স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা, ২০ সেপ্টেম্বর : উদয়পুরের কাঁকড়াবন থানার অন্তর্গত মির্জা এলাকার বাসিন্দা পঙ্কজ সরকার। পঙ্কজ সরকারের স্ত্রী অঞ্জলি সরকার। মির্জা বাজারে ছোট একটি দোকান করে সংসার চালায় পঙ্কজ সরকার। জানা যায় পঙ্কজ সরকারের স্ত্রী অঞ্জলি সরকারকে বেশ কিছুদিন ধরে ব্ল্যাকমেইল করে আসছিল এলাকার বিধায়ক জিতেন্দ্র মজুমদারের ভাইয়ের ছেলে মান্না মজুমদারের বন্ধু লিটন দাস। অঞ্জলি সরকারকে তার আপত্তিকর ছবি দেখিয়ে তার সাথে সম্পর্কে লিপ্ত হতে বাধ্য করে। বিষয়টি জানাজানি হয়ে যাওয়ার পর অঞ্জলি সরকার সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে। এই নিয়ে এলাকায় শালিসি সভাও হয়। তারপর কিছুদিন সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও সম্প্রতি লিটন দাস পুনঃরায় তার সাথে সম্পর্ক করার জন্য অঞ্জলি সরকারকে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে।
বিষয়টি জানা জানি হওয়ার পর পঙ্কজ সরকার তার প্রতিবাদ জানায়। কিন্তু বিধায়কের ভাইয়ের ছেলে মান্না মজুমদার তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে পঙ্কজ সরকারের দোকানে গিয়ে পঙ্কজ সরকারকে মারধর করে। পরবর্তী সময় পঙ্কজ সরকার কাঁকড়াবন থানায় গিয়ে অভিযোগ জানায়। থানা থেকে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার সময় পঙ্কজ সরকারকে গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা করে অভিযুক্তরা। রাতে বাড়িতে গিয়ে পঙ্কজ সরকার খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। বাড়ির অপর ঘড়ে ঘুমায় অঞ্জলি সরকার। শুক্রবার ভোরে অঞ্জলি সরকারের অগ্নিদগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার হয় বাড়ির অদূরে মির্জা বাজার থেকে। অঞ্জলি সরকারের স্বামী পঙ্কজ সরকারের অভিযোগ লিটন দাস, বিধায়কের ভাইয়ের ছেলে মান্না মজুমদার সহ তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা এই ঘটনা সংগঠিত করেছে। এই ঘটনার বিষয়ে জানার পর শনিবার নিহত অঞ্জলি সরকারের মির্জা স্থিত বাড়িতে যান অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়, বিধায়ক অভিষেক দেবরায় সহ অন্যান্যরা।
মন্ত্রী জানান যারাই ঘটনার সাথে জড়িত সবার শাস্তি হবে। সে যেই হোক না কেন। অপরদিকে কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ, বীরজিৎ সিনহা, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আশিস সাহা সহ কংগ্রেসের এক প্রতিনিধি দল মৃত অঞ্জলি সরকারের বাড়িতে ছুটে যান। সেখানে গিয়ে তারা মৃত অঞ্জলি সরকারের স্বামী ও ছেলে মেয়ের সাথে কথা বলে গোটা ঘটনার বিষয়ে অবগত হন। তারপর তারা ছুটে যান গোমতী জেলার পুলিস সুপারের কার্যালয়ে। সেখানে গিয়ে তারা কথা বলেন জেলা পুলিশ সুপারের সাথে। দাবি জানান অঞ্জলি সরকারের এই মৃত্যুর ঘটনার সাথে যুক্ত অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তারের। জেলা পুলিস সুপারের সাথে সাক্ষাৎ-এর পর বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ ও বিধায়ক বীরজিৎ সিনহা সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে জানান দাবি জানানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর রাজ্য সফরের পূর্বে যেন অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়। অন্যথায় প্রদেশ কংগ্রেস ও গোমতী জেলা কংগ্রেস রাস্তায় নেমে প্রধানমন্ত্রীর নিকট মহিলাদের বিচার চাওয়া হবে। পাশাপাশি সেই দিনের গোটা ঘটনা এড়ানো যেত। জদি কাঁকড়াবন থানার পুলিস সময় মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করতো। তাই কাঁকড়াবন থানার ওসিকে বরখাস্তের দাবি জানানো হয়েছে। জানা যায় অঞ্জলি সরকারের মৃত্যুর পর ইতিমধ্যে কাঁকড়াবন থানার পুলিশ এক এস.আই-কে চাকুরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। মূলত এসআই-কে বরখাস্ত করে পুলিশ কাঁকড়াবন থানার ওসির দোষকে ধামা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। স্থানীয় বিধায়কের ভাইয়ের ছেলে এই ঘটনার সাথে যুক্ত। তাই কাঁকড়াবন থানার পুলিশ এখনো পর্যন্ত নিষ্ক্রিয় ভুমিকা গ্রহণ করে চলছে। তবে বিরোধীরা ২৩ সেপ্টেম্বর বিধানসভায় এই বিষয়টি নিয়ে সরব হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তার আগে ২২ সেপ্টেম্বর রাজ্যে আসবেন প্রধানমন্ত্রী। এখন দেখার প্রধানমন্ত্রীর রাজ্য সফরের আগে পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে কিনা। অপরদিকে বিধানসভায় উত্থাপিত হবে মির্জার অঞ্জলি সরকারের খুনের ঘটনা। মৃতার বাড়িতে গিয়ে জানান বাম প্রতিনিধি দল। মির্জায় গৃহবধূ অঞ্জলী সরকারের খুনের ঘটনায় শোকস্তব্ধ পরিবারকে সমবেদনা জানাতে শনিবার বিকেলে বামফ্রন্ট বিধায়কদের একটি প্রতিনিধি দল অঞ্জলী সরকারের বাড়িতে যান। প্রতিনিধি দলে ছিলেন উপ বিরোধী দলনেতা শ্যামল চক্রবর্তী, বিধায়ক শৈলেন্দ্র চন্দ্র নাথ, রামু দাস ও সুদীপ সরকার। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সিপিআইএম -এর গোমতী জেলা সম্পাদক পরিমল দেবনাথ, উদয়পুর মহকুমা সম্পাদক দিলীপ দত্ত, নিতাই বিশ্বাস, নিখিল দাস সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
তারা নিহতের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি তোলেন। পাশাপাশি রাজ্যে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরকারকে তীব্র সমালোচনাও করেন।

