স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ৫ জুন : বেঙ্গালুরুতে পদপিষ্টের ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করল কর্নাটক হাই কোর্ট। পাশাপাশি, এই ঘটনায় সরকারের তরফ থেকে রিপোর্টও তলব করেছে আদালত। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টো ৩০ মিনিট নাগাদ ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ভি কামেশ্বর রাও এবং বিচারপতি সি এম যোশীর ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটির শুনানির সম্ভাবনা। এদিকে প্রশাসনের গাফিলতির অভিযোগ এনে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া, উপ মুখ্মন্ত্রী ডিকে শিবকুমার এবং কর্নাটক ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের কর্তাদের বিরুদ্ধে পুলিশে এফআইআর দায়ের করেছেন সামাজকর্মী স্নেহময়ী কৃষ্ণ। মর্মান্তিক এই ঘটনার পর ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিন সিদ্দারামাইয়া। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণভাবে এবার খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধেই দায়ের হল এইআইআর।
বুধবার কোহলিয়ানার সেলিব্রেশন চাক্ষুষ করতে সকাল থেকেই স্টেডিয়ামের বাইরে পালে-পালে জনতা জড়ো হচ্ছিলেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাস্তায় বাড়তে থাকে যানজট। যদিও স্টেডিয়ামের ভিতরে প্রবেশের আলাদা পাস দিয়েছিল কর্নাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন। কিন্তু, অনুষ্ঠান দেখতে কয়েক লক্ষ মানুষ চলে আসেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, প্রয়োজনের তুলনায় পুলিশকর্মীর সংখ্যা ছিল অনেক কম। ফলে ভিড় সামলাতে নাজেহাল অবস্থা হয় তাঁদের। স্টেডিয়ামের গেট খোলার সঙ্গে সঙ্গে অসংখ্য মানুষ দ্রুত ভিতরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ছবিটা মুহূর্তে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করলে। প্রাণে বাঁচতে সমর্থকরা একে-অপরকে টপকে পালাতে যান। সমস্যা আরও বাড়ে। আর তখনই ঘটে পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে।
সরকারের দাবি, বিনামূল্যে স্টেডিয়ামে প্রবেশের অনুমতি দেওয়াটাই কাল হয়েছে। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা মাত্র ৩৩ হাজার। কিন্তু সেখানে দু’তিন লক্ষের বেশি মানুষ প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন। তার ফলে স্টেডিয়ামের ছোট দরজা ভেঙে যায়। মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার দাবি, “এত মানুষ চলে আসবেন, আমরা ভাবতে পারিনি। স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা ৩৩ হাজার। সেখানে দু’তিন লক্ষ মানুষ ঢোকার চেষ্টা করছিলেন। স্টেডিয়ামের দরজাটাও ছোট। ভিড়ের ঠেলায় তা ভেঙে যায়। এই জমায়েত কেউ আশা করেননি।” ঘটনার দায় স্বীকার করে নিয়েছেন কর্নাটকের উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডিকে শিবকুমার। তিনি জানান, “পরিস্থিতি সামলানোর জন্য ৫০০০ নিরাপত্তারক্ষী ছিল। কিন্তু আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। তাঁর সাফাই, “বহু মানুষের ভিড় হয়েছে। সকলেই খুব আবেগপ্রবণ। কম বয়সি ছেলে-মেয়েদের উপর তো আর লাঠি চালানো যায় না।”
সরকার যাই বলুক, প্রত্যক্ষদর্শীরা পুরোপুরি অব্যবস্থাকেই দায়ী করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, ভিড় নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ পুলিশ, মেলেনি অ্যাম্বুল্যান্স, ছিল না ন্যূনতম ব্যবস্থাপনা। পর্যাপ্ত পুলিশ না থাকায় ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। আবার আহতদের দ্রুত হাসপাতালে পৌছে দেওয়ার মতো অ্যাম্বুল্যান্সও ছিল না। সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল কিছু ভিডিওতে দেখা যায় পুলিশকর্মীরা আহতদের কোলে করে নিয়েই ছুটছেন। আবার কাউকে কাউকে ওই ভিড়ের মধ্যেই সিপিআর দিতে হয়েছে। সব মিলিয়ে চূড়ান্ত গাফিলতির জায়গাটা জলের মতো পরিষ্কার।