স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,৫ এপ্রিল: আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়েরের মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার থেকে শুরু হল যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অবৈধ অর্থ প্রদানের মামলার বিচারকাজ। এদিন ট্রাম্প আদালতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।আগামী ৪ ডিসেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানিতে ট্রাম্পকে সশরীরে হাজির থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।নিউ ইয়র্কের ম্যানহ্যাটন আদালতে এদিন ফৌজদারি অভিযোগের মুখোমুখি হওয়ার প্রায় এক ঘন্টা পর ট্রাম্প মুক্তি পেয়ে আদালতকক্ষ ত্যাগ করেন বলে জানায় বিবিসি।ট্রাম্প চলে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের কথার কোনও উত্তর দেননি। তার প্রস্থানের সময় বিরাজ করছিল নীরবতা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও ট্রাম্পের বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে এখনও কিছু বলেননি। ট্রাম্পকে নিয়ে এই গোটা প্রক্রিয়াতে তিনি শুরু থেকেই নীরব ছিলেন।আদালত ছেড়ে ট্রাম্পের মঙ্গলবারেই ফ্লোরিডায় নিজ বাড়িতে ফেরার কথা রয়েছে। সেখানে গিয়ে তিনি বক্তব্য রাখবেন।সাবেক পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে অর্থ দেওয়ার মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করতে গিয়েছিলেন ট্রাম্প।যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তিনিই প্রথম সাবেক কোনও প্রেসিডেন্ট যিনি ফৌজদারি মামলায় আদালতে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন।ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ৩৪টি অভিযোগ আনা হয়। যার মধ্যে ব্যবসা সংক্রান্ত ভুয়া তথ্য দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এই সব অভিযোগেই ট্রাম্প মঙ্গলবার আদালতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।
আদালতে খুব বেশি মানুষকে এদিন উপস্থিত থাকতে দেওয়া হয়নি। মাত্র পাঁচজন ফটোগ্রাফারকে আদালতকক্ষে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। তাদের শুধুমাত্র ছবি তুলতে দেওয়া হয়েছিল। কোনো ভিডিও করতে দেওয়া হয়নি।ট্রাম্প নিউ ইয়র্কে ম্যানহ্যাটনের ফৌজদারি আদালতে হাজির হলে প্রক্রিয়ামাফিক তাকে গ্রেপ্তারের পর আদালতকক্ষে নেওয়া হয়।ট্রাম্পকে হাতকড়া পরানো না হলেও তার আঙুলের ছাপ নেওয়ার মধ্য দিয়ে আদালতকক্ষে যাওয়ার আগে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার দেখানো হয় এবং পুলিশ কাস্টডিতে রাখা হয়।কিছুসময় পর বিচারকের সামনে ট্রাম্পকে হাজির করা হয়। এ সময় তিনি কিছুটা বিমর্ষ ছিলেন। ট্রাম্পের সঙ্গে ছিলেন তার আইনজীবীরা।আদালতে পৌঁছে ট্রাম্প গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ তার শেষ কথা ছিল, “যুক্তরাষেট্র এমন হতে পারে বিশ্বাস করতে পারছি না।”এর আগে মঙ্গলবার সকালে এক বার্তায় ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমাদের রিপাবলিকানদের জন্য একটি দুঃখজনক দিন’।
এক ইমেইল বার্তায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষায় জনগনকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। ‘যুক্তরাষ্ট্র তৃতীয় বিশ্বের কমিউনিস্ট দেশ’ হয়ে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।এমনকী, তার বিরুদ্ধে হওয়া মামলার বিচারককে নিয়েও কটুক্তি করতে ছাড়েননি তিনি। বিচারককে তিনি ‘অত্যন্ত পক্ষপাতদুষ্ট’ বলে বর্ণনা করে বলেন, ‘‘তার পরিবার যে ট্রাম্পকে ঘৃণা করে এটা তো সবাই জানে’।গত ৩০ মার্চ নিউ ইয়র্কের ম্যানহ্যাটনের গ্র্যান্ড জুরি আদালত ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করে। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগের মূলে রয়েছেন স্টর্মি ড্যানিয়ালস নামে একজন সাবেক পর্ন তারকা।
যিনি অভিযোগ করেছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে তার যৌন সম্পর্ক ছিল এব ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ওই সম্পর্কের বিষয়ে মুখ বন্ধ রাখতে ট্রাম্প গোপনে তার আইনজীবীর মাধ্যমে তাকে মোটা অংকের অর্থ প্রদান করেন।ড্যানিয়ালসের এই অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসকেই নাড়িয়ে দিয়েছে বলা যায়। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের আইনে সাবেক ওই পর্ন তারকার সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক থাকা নিয়ে কোনো বাধা নেই। কিন্তু গোল বেঁধেছে গোপনে অর্থ প্রদান নিয়ে। যদিও ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে আনা এ অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন।
স্টর্মি ড্যানিয়েলস কাহিনীর সংক্ষিপ্ত টাইমলাইন:
২০০৬: স্টর্মি ড্যানিয়েলসের বয়স তখন ২৭ বছর। তিনি দাবি করেন, একটি গল্ফ টুর্নামেন্ট শেষে হোটেল কক্ষে ৬০ বছরের ট্রাম্পের সঙ্গে তার যৌন সম্পর্ক হয়। তার এক মাস আগে মেলানিয়া ট্রাম্প ছেলে ব্যারনকে জন্ম দেন।
২০১১: স্টর্মি ড্যানিয়েলস একটি ম্যাগাজিনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক থাকার দাবি করেন। মামলা করা হবে এমন হুমকি পাওয়ার পর ওই ম্যাগাজিন কর্তৃপক্ষ শেষ পর্যন্ত সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করেনি।
২০১৬: ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার কয়েকদিন আগে তার আইনজীবী মাইকেল কোহেন ড্যানিয়েলকে তার মুখ বন্ধ রাখার বিনিময়ে এক লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার দেয়।
২০১৮: দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেখানে স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ট্রাম্পের আইনজীবী কোহেনের অর্থ দেওয়ায় এবং ২০১১ সালে ড্যানিয়েলের সাক্ষাৎকার প্রচার করা থেকে বিরত রাখতে ম্যাগাজিন কর্তৃপক্ষকে চাপ দেওয়ার কাজটিও কোহেন করেছেন বলে দাবি করা হয়।ওই সময় ট্রাম্প যৌন সম্পর্কের বিষয়টি এবং কোহেন অর্থ দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। ওই বছরের শেষ দিকে করফাঁকি দেওয়ার একটি অভিযোগে কোহেন দোষীসাব্যস্ত হন এবং তার তিন বছরের কারাদণ্ডের সাজা হয়। ওই সময় দেওয়া জবানবন্দিতে তিনি বলেছিলেন, ট্রাম্পের নির্দেশেই তিনি ড্যানিয়েলসকে অর্থ দিয়েছিলেন।
২০১৯: ম্যানহ্যাটন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির কার্যালয় থেকে ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে তদন্ত শুরু হয়।
২০২০: প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে যান ট্রাম্প।
২০২৩: অবৈধভাবে অর্থ প্রদানের একটি অভিযোগে ৩০ মার্চ নিউ ইয়র্কের ম্যানহ্যাটনের গ্র্যান্ড জুরি আদালত ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করেন। তার আগে ১৫ মার্চ তিন ঘণ্টার জন্য কোহেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ১৮ মার্চ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্টে ট্রাম্প তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে বলে জানান।