স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,২৬ জুন: ২০০৭ সালে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শিরোপা জয়ের পর দেশের মাঠে ২০১১ বিশ্বকাপ ও ২০১৩ সালে ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। তবে গত ১০ বছরে আর কোনো আইসিসি ট্রফি তাদের ধরা দেয়নি। বিশ্বের সবচেয়ে জমজমাট ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের আসর তাদের দেশে হলেও আইপিএল জমানায় এই বিশ্বকাপের শিরোপা তারা পায়নি একবারও।তবে শিরোপা না পেলেও ধারাবাহিকতা তাদের দারুণ। বিশ্ব আসরগুলোর ফাইনাল, সেমি-ফাইনালে ভারতের উপস্থিতি নিয়মিতই। ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল খেলেছে তারা। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দুটিই আসরেই তারা পা রেখেছে ফাইনালে। সেমি-ফাইনাল খেলেছে ২০১৫ ও ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে এবং ২০১৬ ও ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। এই ১০ বছরে কেবল ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই তারা শেষ চার পর্যন্ত যেতে পারেনি।ক্লাইভ লয়েড তুলে ধরলেন ভারতের এই ধারাবাহিকতার কথাই। ভারতীয় ওয়েবসাইট রেভস্পোর্টজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দুটি বিশ্বকাপজয়ী ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক বললেন, শেষের বাধা পেরিয়ে ভারত শিরোপার দেখাও পাবে দ্রুতই।“আপনারা তো কাছাকাছি পৌঁছেই যাচ্ছেন। সেমি-ফাইনাল ও ফাইনালে নিয়মিত খেলছেন। বেশ কটি ফাইনালে পা রেখেছেন। আমার মনে হয়, ভারতের ভবিষ্যৎ এখন ভালো। কারণ, এখন আইপিএল আছে তাদের।”
“৫০ ওভারের ক্রিকেটে আপনারা ভালো দল, এটা বিশ্বাস করার সব কারণই আছে। আপনাদের টেস্ট দল দুর্দান্ত। বড় টুর্নামেন্টে শিরোপাও আপনাদের জন্য স্রেফ সময়ের ব্যাপার। দুনিয়াতে সবকিছুই একটি চক্র মেনে চলে এবং আমি নিশ্চিত, সামনেও এভাবেই চলবে।”ভারতের আইসিসি ট্রফি খরাই শুধু নয়, আইপিএল নিয়ে আরও অনেক বিতর্কও আছে। প্রতি বছর সেখানে ঝাঁকে ঝাঁকে ক্রিকেটার খেলতে যান। বিশ্বজুড়েই অনেক ক্রিকেটারের স্বপ্ন এখন আইপিএল খেলা। পাশাপাশি আরও অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ এখন দাপটে চলছে, আরও লিগ আসছে। সব মিলিয়ে দেশ বনাম ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ বিতর্ক চলছে ক্রমাগত। নিজ দেশের বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে সরে গিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট বেছে নেওয়া ক্রিকেটারদের সংখ্যাও বাড়ছে।লয়েডদের সময়ে আইপিএল ছিল না। তবে সত্তরের দশকের শেষ দিকে তিনিসহ বিশ্ব ক্রিকেটের আরও অনেক শীর্ষ তারকা নাম লিখিয়েছিলেন বিদ্রোহী ক্যারি পেকার ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট সিরিজে। সেই সময় এটা নিয়েও কম তোলপাড় হয়নি ক্রিকেট বিশ্বে।লয়েড নিজেদের সেই সময়ের সিদ্ধান্তের পেছনে যুক্তি তুলে ধরলেন। এখনকার ক্রিকেটারদের আইপিএল খেলা নিয়েও তার আপত্তি নেই। বরং আইপিএলের জন্য আলাদা সময় নির্ধারিত করা জরুরি বলে মনে করেন সর্বকালের সেরা অধিনায়কদের একজন বলে বিবেচিত এই ক্যারিবিয়ান।
“আমার মনে হয়, আমরা কেরি প্যাকার সিরিজে গিয়েছিলাম, কারণ আমরা নিজেদের সঠিক মূল্য জানতাম না। এখনকার ছেলেরা জানে তাদের মূল্য কতটা। আমার মতে, আইপিএল যদি তাদের জীবনে এতটা গুরুত্বপূর্ণ অংশই হয়ে থাকে, তাহলে একটি উইন্ডো দিলেই হয়, যেন তারা আইপিএল খেলতে পারে।”“উইন্ডো দিতে পারলে দারুণ হবে। কারণ, জীবনযাপনের জন্য ভালো অঙ্কের অর্থ তারা সেখান থেকে আয় করতে পারছে। ভুলে যাবেন না, জীবনের সেরা অংশ, সেরা দিনগুলি তারা এই খেলায় ঢেলে দিচ্ছে। সেটার উপযুক্ত পারিশ্রমিক তারা কেন পাবে না?”ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ১১০ টেস্ট ও ৮৭ ওয়ানডে খেলা এই ব্যাটসম্যান তুলে ধরলেন বাস্কেটবল, ফুটবলের বাস্তবতাও।“মাইকেল জর্ডান এবং এত সব ফুটবলার, তারা তো প্রতি মাসে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার আয় করছে। এটা নিয়ে কেউ কোনো কথা বলে না। ক্রিকেট কেন ভিন্ন হবে?”জোর করে বা নিয়মের বেড়াজালে ক্রিকেটারদের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলা থেকে বিরত রাখা যাবে না বলেই মনে করেন লয়েড। পাশাপশি সেরা ক্রিকেটারদের তিনি দেখতে চান দেশের হয়ে খেলতেও। তাই প্রশাসকদেরকে তিনি বললেন ক্রিকেটারদের জন্য সহায়ক পরিবেশ গড়ে তুলতে।“তাদেরকে এটা থেকে আটকানোর কোনো উপায় নেই। তাদের ভবিষ্যৎ এখানে ভালো হচ্ছে। হ্যাঁ, গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, দেশের হয়ে খেলাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এটা করা উচিত নয়। আমাদের ভোগান্তি অনেক বেশি। কারণ, আমাদের জনসংখ্যাই স্রেফ ৫৫ লাখের মতো। আমরা যদি ২০ জন ক্রিকেটারকে গড়ে তুলি এবং তাদের ১০ জনকেই হারাতে হয়, তাহলে তো সেটি হয়ে যায় একটি ঘাটতি পূরণ করতে গিয়ে আরেকটির জন্ম দেওয়া। সেরকম কিছু কাম্য নয়।”“আমি চাই, আমাদের সেরা ক্রিকেটাররা আমাদের হয়ে খেলুক এবং চাই তারা যেন স্বেচ্ছায় মন খুলে খেলে। এমন একটি পরিবেশ তাই তৈরি করতে হবে, তারা যেন দেশের হয়ে খেলতে আগ্রহী থাকে।”