Sunday, May 18, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদহ্যারি-মেগানের সংসার যেভাবে চলে

হ্যারি-মেগানের সংসার যেভাবে চলে

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,৪ মার্চ: প্রিন্স হ্যারি ও তাঁর স্ত্রী মেগান মার্কেলকে ব্রিটিশ রাজপরিবারের উইন্ডসর প্রাসাদের বাড়ি ছাড়তে বলা হয়েছে। ‘ফ্রগমোর কটেজ’ নামের এ বাড়ি প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ বিয়ের সময় হ্যারি ও মেগানকে উপহার দিয়েছিলেন।হ্যারি ও মেগান ডিউক অব সাসেক্স ও ডাচেস অব সাসেক্স হিসেবেও পরিচিত। ২০২০ সালে রাজকীয় জীবন ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় পাড়ি জমান হ্যারি-মেগান দম্পতি। এর পর থেকে তাঁরা রাজপরিবারের কাছ থেকে কোনো অর্থ নেন না। ব্যবসার মাধ্যমে আয় করেন তাঁরা।

রাজপরিবার ছাড়ার কারণ

প্রিন্স হ্যারি ও মেগানের পরিচয় হয়েছিল ২০১৬ সালে। ২০১৮ সালে তাঁরা বিয়ে করেন। পরে ২০২০ সালে রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্য হিসেবে পদত্যাগ করেন।প্রিন্স হ্যারি ও মেগান দম্পতিকে নিয়ে গণমাধ্যমে নানা খবর প্রকাশিত হতে থাকে। এ কারণে গণমাধ্যমের ওপর তাঁরা খুব বিরক্ত ছিলেন। বাকিংহাম প্যালেস তাঁদের ‘সাসেক্সরয়েল’ ব্র্যান্ড বন্ধ করে দিয়েছিল। এ কারণে তাঁরা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন।রাজপরিবারের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেওয়ার সিদ্ধান্তে রাজপরিবারের অন্য সদস্যরা ‘আহত’ হয়েছিলেন বলে জানা গেছে। তবে রাজপরিবার ছাড়লেও জন্মসূত্রে হ্যারি প্রিন্স ছিলেন। আর তাঁদের ডিউক ও ডাচেস অব সাসেক্স খেতাব আগের মতোই ঠিক ছিল। তবে তাঁদের হিজ/হার রয়্যাল হাইনেস বলে আর সম্বোধন করা হয় না। হ্যারি তাঁর সামরিক খেতাবও ত্যাগ করেছিলেন। এ কারণে প্রয়াত রানি এলিজাবেথের শেষকৃত্যে তিনি সামরিক পোশাক পরেননি।

হ্যারিমেগান কোথায় থাকেন

রাজদায়িত্ব ছেড়ে ২০২০ সালের জুনে হ্যারি ও মেগান দম্পতি ক্যালিফোর্নিয়ার মন্টেসিটোতে চলে যান। তাঁরা বলেছিলেন, তাঁরা ছেলে আর্চিকে বড় করার জন্য এবং তাঁদের আর্চওয়েল ফাউন্ডেশন গড়ে তুলতে সময় দিতে চান। তাঁদের কন্যা লিলিবেতের জন্ম ২০২১ সালে। এরপর ২০২২ সালের জুনে প্রয়াত রানি এলিজাবেথের সিংহাসনে আরোহণের প্লাটিনাম জুবিলি ও সেপ্টেম্বরে তাঁর শেষকৃত্যে অংশ নেওয়ার জন্য তাঁরা যুক্তরাজ্যে ফিরে আসেন। তবে আগামী মে মাসে হ্যারির বাবা চার্লসের রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে তাঁরা যোগ দেবেন কি না, তা বলেননি।

হ্যারি মেগানের আয়ের উৎস

রাজদায়িত্ব ত্যাগ করে যুক্তরাজ্য ছাড়ার পর হ্যারি ও মেগান রাজপরিবার থেকে কোনো অর্থ নেননি। তাঁরা মূলত সাসেক্সরয়েল, ইনস্টাগ্রাম, টিভি অনুষ্ঠান, পডকাস্ট ও বই থেকে অর্থ আয় করেন।হ্যারি ও মেগানের মিডিয়া কোম্পানি দ্য সাসেক্স ও আর্চওয়েল প্রোডাকশন নেটফ্লিক্সের জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠান তৈরি করে। এ থেকে তাঁরা মিলিয়ন ডলার আয় করেন বলে মনে করা হয়। এর মধ্যে হ্যারি ও মেগান ডকুমেন্টারি সিরিজ রয়েছে, যেখানে এ দম্পতি রাজপরিবারের জীবন সম্পর্কে কথা বলেছেন। আর্চওয়েল স্পটিফাইয়ের জন্য পডকাস্টও তৈরি করে। এ থেকেও আয় হয় তাঁদের।২০২১ সালের মার্চে জনপ্রিয় মার্কিন উপস্থাপক অপরাহ উইনফ্রে এই দম্পতির সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। তবে সে সময় বলা হয়েছিল, এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার জন্য তাঁদের কোনো অর্থ দেওয়া হয়নি।গত ১০ জানুয়ারি হ্যারির আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘স্পেয়ার’ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ হয়। বইটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশের সময় প্রকাশক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যথাক্রমে ১৫ লাখ ডলার ও ৩ লাখ পাউন্ড দাতব্য সংস্থা সেন্টেবেল ও ওয়েলচাইল্ডকে দান করা হবে।বইটি বিক্রিতে রেকর্ড গড়ে। এতে রাজপরিবারে নিজের বঞ্চনার কথাও তুলে ধরেছেন হ্যারি। তবে বইয়ের বেশির ভাগ বিষয় আগেই ফাঁস হয়ে যায়। ওই ফাঁস হওয়া তথ্যে দাবি করা হয়েছিল, হ্যারিকে তাঁর ভাই প্রিন্স উইলিয়াম শারীরিকভাবে আক্রমণ করেছিলেন।২০২১ সালের মার্চে হ্যারি ক্যালিফোর্নিয়ায় বেটারআপ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে চিফ ইমপ্যাক্ট অফিসার হিসেবে নিয়োগ পান। এ থেকেও আয় হয় তাঁর।

