স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,২৪ জুন: ইউক্রেইনে যুদ্ধরত রাশিয়ার মিলিশিয়া বাহিনী ওয়াগনার এর প্রধানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের অভিযোগ এনেছে ক্রেমলিন।এ অভিযোগ আনার কয়েক ঘণ্টা পর শনিবার বাহিনীটির প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন জানিয়েছেন, তার ওয়াগনার বাহিনীর যোদ্ধারা ইউক্রেইন থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে রাশিয়ায় প্রবেশ করেছে এবং তারা মস্কোর সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যেতে প্রস্তুত।বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও প্রিগোজিনের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে চলা অচলাবস্থার খবর সামনে আসার পরই রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবি তার বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছে।বেসরকারি সামরিক কোম্পানি ওয়াগানারের বাহিনীগুলোকে প্রিগোজিনের আদেশ অগ্রাহ্য করতে এবং তাকে গ্রেপ্তার করার আহ্বান জানিয়েছে এফএসবি।বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, টেলিগ্রাম অ্যাপে পোস্ট করা এক অডিও রেকর্ডিংয়ে প্রিগোজিন বলেছেন, ওয়াগনার যোদ্ধারা রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রোস্তভে প্রবেশ করেছে। তিনি বলেছেন, তিনি ও তার লোকেরা তাদের পথে যেই দাঁড়াবে তাকেই ধ্বংস করে দেবে।
প্রিগোজিন তার বাহিনী ইউক্রেইনের সীমান্ত অতিক্রম করে রাশিয়ায় প্রবেশ করেছে বলে দাবি করলেও এ পর্যন্ত এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে বিবিসি জানিয়েছে।এর আগে প্রিগোজিন কোনো প্রমাণ ছাড়াই অভিযোগ করে বলেছেন, রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্ব শুক্রবার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে তার বাহিনীর বহু সেনাকে হত্যা করেছে। তিনি তাদের শাস্তি দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।তার পদক্ষেপ সামরিক অভ্যুত্থান না বলে দাবি করেছেন তিনি। কিন্তু ধারবাহিক কয়েকটি অডিও বার্তায় অত্যন্ত উত্তেজিত স্বরে তিনি ধারণা দিয়েছেন, তার ২৫ হাজার মিলিশিয়ার শক্তিশালী একটি দল মস্কোর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বকে অপসারণ করার পথে রয়েছে।রয়টার্স জানিয়েছে, এসব বার্তায় তার কণ্ঠস্বর বিভিন্ন রকম মনে হয়েছে এবং সেটি তারা স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করতে পারেনি।নিরাপত্তা বিভাগের এক সূত্র উদ্ধৃত করে তাস জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে মস্কোর সরকারি ভবনগুলো, পরিবহন স্থাপনা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লদিমির পুতিন পরস্থিতি সম্পর্কে অবগত আছেন এবং নিয়মিত আপডেট পাচ্ছেন বলে তাস জানিয়েছে।হোয়াইট হাউস বলেছে, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং বিষয়টি নিয়ে মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা করবে।
রাশিয়ার ইউক্রেইন অভিযানের ডেপুটি কমান্ডার সের্গেই সুরাভাইকিন ওয়াগনার যোদ্ধাদের পুতিনকে মানার জন্য ও মস্কোর কমান্ডারদের মেনে নিয়ে তাদের ঘাঁটিতে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।তিনি সতর্ক করে বলেছেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি হলে রাশিয়ার শত্রুরা তাদের নিয়ে খেলবে।টেলিগ্রামে পোস্ট করা এক ভিডিওতে তিনি বলেছেন, “আমি আপনাদের থামার আহ্বান জানাচ্ছি।”এই পরিস্থিতির বিস্তারিত অনেক কিছু এখনও পরিষ্কার হয়নি। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতের ইউক্রেইনে হাজার হাজার সেনা পাঠানোর পর এটিই সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ সংকট যা পুতিন মুখোমুখি হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।এক সময়ের পুতিনের মিত্র প্রিগোজিন কয়েক মাস ধরে মস্কোর সঙ্গে ক্রমাগত তিক্ত বিরোধে জড়িয়ে পড়ছিলেন।
শুক্রবার সকালের দিকে তিনি নতুন একটি সীমা অতিক্রম করেন বলে ধারণা পাওয়া গিয়েছিল। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, ইউক্রেইন আক্রমণের জন্য ক্রেমলিনের যুক্তি সেনাবাহিনীর নেতৃত্বের মিথ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত।গত মাসে ইউক্রেইনের বাখমুত শহর দখল করার লড়াইয়ে ওয়াগনার নেতৃত্ব দিয়েছিল। ১০ মাসের মধ্যে ইউক্রেইনে সেটি ছিল রাশিয়ার সবচেয়ে বড় জয়। যুদ্ধক্ষেত্রের এই সাফল্যের সুযোগে প্রিগোজিন রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊধ্র্বতন কর্তৃপক্ষের সমালোচনা শুরু করেন আর তাতে তিনি দায়মুক্তি পাচ্ছিলেন বলেই ধারণা পাওয়া যাচ্ছিল।কয়েকমাস ধরেই তিনি রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেগেই শোইগু ও দেশটির শীর্ষ জেনারেল ভ্যালেরি গেরাসিমোভের বিরুদ্ধে ‘অযোগ্যতার’ অভিযোগ করে আসছিলেন।রাশিয়ার সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল ভ্লাদিমির আলেকসিভ একটি ভিডিও আবেদন ছেড়ে তাতে প্রিগোজিনকে তার পদক্ষেপে কী দাঁড়াচ্ছে তা অনুধাবন করতে বলেছেন।“শুধু প্রেসিডেন্টেরই অধিকার আছে সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বের ক্ষেত্রে মনোনয়ন দেওয়ার আর আপনি তার অধিকারে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছেন,” বলেছেন তিনি।