Saturday, December 13, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদকোনও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র থাকবে না: নেতানিয়াহু

কোনও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র থাকবে না: নেতানিয়াহু

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, ১৩ সেপ্টেম্বর।। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আনুষ্ঠানিকভাবে পশ্চিম তীরে দখলকৃত এলাকায় নতুন বসতি সম্প্রসারণ পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছেন, যা ভবিষ্যতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনাকে কার্যত শেষ করে দিতে পারে।

বৃহস্পতিবার তিনি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে একটি চুক্তি সই করেছেন। ইসরায়েলের এ পদক্ষেপ পশ্চিম তীরকে দ্বিখণ্ডিত করে দেবে।

চুক্তি সইয়ের পর নেতানিয়াহু জেরুজালেমের পূর্বে মালে আদুমিম বসতিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রেখেছেন। সেখানে তিনি বলেন, “আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে যাচ্ছি যে, কোনও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র থাকবে না। এই ভূমি আমাদের।”

নেতানিয়াহু জানান, এই নগরীর জনসংখ্যা দ্বিগুণ করা হবে। ১২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ওই এলাকায় গড়ে ওঠা ইহুদি বসতি “ইস্ট ওয়ান” বা “ই১” নামে পরিচিত।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, সেখানে ৩ হাজার ৪০০ নতুন বাড়ি নির্মাণ করা হবে। এতে পশ্চিম তীরের বড় একটি অংশ দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। তাছাড়া, আশপাশে ছড়িয়ে থাকা হাজার হাজার ইসরায়েলি বসতির সঙ্গে এই এলাকার সংযোগ তৈরি হবে।

পূর্ব জেরুজালেমকে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে দেখে আসছে ফিলিস্তিনিরা। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, ১৯৬৭ সাল থেকে পশ্চিম তীরে গড়ে ওঠা সব ইহুদি বসতিই অবৈধ।

আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ তাদেরকে পশ্চিম তীর ও ইসরায়েলে কাজ করতে দিচ্ছে না। ফলে সংবাদ সংস্থাটির আম্মান থেকে পাঠানো সংবাদে জানানো হয়, এই সম্প্রসারণ পরিকল্পনা বিতর্কিত।

কারণ, এর ফলে পশ্চিম তীর থেকে পূর্ব জেরুজালেমের দিকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবে। আর তেমন হলে ভবিষ্যতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের যে কোনও সম্ভাবনা ভেস্তে যাবে।

ফিলিস্তিনের প্রতিক্রিয়া:

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনা বৃহস্পতিবার বলেন, পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনই এ অঞ্চলে শান্তির একমাত্র পথ। নেতানিয়াহুর পদক্ষেপকে তিনি ‘সমগ্র অঞ্চলকে গভীর সংকটে ঠেলে দেওয়া’ আখ্যা দেন।

রুদেইনা বলেন, ইতোমধ্যে জাতিসংঘের ১৪৯টি সদস্য দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। যারা এখনও স্বীকৃতি দেয়নি তাদের অবিলম্বে তা করার আহ্বান জানান তিনি।

দীর্ঘদিনের অবস্থান:

নেতানিয়াহু বহুদিন ধরেই অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূমিতে বসতি স্থাপনের পক্ষে এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি প্রচেষ্টার বিরোধী। ১৯৯০-এর দশকে স্বাক্ষরিত অসলো চুক্তির বিরুদ্ধেও তিনি সরব ছিলেন।

২০০১ সালে গোপনে ধারণকৃত এক ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, “আমি কার্যত ওই চুক্তির ইতি টেনে দিয়েছি।”

১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম মেয়াদে নেতানিয়াহু পূর্ব জেরুজালেমে হার হোমা বসতি স্থাপনে ভূমিকা রাখেন। সে সময় তিনি প্রকাশ্যে বলেছিলেন, তার আমলে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কখনও গড়ে উঠবে না।

সম্প্রতি ইসরায়েলের কট্টর-ডানপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ বলেছেন, ই১-এর মতো বসতি ফিলিস্তিনকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলতে সহায়ক হবে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইসরায়েলকে পশ্চিম তীর থেকে সেনা প্রত্যাহার, নতুন বসতি নির্মাণ বন্ধ ও দখলকৃত ভূমি থেকে বসতি সরানোর আহ্বান জানায়। একশর বেশি দেশ ওই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়।

এর আগে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত বলেছিল, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের অবস্থান অবৈধ এবং অবিলম্বে নতুন বসতি কার্যক্রম বন্ধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে তাদের। নেতানিয়াহু এটিকে ‘মিথ্যার সিদ্ধান্ত’ বলে অভিহিত করেন।

বৃহস্পতিবার জার্মানি জানায়, তারা ফ্রান্সের নেতৃত্বে আনা ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের প্রস্তাবকে সমর্থন করবে এবং জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এ সপ্তাহে উত্থাপিত প্রস্তাবে ভোট দেবে।

বেলজিয়াম, ফ্রান্স ও মাল্টা এ মাসেই জাতিসংঘে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও যুক্তরাজ্যের অবস্থান এখনও অস্পষ্ট।

পশ্চিম তীর ও গাজায় উত্তেজনা:

পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণের ঘোষণা এসেছে সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার মধ্যে।

সোমবার জেরুজালেমে রামত জংশনে একটি বাসস্ট্যান্ডে দুজন ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীর হামলায় ছয়জন নিহত হয়। পরে ইসরায়েলি বাহিনী পশ্চিম তীরে সন্দেহভাজনদের বাড়ি ধ্বংস করে।

বৃহস্পতিবার আল জাজিরা জানায়, পশ্চিম তীরের তুলকারেমে প্রায় ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ইসরায়েলি সেনারা। এর আগে এক হামলায় দুই সেনা সামান্য আহত হয়েছিল বলে জানিয়েছে হারেৎজ।

২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অন্তত ৬৪ হাজার ৬৫৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং এক লাখ ৬৩ হাজার ৫০৩ জন আহত হয়েছেন।

সেখানেও নেতানিয়াহু “স্বেচ্ছায় অভিবাসন” নামে পরিচিত জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির নীতি চালিয়ে যাচ্ছেন, যা সমালোচকদের ভাষায় জাতিগত নিধনের আরেক রূপ।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য