রাজদায়িত্ব ছেড়ে যা হারিয়েছেন হ্যারিমেগান

রাজদায়িত্ব ত্যাগ করে রাজপরিবার থেকে পাওয়া বার্ষিক আয় হারিয়েছেন এই দম্পতি। রয়্যাল কর্মকর্তা হিসেবে হ্যারি ও মেগান তাঁদের বার্ষিক আয়ের ৯৫ শতাংশ পেতেন হ্যারির বাবা তৎকালীন প্রিন্স অব ওয়েলসের কাছ থেকে। বিয়ের প্রথম বছর (২০১৮-১৯) সরকারি দায়িত্ব ও কিছু ব্যক্তিগত খরচের জন্য তাঁদের ৫০ লাখ পাউন্ডের বেশি অর্থ দেওয়া হয়।পরে হ্যারি ও মেগানের আর্থিক স্বাধীনতার জন্য বাবা চার্লস ‘যথেষ্ট পরিমাণ’ অর্থ দিয়েছিলেন। ডাচি অব কর্নওয়েলের তথ্য বলছে, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে এই দম্পতি প্রিন্স উইলিয়াম, কেটসহ ৪৫ লাখ পাউন্ড রাজপরিবার থেকে পেয়েছেন। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘সেই অর্থায়ন (তখন) বন্ধ হয়ে গেছে।’রাজদায়িত্ব ত্যাগ করায় ডিউক ও ডাচেস অব সাসেক্সের নিরাপত্তারক্ষীদের সরিয়ে নেওয়া হয়।

ফ্রগমোর কটেজ

উইন্ডসর প্রাসাদের ফ্রগমোর কটেজটি হ্যারি ও মেগানের বিয়ের সময় ২০১৮ সালে প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ উপহার দিয়েছিলেন। তাঁদের থাকার জন্য ক্রাউন এস্টেট ২৪ লাখ ডলার খরচ করে বাড়িটি সংস্কার করেছিল। দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করার সময় এই পরিমাণ অর্থ তাঁদের শোধ করা হয়েছিল।উইন্ডসর প্রাসাদের ফ্রগমোর কটেজটি হ্যারি ও মেগানের বিয়ের সময় ২০১৮ সালে প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ উপহার দিয়েছিলেন।হ্যারি ও মেগান এ বাড়িকেই যুক্তরাজ্যে তাঁদের নিজস্ব আবাসস্থল হিসেবে রেখেছিলেন। গত বছর সেখানে তাঁদের মেয়ে লিলিবেতের প্রথম জন্মদিনও উদ্‌যাপন করেছেন তাঁরা।কিন্তু এই দম্পতির একজন মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন, বাকিমহ্যাম প্যালেস তাঁদের ফ্রগমোর কটেজ ছেড়ে দিতে বলেছে।এর আগে দ্য সানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রিন্স হ্যারির আত্মজীবনী ‘স্পেয়ার’ প্রকাশিত হওয়ার কয়েক দিন পরই এ দম্পতিকে বাড়িটি খালি করে দিতে বলা হয়। বাড়িটি এখন রাজা তৃতীয় চার্লসের ভাই ডিউক অব ইয়র্ক প্রিন্স অ্যান্ড্রুকে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

আয়ের আর কি উৎস আছে?

১৯৯৭ সালে প্রিন্স উইলিয়াম ও হ্যারির মা প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যু হয়। এরপর মায়ের ১ কোটি ৩০ লাখ পাউন্ড মূল্যের সম্পদের সিংহভাগ পেয়েছিলেন।হ্যারি এক সাক্ষাৎকারে অপরাহ উইনফ্রেকে বলেছিলেন, উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া এ অর্থ তাঁদের যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পথ সুগম করেছে। তিনি বলেছিলেন, ‘আমার জন্য মা যা রেখে গেছেন, তা আমি পেয়েছি। সেটা ছাড়া আমাদের এখানে আসা সম্ভব হতো না।’
হ্যারি তাঁর দাদি প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মায়ের কাছ থেকেও উত্তরাধিকারসূত্রে বিপুল অর্থ পেয়েছেন বলেও মনে করা হয়। তবে প্রয়াত রানি তাঁর জন্য কোনো অর্থ রেখে গেছেন কি না, তা এখনো জানা যায়নি।ডাচেস অব সাসেক্স মেগান অভিনেত্রী ছিলেন। সে সময় তিনি প্রতি নাটকের এক পর্বের জন্য ৫০ হাজার ডলার করে পারিশ্রমিক পেতেন। শতাধিক পর্বে তাঁকে অভিনয় করতে দেখা গেছে। মেগান একটি লাইফস্টাইল ব্লগও চালাতেন এবং কানাডিয়ান ফ্যাশন ব্র্যান্ডের জন্য ডিজাইন করতেন।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য

error: <b>Alert: </b>Content selection is disabled!!