটারদের। ট্রাম্প ও তার কট্টর সমর্থকরা অনেক সময় যেমনটি দাবি করে থাকেন…, ভোটরারা তেমন ‘জাতিবিদ্বেষী মনোভাব’ প্রকাশ না করলেও কিংবা অভিবাসীরা তাদের খাবারে ভাগ বসাচ্ছে এমনটি মনে না করলেও তারা সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপেরই পক্ষে।

আমেরিকা ফার্স্ট

ট্রাম্পের এবারের ভোটের স্লোগানের একটি ছিল ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ বা সবার আগে আমেরিকা। তার এই স্লোগানও ভোটকেন্দ্রে ভোটার টেনেছে।ভোটারদের অনেকেই চান না ইউক্রেইনে চলমান যুদ্ধে আমেরিকার বিলিয়ন ডলার গচ্চা যাক। তারা মনে করেন, এর চেয়ে সেই অর্থ নিজের দেশে ব্যয় করা উত্তম। ফলে দিন শেষে এ বিষয়টিও ভোটকেন্দ্রে প্রভাব ফেলেছে। তারা হ্যারিসের পরিবর্তে ট্রাম্পকে বেছে নিয়েছেন।

 তারা মনে করেছেন, হ্যারিসকে ভোট দিলে বাইডেনের মতই হবে। বিলিয়ন ডলার চলে যাবে যুদ্ধক্ষেত্রে। আর এখানেই তারা পরিবর্তন চেয়েছেন।২০১৬ সালে ট্রাম্প যখন ক্ষমতার মসনদে বসলেন, তখন রাজনৈতিকভাবে তিনি বহিরাগতই ছিলেন। সেসময় তার পাশে রাজনৈতিক প্রবীণ উপদেষ্টাদের দেখা গেছে। তাদের পরামর্শ নিয়েছেন। তবে এই দফায় তিনি নিয়মনীতির তোয়াক্কা করবেন বলে মনে হয় না।

আগেরবারের উপদেষ্টা আর কর্মকর্তাদের অনেকে ট্রাম্পকে ‘মিথ্যাবাদী’, ‘ফ্যাসিস্ট’, ‘অযোগ্য’ আখ্যা দিয়েছেন। তারা সতর্ক করেছেন, ট্রাম্প যদি তার অনুগতদের নিয়ে চলে, যা সে করবে বলেই আশা করা হচ্ছে, তবে কট্টর ধারণা বা চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রে কেউ তাকে আটকানোর থাকবে না।ট্রাম্প ২০২০ সালে যখন হোয়াইট হাউস ছাড়লেন, সেসময় তার কট্টর সমর্থকরা ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গা বাঁধালেন। সেই ঘটনায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হল। এরপর জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত নথি হস্তান্তরের অভিযোগ উঠল। সেইসঙ্গে পর্ন তারকার সঙ্গে সম্পর্ক আর সেই ঘটনা ধামাচাপা দিতে ঘুষ দেওয়ার ঘটনাতেও ট্রাম্প ব্যাপক আলোচিত হলেন।

এতসব বিতর্ক ছাপিয়ে এবারের নির্বাচনে ট্রাম্প ভোটারদের বললেন আমেরিকা ব্যর্থ জাতিতে পরিণত হয়েছে, যা কেবল তিনিই টেনে তুলতে পারেন। আমেরিকাকে আবারও মহান করার প্রতিশ্রুতি দিলেন। তার স্লোগান ছিল ‘ট্রাম্প উইল ফিক্স ইট’।আর কমলা হ্যারিস সতর্ক করেছিলেন, ট্রাম্প নির্বাচিত হলে আমেরিকার গণতন্ত্রই অস্তিত্বের সংকটে পড়বে। সেটা এখনও দেখার বাকি।ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, উত্তর কোরিয়ার কিম জং উনের মত কর্তৃত্ববাদী নেতাদের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, ‘তারা তাদের অবস্থানে শীর্ষে রয়েছেন, আপনার ভালো লাগুক আর না লাগুক’।

গণমাধ্যমে সমালোচনা বন্ধ করার বিষয়েও কথা বলেছেন ট্রাম্প। নির্বাচনের কয়েকদিন আগে তিনি এমন মন্তব্যও করে বসেন, গণমাধ্যমের কর্মীরা মারা গেলেও তিনি খুব একটা ‘ব্যথিত হবেন না’।তবে ভোটাররা এখন দেখবেন, ট্রাম্প নির্বাচনি প্রচারের সময় যেসব বলেছেন, তা কতটা আলগা কথাবার্তা। ‘ট্রাম্প ট্রাম্পই হবেন’। মনে রাখতে হবে- দ্বিতীয় ট্রাম্পের মেয়াদের বাস্তবতার মুখোমুখি কেবল আমেরিকানদেরই হতে হবে না। ‘পানি কতদূর গড়ায়’ সেটিই এখন দেখার বিষয়।

বিশ্ব এখন দেখবে, ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ বলতে আসলে কী।যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব, যে পক্ষই জয় পাক না কেন ইউক্রেন আর মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ বন্ধ করার দাবিসহ ট্রাম্পের দাবিগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন হয় সেটা দেখার বিষয়।আগের মেয়াদের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার সব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেননি। আর এখন দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট হয়ে তিনি আসলে কী করেন, সেটি দেখবে আমেরিকার জনগণ আর বিশ্ব।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য

error: <b>Alert: </b>Content selection is disabled!!