Friday, June 13, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদটাইটানে ঠিক কী ঘটেছিল, জানা যাবে কীভাবে

টাইটানে ঠিক কী ঘটেছিল, জানা যাবে কীভাবে

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ২৩ জুন: আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে ডুবোযান টাইটানের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়ার পর উদ্ধার প্রচেষ্টা এখন পরিণত হয়েছে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টায়।যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ড কর্মকর্তা রিয়ার অ্যাডমিরাল জন মাগারের মতে, টাইটান উদ্ধারে গিয়ে সেটির ধ্বংসস্তূপের যে চিত্র মিলেছে তা ‘ভয়ঙ্কর অন্তর্মুখী বিস্ফোরণের’ সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

বিবিসি জানিয়েছে, ডুবোযানটির ধ্বংসাবশেষের দুটি টুকরা খুঁজে পেয়েছেন উদ্ধারকারীরা। এর একটি টাইটানের পেছনের অংশ, অন্যটি ল্যান্ডিং ফ্রেম। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, সে কারণেই ধারণা করা হচ্ছে, অন্তুর্মুখী বিস্ফোরণে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে ওই সাবমারসিবল।ব্রিটেনের রয়্যাল নেভির প্রাক্তন সাবমেরিন ক্যাপ্টেন রায়ান রামসে বলছেন, এ দুর্ঘটনা কেন ঘটল এবং ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা রোধে কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে- সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কর্তৃপক্ষ টাইটানের ধ্বংসাবশেষ থেকে পাওয়া প্রতিটি টুকরো সংগ্রহ করবে।“সেখানে কোনো ব্ল্যাক বক্স নেই, তাই আপনি ডুবোযানটির শেষ গতিবিধি শনাক্ত করতে পারবেন না। এ বিষয়টি বাদ দিলে অনুসন্ধানের প্রক্রিয়াটি হবে বিমান দুর্ঘটনার তদেন্তর মতই।”

আণুবীক্ষণিক চিড়

রায়ান রামসে জানান, টাইটানের ধ্বংসাবশেষের টুকরোগুলো একবার পৃষ্ঠে তুলে আনতে পারলে তার কার্বন ফাইবার কাঠামো পরীক্ষা করবে কর্তৃপক্ষ। তখন হয়ত জানা যাবে– শেষ মুহূর্তে টাইটানের কী হয়েছিল।কার্বন ফাইবার ফিলামেন্টের কাঠামো পরীক্ষার জন্য প্রতিটি টুকরো একটি মাইক্রোস্কোপ দিয়ে নিবিড়ভাবে পরীক্ষা করা হবে। টাইটানের গায়ে ফাটল বা ছিদ্র ঠিক কোথায় হয়েছিল সেটি জানতে কার্বন ফাইবারে চিড় বা ফাটল মাইক্রোস্কোপ দিয়ে খুঁজে দেখা হবে, যেখান থেকে সেই ‘অন্তর্মুখী বিস্ফোরণ’ ঘটেছে।ডুবোযানটির কাঠামাগত কোনো ত্রুটি ছিল কিনা, মাইক্রোস্কোপিক পরীক্ষার মাধ্যমে বড় এই প্রশ্নটির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবেন তদন্তকারীরা।ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ব্লেয়ার থর্নটন বলেন, ডুবোযানটি যদি আইফেল টাওয়ারের ওজনের সমানও হত, তবু সেটি মাহসাগরের তলদেশে অবিশ্বাস্য রকমের উচ্চ চাপের শিকার হত।

“টাইটানের মূল কাঠামোতে আমরা খুব শক্তিশালী একটি অন্তমুর্খী বিস্ফোরণের কথা বলছি”, বলেন তিনি।কিছু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ, যদি অন্তমুর্খী বিস্ফোরণই হয়, তাহলে জটিল প্রশ্নটি হল টাইটানের যথাযথ পরীক্ষার অভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে কিনা।ইম্পেরিয়াল কলেজ অব লন্ডনের অধ্যাপক রডেরিক এ স্মিথ বলেন, নির্মাণ কাঠামোতে অভ্যন্তরীণ ত্রুটি হলে কার্বন ফাইবার কাজ করতে ব্যর্থ হয়। কার্বন ফাইবার ও টাইটানিয়ামের জোড়াগুলো খুব সাবধানে নিখুঁতভাবে পরীক্ষা করা প্রয়োজন।“ভয়াবহ অন্তর্মুখী বিস্ফোরণ ঘটার মানে হল, কীসের পরে কী ঘটেছে সেটা এখন বোঝা খুব কঠিন হবে। সে কারণে সম্ভব হলে ডুবযানটির ধ্বংসাবশেষ আবার জোড়া দিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষার প্রয়োজন।”বিবিসি জানিয়েছে, ডুবোযানের এমন দুর্ঘটনা নিয়ে কোনো প্রটোকল না থাকায় তদন্তে কোন সংস্থা নেতৃত্ব দেবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।মার্কিন কোস্ট গার্ড কর্মকর্তা জন মাগারও বলছেন, এ বিষয়টি নির্ধারণ করা জটিল, কারণ টাইটানের সলিল সমাধি ঘটেছে আটলান্টিক মহাসাগরের একটি প্রত্যন্ত অংশে, আর ওই ডুবোযানে বিভিন্ন জাতীয়তার আরোহী ছিলেন।

তবে এখন পর্যন্ত যেহেতু মার্কিন কোস্টগার্ড নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করছে, তারা এই অনুসন্ধান পর্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।একশ বছরের বেশি সময় আগে সেই ১৯১২ সালে আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে যাওয়া সেই সময়ের সর্ববৃহৎ জাহাজ টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গত রোববার পর্যটকদের নিয়ে ডুব দিয়েছিল পর্যটন সংস্থা ওশানগেইটের ডুবোযান টাইটান।আটলান্টিকের পানিতে ডুব দেওয়ার পৌনে দুই ঘণ্টার মাথায় টাইটানের সঙ্গে পানির ওপরে থাকা নিয়ন্ত্রক জাহাজ পোলার প্রিন্সের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তারপর থেকে চলছিল টাইটানের উদ্ধার অভিযান।উদ্ধারকারীদের আশা ছিল, হয়ত কোনো কারণে টাইটান পানির নিচে তলিয়ে গেছে, ভেসে উঠতে পারছেন না। যে কারণে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উদ্ধারকর্মীরা টাইটানের অবস্থান শনাক্ত করে সেটাকে তুলে আনতে চাইছিলেন। তাদের ভয় ছিল, ডুবোযানে সংরক্ষিত অক্সিজেন শেষ হয়ে গেলে সেখানে থাকা পাঁচ আরোহী দম বন্ধ হয়ে মারা পড়তে পারেন।উদ্ধার অভিযানের মধ্যেই স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে খবর আসে, আটলান্টিকের তলদেশে উদ্ধার অভিযানে পাঠানো রোবটযানটি টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছে অন্য কিছুর ধ্বংসস্তূপ খুঁজে পেয়েছে, যেটি পরে টাইটানের বলে নিশ্চিত করে মার্কিন কোস্ট গার্ড।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য

error: <b>Alert: </b>Content selection is disabled!!