স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,৩ আগস্ট: যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে দুটি ভিন্ন ফৌজদারি অপরাধের তদন্ত দেখভাল করছেন তিনি। তবে বড় ধরনের মামলার ক্ষেত্রে তার নাম একেবারে অপরিচিত নয়। তিনি হচ্ছেন,জ্যাক স্মিথ।দুই দশক ধরে দেশে-বিদেশে সরকারি অনেক কর্মকর্তার পেছনেই লেগে আছেন তিনি। এক্ষেত্রে তার সাফল্যের রেকর্ড মিশ্র।অভিজ্ঞ এই কৌঁসুলিকে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দুটি তদন্তে বিশেষ আইনি পরামর্শক হিসাবে নিয়োগ করার পর থেকে অনেকটা নীরবেই কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।গত বছরের নভেম্বরে স্মিথকে নিয়োগ দেওয়ার সময় মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গারল্যান্ড বলেছিলেন, একহাতে এবং জরুরি ভিত্তিতে এসব বিষয় সম্পন্ন করার জন্য স্মিথই সঠিক মানুষ।
তবে ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক উইচ হান্ট’ এর অগ্রভাগে থাকা একজন ‘উন্মত্ত’ মানুষ আখ্যা দিয়ে জ্যাক স্মিথকে আক্রমণ করেছেন।বিশেষ এই আইনি পরামর্শক এরই মধ্যে ট্রাম্পকে সরকারি গোপন নথি অব্যবস্থাপনার ঘটনায় ৪০টি অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। ২০২০ সালের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগেও ট্রাম্পকে আলাদাভাবে অভিযুক্ত করেছেন স্মিথ।বিবিসি জানায়, হার্ভার্ড ল স্কুল থেকে স্নাতক করেছেন স্মিথ। তার পুরো নাম জন লুমান স্মিথ। তিনি নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা। ১৯৯৪ সালে ম্যানহাটান ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির অফিসে সহকারি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেছিলেন।পরের দশকে ব্রুকলিনের মার্কিন অ্যাটর্নির অফিসে আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন স্মিথ। সেখানে তিনি সহিংস অপরাধ চক্র, জালিয়াতি এবং সরকারি দুর্নীতির মামলা নিয়ে কাজ করেছেন।
বার্তা সংস্থা এপি-র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পারিবারিক সহিংসতার এক মামলায় একজন নারীকে সাক্ষী হতে রাজি করানোর জন্য তার পেছনে লেগে ছিলেন স্মিথ। আর তা করতে গিয়ে তিনি একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের করিডরে এক সপ্তাহ কাটান।১৯৯৭ সালে নিউইয়র্ক পুলিশের হাতে হাইতিয়ান অভিবাসী আবনার লুইমারের নিপীড়নের শিকার হওয়ার ঘটনা তদন্তকারীদের মধ্যে ছিলেন স্মিথ।নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, স্মিথ টিমওয়ার্কে অভিজ্ঞ। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলায় তাকে বিশেষ আইনি পরামর্শক হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে তার এ অভিজ্ঞতাই বিবেচনায় নেওয়া হয়।২০০৮ সালে স্মিথ নেদারল্যান্ডসের হেগে গিয়ে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের (আইসিসি) অধঃস্তন তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত দেখভাল করেন।
