স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১৩ সেপ্টেম্বর : বর্তমান সরকারের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের জন্য কাজ করা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে দিশায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সেই নির্দেশিকায় মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে রাজ্য সরকারও। মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহারের পাশাপাশি মানুষের সমস্যা শুনতে হবে জনপ্রতিনিধিদের। তবেই আমাদের উপর মানুষের আস্থা থাকবে।
শুক্রবার বিলোনিয়ার শচীন দেববর্মণ অডিটরিয়ামে আয়োজিত দক্ষিণ ত্রিপুরা জিলা পরিষদের নবনির্বাচিত সদস্যদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। এই অনুষ্ঠানে জেলা সভাধিপতি হিসেবে দীপক দত্ত ও সহ-সভাধিপতি হিসেবে তপন দেবনাথ নিযুক্ত হয়েছেন।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা জিলা পরিষদের নবনির্বাচিত ১৭ জন প্রতিনিধিকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, আজ একটা অত্যন্ত আনন্দের দিন। রাজ্যের ৮টি জেলাতে শপথ গ্রহণ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। ভারতবর্ষ এমন একটি গণতান্ত্রিক দেশ যেখানে সংসদ থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত পর্যন্ত গণতন্ত্র প্রতিফলিত হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিভিন্ন জনমুখী পরিকল্পনা এবং প্রকল্পের সুফল সমাজের অন্তিম ব্যক্তি পর্যন্ত পৌঁছাতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। এই ত্রি-স্তর পঞ্চায়েতের মাধ্যমে অন্তিম ব্যক্তি পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পের সুফল পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের সকলের। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করছেন সেই নির্দেশনায় ত্রিপুরা সরকারও কাজ করছে। আমাদেরও দায়িত্ব রয়েছে যাতে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করি। বিগত সরকারের রাজত্ব আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। স্বচ্ছতার নামে বিভিন্ন ধরণের ঘটনা আমরা দেখেছি। কিন্তু এখন তাদের তর সইছে না। কারণ তাদের কাছে এখন আর কোন ইস্যু নেই।
তাই নানারকমভাবে ইস্যু তৈরি করার চেষ্টা করে তারা। যখন নির্বাচনে তারা পরাজিত হয় তখন দেখা যায় কোথাও তাদের স্থান নেই। তারপরে বলছেন ত্রিপুরায় নাকি গণতন্ত্র নেই। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি একটা কথাই বলবো – তুমি যদি অধম হও, তাহলে আমি কেন উত্তম হইবো না। আর সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড়। আমরা দেখেছি নিজের স্বার্থ যখন আদায় হয়ে যায় তখন নানাভাবে চেষ্টা করে যে কিছু একটা বলার। মানুষ এখন কোন অবস্থায় তাদের গ্রহণ করতে চায় না। সেটা সবাই জানে। শুধু নানারকম অঙ্গভঙ্গি করে কথা বললেই চলে না। মানুষের জন্য কাজ করতে হয়। আমরা সেই দিশায় কাজ করছি। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের জন্য কাজ করা। আজ এখানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা যারা শপথ নিয়েছেন তাদের একটাই অনুরোধ করবো যে ঈশ্বরের কারণে আজকে আপনারা এই সুযোগ পেয়েছেন। কাজেই আপনার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হোন। মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে। মানুষ আপনাদের কাছে আসবে। কারণ মানুষের নানারকম সমস্যা হয়। মানুষের অভাব অভিযোগ, দুঃখ শুনতে হবে। তবেই মানুষ আমাদের উপর আস্থা রাখবেন।
রাজ্যের সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, বন্যা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রতিটা জায়গায় মানুষ সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসছেন। একটা ছোট শিশুও তার সঞ্চিত ২ হাজার টাকা নিয়ে সাহায্য দিতে আমার কাছে এসেছে। বন্যা পরিস্থিতিতে গত মাসের ২০ তারিখ দিল্লি থেকে রাজ্যে এসে সমস্ত আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করি। কারণ ত্রাণ বিতরণ কমিটির চেয়ারম্যান আমি। রাত ১০টার সময়েও মুখ্যসচিব সহ অন্যান্য আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। এই পরিস্থিতিতে আমি হেলিকপ্টারে বিভিন্ন বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করি।
তিন দিন ধরে বিনিদ্র থেকে সমস্ত পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে হয়েছে আমাদের। জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গেও নিয়মিত কথা হয়েছে। এর পাশাপাশি গোটা বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে অবহিত করলে তিনি বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বায়ুসেনার হেলিকপ্টার, এনডিআরএফ টিম, রাবার বোট সহ আনুষাঙ্গিক যাবতীয় সাজসরঞ্জাম দ্রুত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। ডাঃ সাহা বলেন, কাজের নিরিখে যে ভালো কাজ করবেন তাকেই আমি বিশ্বাস করি। এটাই হচ্ছে আসল। কেউ ভুল করলে সেটা মেনে নেবো এমন রাজনীতি আমরা করি না। তিনি বলেন, একজন অবসরপ্রাপ্ত বয়স্ক লোক এসে বললেন আমি মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে কিছু অনুদান দিতে চায়। এরপর ত্রাণ দিয়ে তিনি বললেন এই যে টাকাটা আমি দিলাম এখন মনে হচ্ছে এটার সঠিক কাজ হবে। এরজন্য আপনার কাছে দিলাম। এই যে বিশ্বাস মানুষের মধ্যে রয়েছে সেটাই আমাদের বড় প্রাপ্তি। তাই ত্রি-স্তর পঞ্চায়েতে জনপ্রতিনিধিদের আরও দায়িত্ব নিয়ে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মার্গদর্শনে কাজ করছে রাজ্য সরকারও। এই সরকার স্বচ্ছতার সঙ্গে মানুষের জন্য কাজ করছে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমবায় মন্ত্রী শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া, বিধায়ক স্বপ্না মজুমদার, বিধায়ক প্রমোদ রিয়াং, বিধায়ক মৈলাফ্রু মগ, গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের সচিব সন্দীপ রাঠোর, দক্ষিণ জেলার জেলাশাসক ও সমাহর্তা স্মিতা মল, পঞ্চায়েত দপ্তরের অধিকর্তা প্রসূন দে সহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের আধিকারিকগণ।