স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২ জানুয়ারি : সোমবার সকালে বিধানসভায় শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয় মন্ত্রিসভার বরিষ্ঠ সদস্য তথা রাজস্ব ও বনদপ্তরের মন্ত্রী নরেন্দ্র চন্দ্র দেববর্মাকে। রবিবার দুপুর ২ টা ৪৭ মিনিটে জিবি হাসপাতালে বার্ধক্য জনিত রোগে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তারপর মৃরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় আগরতলা কৃষ্ণনগর স্থিত বাসভবনে। খবর পেয়ে সেদিন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার সহ বহু রাজনৈতিক নেতৃত্ব সহ গুণীজনেরা গিয়ে শ্রদ্ধা জানান। তারপর সোমবার সকালে দশটা নাগাদ অল ইন্ডিয়া রেডিও সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয় মন্ত্রী এন সি দেববর্মার মরদেহ। সেখানে শ্রদ্ধা জানানোর পর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বিধানসভায়। বিধানসভার অধ্যক্ষ রতন চক্রবর্তী, বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন, বিধায়ক রতন দাস, প্রাক্তন বিধায়ক আশীষ কুমার সাহা, প্রাক্তন বিধায়ক বৃষকেতু দেববর্মা, বিধায়ক অরুণ চন্দ্র ভৌমিক, বিধায়ক প্রশান্ত দেববর্মা সহ অন্যান্য বিধানসভার সদস্যরা প্রয়াত মন্ত্রীর প্রতি অন্তিম শ্রদ্ধা জানান।
অধ্যক্ষ রতন চক্রবর্তী জানান, মন্ত্রীর প্রয়াণে গভীরভাবে শোকাহত তিনি। মন্ত্রী এন সি দেববর্মা অত্যন্ত কৌশল ও বুদ্ধির সাথে দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তরগুলি পরিচালনা করেছিলেন। তিনি বর্তমান সরকারের শরিক দল আই পি এফ টি-র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ২০১৮ সালে সরকার পরিবর্তনের তাঁর বিশেষ ভূমিকা ছিল। তাই এন সি দেববর্মার প্রয়াণে পাহাড় এবং সমতলে এক শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। ঈশ্বরের কাছে সৎগতি কামনা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
অপরদিকে কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন জানান, মন্ত্রী এন সি দেববর্মার মধ্যে মানুষের জন্য কিছু করার চিন্তাভাবনা সব সময় থাকতো। আজীবন মানুষের স্বার্থে কাজ করেছেন তিনি। কিন্তু তাঁর প্রয়ানে সকলে মর্মাহত বলে জানান শ্রী বর্মন।
তারপর মন্ত্রীর মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় সচিবালয়ে। সচিবালয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা, মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়, বিধায়ক দিলীপ দাস, মুখ্য সচিব জে কে সিনহা, রাজ্য পুলিশের মহা নির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন, জেলাশাসক দেবপ্রিয় বর্ধণ সহ অন্যান্য অফিসারেরাও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে প্রয়াত মন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
মুখ্যমন্ত্রী সংবাদ মাধ্যমে মুখোমুখি হয়ে জানান, মন্ত্রিসভায় সদস্য হয়ে তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে নিজ দপ্তর পরিচালনা করেছিলেন। পাশাপাশি মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যদের তিনি সবসময় পরামর্শ দিতেন। জাতি জনজাতির নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। তাঁর প্রয়াণে আইপিএফটির যেমন ক্ষতি হয়েছে তেমনি সারা রাজ্যবাসীরও ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি পূরণ করা সম্ভব নয়। মন্ত্রী এন সি দেববর্মার আত্মার সদগতি কামনা করা হচ্ছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। এর পাশাপাশি পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
তারপর মন্ত্রীর মরদেহ পৈতৃক ভিটা মাটি তেলিয়ামুড়া মহারানী গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। মন্ত্রীর মরদেহ পিতৃক ভিতে মাটিতে আনার খবর পেয়ে দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসে শত শত মানুষ। কারণ তিনি শুধু বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ নয়, একজন দক্ষ লেখক ও সাহিত্যিক ও ছিলেন। কান্নায় ভেঙে পড়ে অনেকে। চোখের জলে শেষ বিদায় জানায় মন্ত্রী এন সি দেববর্মাকে। তারপর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পূর্ণ হয়।
বিগত ২০১৮ সালে বিজেপি’র দলের সাথে জোট হয়ে বিধানসভা নির্বাচনে টাকার চলা কেন্দ্র থেকে লড়াই করে সব থেকে অধিক ভোটে জয়লাভ করে বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি প্রথমবারের মতোই ২০১৮ সালে বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব পান। এবং রাজনীতিতে তিনি ছাপ রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।