দুই বছর পরে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগে ফেরেন স্মিথ। তিনি বিচার বিভাগের পাবলিক ইন্টেগ্রিটি ইউনিট প্রধানের দায়িত্ব পান। এই বিভাগ ঘুষ, নির্বাচনী জালিয়াতির মতো কেন্দ্রীয় সরকারের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিচার করে।২০১০ সালে বার্তা সংস্থা এপি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্মিথ নেদারল্যান্ডসের হেগের আদালত ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগে ফিরে আসার ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, আরও ভাল একটি কাজের জন্য তিনি স্বপ্নের চাকরি ছেড়েছেন।স্মিথ দায়িত্ব নেওয়ার সময় পাবলিক ইন্টেগ্রিটি ইউনিট বিচারিক এক পরাজয়ের ধাক্কা সামলে ওঠার চেষ্টায় ছিল। মার্কিন কংগ্রেসের কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা তদন্তগুলো বন্ধ করার মধ্য দিয়ে কাজ শুরু করেন স্মিথ। অন্য কাজ নিয়েও তিনি অগ্রসর হন।
স্মিথের মেয়াদকালে কৌঁসুলিরা ভার্জিনিয়ার সাবেক গভর্নর বব ম্যাকডোনেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করেন। এই রিপাবলিকানের বিরুদ্ধে করা মামলাটি ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্ট সর্বসম্মতভাবে বাতিল করে।পাবলিক ইন্টেগ্রিটি ইউনিট সাবেক ডেমোক্র্যাট ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জন এডওয়ার্ডসকেও বিচারের মুখে দাঁড় করিয়েছিল। কিন্তু জুরি এডওয়ার্ডসকে একটি অভিযোগে খালাস দেয়। বাকি অভিযোগগুলো ঝুলে ছিল। তার আর কখনও বিচার হয়নি।স্মিথকে আক্রমণ করতে গিয়ে ট্রাম্প এসব ঘটনাকেই উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরেছেন। বলেছেন, স্মিথ অনেকের জীবন ধ্বংস করেছেন। একটি কর কেলেঙ্কারিতে তিনি জড়িত ছিলেন বলেও অভিযোগ ট্রাম্পের।
এক সাংবাদিককে ট্রাম্প বলেছেন, “স্মিথ যা করেছেন, তা ভয়ংকর। এটা ক্ষমতার অপব্যবহার, বিচারিক অসদাচরণ।”স্মিথের উল্লেখযোগ্য কিছু সাফল্যও আছে। এর মধ্যে আছে- নিউ ইয়র্ক অ্যাসেম্বলির সাবেক স্পিকার শেলডন সিলভারকে দুর্নীতির মামলায় কারাগারে পাঠানো।অ্যারিজোনার সাবেক কংগ্রেসম্যান রিপাবলিকান রিক রেনজি দুর্নীতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন স্মিথের হাতে পড়েই। যদিও রেনজি পরে ট্রাম্পের আমলে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাবলে ক্ষমা পেয়েছিলেন।২০১৫ সালে স্মিথ টেনেসির ন্যাশভিলে কেন্দ্রীয় কৌসুঁলির কার্যালয়ে যোগ দেন পরিবারের কাছে থাকার জন্য।ট্রাম্পের শাসনামলে স্থায়ী নিয়োগ না পেয়ে ২০১৭ সালে একটি বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা সংস্থায় যোগ দিয়েছিলেন স্মিথ। ২০১৮ সালে তিনি আবার হেগ আদালতে ফিরে যান।
সেখানে তিনি ১৯৯০ এর দশকে কসোভোয় সংঘাতকালে সংঘঠিত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ সংক্রান্ত মামলায় আদালতের প্রধান কৌসুঁলির পদ পান।দ্য টাইমস জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল গারল্যান্ড ওয়াশিংটনে স্মিথকে বিশেষ আইনি পরামর্শকের চাকরির প্রস্তাব দেওয়ার সময় তার দল কসোভোর সাবেক প্রেসিডেন্ট হাশিম থাচির বিচারের প্রস্তুতি নিচ্ছিল।স্মিথ তখন মার্কিন বিচার বিভাগে ফিরতে আগ্রহী থাকলেও সে সময় তিনি সাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার কারণে অস্ত্রোপচারের থেকে সেরে উঠার পর্যায়ে ছিলেন। সেকারণে ২০২১ সালের জানুয়ারির আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরতে পারেননি।স্মিথের বন্ধু ও সাবেক সহকর্মী নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি মোয়ে ফোডেম্যান গত বছর সিএনএনকে বলেছিলেন, তার দেখা সেরা আইনজীবীদের একজন স্মিথ।স্মিথের অন্য সাবেক সহকর্মীরা তাকে একজন নির্ভীক ও সক্রিয় কৌসুঁলি আখ্যা দিয়েছেন। অনেকেই বলেছেন, ট্রাম্প যতই চেষ্টা করুন, স্মিথকে নাস্তনাবুদ করতে সফল হবেন না তিনি।