স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ১১ এপ্রিল: উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অরুণাচল প্রদেশে ৪৮০০ কোটি রুপির উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন ভারতের প্রভাবশীল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ্। সোমবার প্রকল্প উদ্বোধনের পর শাহ্ বলেছেন, নতুন এই প্রকল্প অরক্ষিত সীমান্তের নিরাপত্তা বাড়াবে।ভারতের এই রাজ্যটিকে চীন তাদের ভূখণ্ডের অংশ বলে দাবি করে আসছে। বেইজিং দৃঢ়ভাবে শাহের পরিকল্পিত সফরের বিরোধিতা করে বলেছিল, ওই অঞ্চলে তার তৎপরতা চীনের ভূখণ্ডগত সার্বভৌমত্বের লংঘন। কিন্তু চীনের আপত্তি উপেক্ষা করেই শাহ্ ওই এলাকা সফর করেন।নয়া দিল্লির এই উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় চীন সীমান্তবর্তী চার রাজ্য ও একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রায় তিন হাজার গ্রাম থাকছে; সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো থেকে লোকজনের অন্যত্র চলে যাওয়া রোধে এই কর্মসূচি সাহায্য করবে বলেও শাহ্ মন্তব্য করেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কেউ যেন ভারতের সীমান্তে চোখ দিতে বা এর জমি জবরদখল করতে না পারে ভারতীয় সেনারা তা নিশ্চিত করছে। চীনকে মোকাবেলায় ওই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই ভারতীয় সেনা মোতায়েন রয়েছে।২০২০ সালে হিমালয়ের পশ্চিমাংশে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ২৪ জন নিহত হওয়ার পর থেকে বেইজিং ও নয়া দিল্লির মধ্যে সম্পর্কে ব্যাপক টানাপোড়েন চলছে; সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অরুণাচলও সেই টানাপোড়েনের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে দুই পক্ষের সেনারা রাজ্যটির তাওয়াং সেক্টরে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছিল।অরুণাচলকে চীন তাদের দক্ষিণ তিব্বত বা ‘ঝাংনানের’ অংশ বিবেচনা করে সেখানকার ১১টি এলাকার নতুন নামকরণ করে গত সপ্তাহে একটি মানচিত্র প্রকাশ করলে ভারত এর কড়া প্রতিবাদ জানায়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘনিষ্ঠ অমিত শাহ্কে ভারতের এখনকার বিজেপি সরকারের দ্বিতীয় প্রভাবশালী নেতা মনে করা হয়। সোমবার অরুণাচল সফরে গিয়ে তিনি বলেন, সীমান্ত অঞ্চলের ভারতীয়রা শান্তিতে ঘুমাতে পারছেন সীমান্তে থাকা সেনাদের ‘সাহস ও ত্যাগের’ কারণে।“কেউ যেন আমাদের সীমান্তে চোখ দিতে না পারে তা নিশ্চিত করতে আছে তারা। আজ আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, আমাদের ভূখণ্ডে জবরদখল চালানোর দিন চলে গেছে,” চীন সীমান্তের মাইলখানেক দূরে অবস্থিত সবশেষ লোকালয়গুলোর অন্যতম আনজাও জেলার সীমান্তবর্তী কিবিথু গ্রামে এক জনসভায় বলেন শাহ্।
১৯৬২ সালে ভারত ও চীন স্বল্পস্থায়ী কিন্তু রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল; সেসময় চীনা বাহিনী যেসব এলাকায় প্রথমেই ঢুকে পড়েছিল, কিবিথু ছিল তার অন্যতম।শাহ বলেন, গ্রাম খালি হয়ে যাওয়া নিয়ে ১০ বছর আগেও উদ্বেগ ছিল। কিন্তু সোমবার তিনি যে ‘প্রাণবন্ত গ্রাম কর্মসূচির’ যাত্রা করলেন, তা সেসব গ্রামে ব্যাংকিং, বিদ্যুৎ, রান্নার গ্যাস, চাকরি এবং ভৌত ও ডিজিটাল সংযোগের সুবিধা দেবে।২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে মোদী সরকার চীনের সঙ্গে থাকা তিন হাজার ৮০০ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকাজুড়ে সামরিক-বেসামরিক নানান স্থাপনা গড়ে তুলতে লাখ লাখ ডলার ঢালছে, যা চীনকে তাঁতিয়ে দিচ্ছে বলে মত বিশ্লেষকদের।“ঝাংনান চীনের এলাকা। সেখানে ভারতীয় কর্মকর্তার সফর চীনের আঞ্চলিক সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন, এবং এটি সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য মোটেও সহায়ক হবে না,” সোমবার শাহ্-র অরুণাচল সফরের আগে এ নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে বলেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন।