স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ৯ অক্টোবর: হিজবুল্লাহ গেরিলাদের তৎপরতা চলতে থাকলে লেবানের দশাও ফিলিস্তিনের গাজার মত করার হুমকি দিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের গাজার মত ‘ধ্বংস আর দুর্ভোগ এড়াতে’ চাইলে লেবাননের নাগরিকদের উচিত দেশ থেকে হিজবুল্লাহকে উৎখাত করা।লেবাননের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েলি সেনা অভিযানের মধ্যেই মঙ্গলবার এক ভিডিও বার্তায় এই হুমকি দেন নেতানিয়াহু।দেশটির সামরিক বাহিনীর বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, সোমবার বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর ৫০ সদস্য নিহত হয়েছেন।আর লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩৬ জন নিহত ও ১৫০ জন আহত হয়েছেন।এদিকে হিজবুল্লাহ টানা তৃতীয় দিনের মত ইসরায়েলের হাইফা বন্দরের দিকে রকেট হামলা চালিয়েছে। তাতে ১২ জন আহত হয়েছেন।
লেবাননের জনগণের উদ্দেশে ওই ভিডিও বার্তায় নেতানিয়াহু বলেন, “দীর্ঘ যুদ্ধের অতল গহ্বরে পড়ার আগে আপনাদের সামনে সুযোগ রয়েছে লেবাননকে রক্ষা করার। লেবাননের জনগণকে বলছি, আপনাদের দেশ হিজবুল্লাহ-মুক্ত করুন।”লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সদ্য প্রয়াত নেতা হাসান নাসরুল্লাহর সম্ভাব্য উত্তরসূরি এবং তার উত্তরসূরিকে ইতোমধ্যে হত্যা করারে কথা বলেছেন নেতানিয়াহু।লেবাননের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তিন সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলের তীব্র হামলায় ১৪০০ জনেরও বেশি লোক নিহত এবং ১২ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।মঙ্গলবার টিভিতে এক বক্তব্যে হিজবুল্লাহর উপনেতা নাঈম কাসেম বলেন, তিনি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর চেষ্টাকে সমর্থন করেন। তবে এবার তিনি লেবানন-ইসরায়েল সীমান্ত সংঘাত বন্ধের শর্ত হিসাবে গাজায় যুদ্ধ অবসানের কথা বলেননি।
কাসেম বলেন, হিজবুল্লাহ লেবাননের পার্লামেন্ট স্পিকার নাবিহ বেরির লড়াই বন্ধের চেষ্টাকে সমর্থন করে।এক বছর আগে গাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর থেকে হিজবুল্লাহ বলে এসেছে, তারা ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে লড়াই করছে এবং গাজায় যুদ্ধবিরতি না হওয়া পর্যন্ত তারা লড়াই থামাবে না।লেবাননের ইরান-সমর্থিত এই গোষ্ঠী এখন যুদ্ধবিরতির পক্ষে থাকার কথা বলে তাদের আগের অবস্থান থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিল কিনা তা স্পষ্ট নয়।যদিও গোপন স্থান থেকে দেওয়া বক্তব্যে কাসেম বলেছেন, ইসরায়েলের কাছ থেকে বেদনাদায়ক ধাক্কার পরও হিজবুল্লাহর সক্ষমতা এখনও ‘অটুট’ আছে।তিনি বলেন, “আমরা ইসরায়েলে আঘাত হানছি। আহত করছি। আমরা আরও সময় নেব। তাদের ডজন ডজন শহর প্রতিরোধের অক্ষশক্তির ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায় আছে।”
২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে হিজবুল্লাহ উত্তর রকেট নিক্ষেপ শুরু করার পর থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের শত্রুতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে।৩০ সেপ্টেম্বর আক্রমণ শুরুর পর থেকে দক্ষিণ লেবাননের মধ্য ও পূর্বাঞ্চলে ১৫ হাজারের সেনাকে মাঠে নিামিয়েছে ইসরায়েল।ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী আইডিএফ জানিয়েছে, তাদের সেনারা সীমান্তবর্তী মারোউন আল-রাস গ্রামে হিজবুল্লাহর একটি ‘কমব্যাট কম্পাউন্ড’ এর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। একটি আবাসিক ভবনের ভেতরে একটি লোডেড রকেট লঞ্চার এবং অস্ত্র ও সরঞ্জাম দেখিয়ে ছবি প্রকাশ করেছে তারা।আইডিএফ আরও বলেছে, মঙ্গলবার বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরতলীতে হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতে তাদের বিমান নতুন করে হামলা চালিয়েছে।
এর আগে সোমবার রাজধানীতে এক বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর সদর দপ্তরের কমান্ডার সুহাইল হুসেইনি নিহত হয়েছেন বলে ঘোষণা দেয় আইডিএফ। যদিও হিজবুল্লাহ এ দাবির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।হিজবুল্লাহর প্রধান সৈয়দ হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হওয়ার পর তার সম্ভাব্য উত্তরসূরি হাশেম সাফিয়েদ্দিনকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলের বিমান হামলা চালায়। এর পর থেকে তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যায়নি বলে লেবাননের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন।গত বৃহস্পতিবার লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণাংশে হিজবুল্লাহর অবস্থানগুলোতে ব্যাপক বোমাবর্ষণ করে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো।
মার্কিন নিউজ ওয়েবসাইট অ্যাক্সিওসের দেওয়া উদ্ধৃতিতে তিন ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সাফিয়েদ্দিনকে হত্যার জন্যই একটি ভূগর্ভস্থ বাংকার লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়।আইডিএফের মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বলেছেন, হামলায় সাফিয়েদ্দিন নিহত হয়েছেন বলে নেতানিয়াহু ও ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি সেনাবাহিনী।এদিকে, লেবাননে জাতিসংঘের বিশেষ সমন্বয়ক এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর প্রধান এক যৌথ বিবৃতিতে সতর্ক করে বলেছেন, সংঘাতের মানবিক প্রভাব ‘বিপর্যয়ের চেয়ে কম নয়’।
লেবানন সরকার বলছে, গত এক বছরে প্রায় ১২ লাখ মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। বাস্তুচ্যুতদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষ।এ ছাড়া দুই লাখের বেশি সিরীয় শরণার্থীসহ চার লাখেরও বেশি মানুষ যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় পালিয়ে গেছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার প্রধান এই পরিস্থিতিকে ‘দুঃখজনক’ বলে বর্ণনা করেছেন।বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বলেছে, হাজার হাজার হেক্টর কৃষিজমি পরিত্যক্ত হয়ে যাওয়ায় লেবাননের মানুষের জন্য খাবার জোগাড় করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।