Friday, January 3, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদরুশ দখলদারত্ব নিয়ে লেখা ইউক্রেনের নারী সাংবাদিকের কারাগারে মৃত্যু

রুশ দখলদারত্ব নিয়ে লেখা ইউক্রেনের নারী সাংবাদিকের কারাগারে মৃত্যু

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ১৪ অক্টোবর: সাংবাদিক ভিক্টোরিয়া রোশসিনা ২০২৩ সালের আগস্টে ইউক্রেন থেকে নিখোঁজ হন। ইউক্রেনের যে অঞ্চল থেকে তিনি নিখোঁজ হয়েছিলেন, সেটি এখন রাশিয়ার দখলে।ভিক্টোরিয়া নিখোঁজ হওয়ার ৯ মাস পর রুশ কর্তৃপক্ষ তাঁকে আটক করার খবর নিশ্চিত করেছে। তবে তাঁকে আটকের কোনো কারণ তখন জানানো হয়নি।এ সপ্তাহে ভিক্টোরিয়ার বাবা মস্কোর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি সংক্ষিপ্ত চিঠি পান। চিঠিতে ভিক্টোরিয়ার মৃত্যুর খবর জানানো হয়। তাঁর বয়স হয়েছিল ২৭।

যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত সেনাদের মৃতদেহ বিনিময় করে রাশিয়া ও ইউক্রেন। এমন একটি বিনিময়ের সময় ভিক্টোরিয়ার মৃতদেহ ফেরত পাঠানো হবে বলে চিঠিতে জানানো হয়েছে। চিঠিতে এই নারী সাংবাদিকের মৃত্যুর তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর বলা আছে। মৃত্যুর কারণ নিয়ে কোনো ব্যাখ্যা নেই।রাশিয়ার সেনারা ইউক্রেনের যেসব অঞ্চলের দখল নিয়েছেন, সেখান থেকে সংবাদ সংগ্রহ করা খুবই বিপজ্জনক। ভিক্টোরিয়ার সহকর্মীরা জানিয়েছেন, অধিকৃত অঞ্চলে গিয়ে খবর সংগ্রহে আগ্রহী ছিলেন তরুণ এই সাংবাদিক। এমনকি আগে একবার আটক হওয়ার পরও তাঁর আগ্রহে ভাটা পড়েনি। সেবার তাঁকে ১০ দিন বন্দী করে রাখা হয়েছিল।

ভিক্টোরিয়ার প্রতিবেদনে ইউক্রেনের রুশ অধিকৃত অঞ্চলগুলোর বাস্তব পরিস্থিতির টুকরা টুকরা গল্প উঠে আসত। ইউক্রেনীয়রা অন্য কোথাও থেকে এমনটা পেতেন না।বিপদের ঝুঁকি থাকায় ভিক্টোরিয়ার মা–বাবা তাঁর অফিসে ফোন কারে তাঁকে কাজের জন্য (বিপজ্জনক জায়গায়) না পাঠাতে অনুরোধ করেছিলেন। তাঁর একজন সাবেক জ্যেষ্ঠ সহকর্মী (বস) এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা কখনো তাঁকে পাঠাইনি। তাঁর সব সম্পাদকই তাঁকে থামাতে চেষ্টা করেছেন; কিন্তু সেটা অসম্ভব ছিল।’গত জুলাইয়ে ভিক্টোরিয়ার বাবা বলেছিলেন, তাঁর মেয়ে কীভাবে পোল্যান্ড ও রাশিয়া হয়ে ইউক্রেনের রুশ অধিকৃত অঞ্চলের পথে রওনা হন।

রওনা হওয়ার এক সপ্তাহ পর ভিক্টোরিয়া ফোনে জানিয়েছিলেন, সীমান্তে কয়েক দিন ধরে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।এর পর থেকে মেয়ের বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে আর তেমন কোনো তথ্য পাননি ভিক্টোরিয়ার বাবা।গত মে মাসে রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের তাগানরোগের ২ নম্বর বন্দিশালায় বন্দী ছিলেন ভিক্টোরিয়া। ইউক্রেনের বন্দীদের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণের জন্য রাশিয়ার এই বন্দিশালা কুখ্যাত। অনেকে এটিকে ‘রুশ গুয়ানতানামো’ বলেও ডাকেন।মিডিয়া ইনিশিয়েটিভ ফর হিউম্যান রাইটসের তথ্যানুসারে, গত মাসে (সেপ্টেম্বর) তাগানরোগ থেকে মুক্তি পাওয়া আরেক ইউক্রেনীয় নাগরিকের সঙ্গে ভিক্টোরিয়ার পরিবারের যোগাযোগ হয়। ওই ব্যক্তি বলেছিলেন, তিনি ৮ অথবা ৯ সেপ্টেম্বর ভিক্টোরিয়াকে (তাগানরোগে) দেখেছিলেন।

এরপর ভিক্টোরিয়াকে জীবিত ফিরে পাওয়া নিয়ে পরিবার আশাবাদী হয়ে ওঠে। তাঁকে অন্য একজন ইউক্রেনীয় নারীর সঙ্গে (বন্দিশালা থেকে) সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু বন্দী বিনিময়ের সময় তাঁদের দুজনের কারও খোঁজই পাওয়া যায়নি।মিডিয়া ইনিশিয়েটিভের পরিচালক তেতিয়ানা কাতরিচেঙ্কো বলেন, ‘এর অর্থ, তাঁকে অন্য কোথাও নেওয়া হয়েছিল। তারা লেফোরতোভোর কথা বলেছে। কেন সেখানে? আমরা জানি না।’বন্দী বিনিময়ের আগে সাধারণত এমনটা করা হয় না বলেও জানান তেতিয়ানা।
লেফোরতোভো কারাগারটি মস্কোতে। এফএসবি সিকিউরিটি সার্ভিস ওই কারগার পরিচালনা করে। গুপ্তচরবৃত্তি এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের অভিযোগ আছে, এমন ব্যক্তিদের সেখানে বন্দী রাখা হয়।

বিবিসির খবরে বলা হয়, ভিক্টোরিয়ার বাবা ৩০ আগস্ট কারাগারে থাকা মেয়ের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। কোনো কারণে সে সময় ভিক্টোরিয়া অনশন শুরু করেছিলেন। কিন্তু সেদিন বাবা তাঁকে অনশন ভাঙতে অনুরোধ করেছিলেন এবং ভিক্টোরিয়া রাজি হয়েছিলেন।ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থা ভিক্টোরিয়ার মৃত্যু নিশ্চিত করেছে।রাশিয়ায় ভিক্টোরিয়ার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের অভিযোগ আনা হয়নি। কোন পরিস্থিতিতে তাঁকে বন্দী করা হয়েছিল, তা–ও জানা যায়নি।ইউক্রেনের এক পার্লামেন্ট সদস্য বলেছেন, ‘একজন বেসামরিক সাংবাদিক…রাশিয়া তাঁকে আটক করল। তারপর রাশিয়া একটি চিঠি পাঠিয়ে জানাল, তিনি মারা গেছেন? এটা হত্যা, একজন জিম্মিকে হত্যা। একে আর কী বলা যেতে পারে, তা আমার জানা নেই।’রাশিয়া সাংবাদিকের মৃত্যু নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য