স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ০১ মার্চ : কথা ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে খনি চুক্তি সাক্ষর করবেন ভলোদিমির জেলেনস্কি। সেই মতো সাদা বাড়ির অন্দরে সংবাদমাধ্যমের উপস্থিতিতে বসেছিল বৈঠক। তবে সে বৈঠকের করুণ পরিণতি ইতিমধ্যেই দেখে ফেলেছে বিশ্ব। আন্তর্জাতিক কূটনীতির ইতিহাসে যা বেনজির। দুপুরের খাবার খাওয়ার আগেই হোয়াইট হাউস থেকে রীতিমতো ‘ঘাড়ধাক্কা’ দিয়ে বের করে দেওয়া হয় জেলেনস্কিদের। শুক্রবার ‘অভিশপ্ত’ ওই ১৩৯ মিনিটে ঠিক কী কী হয়েছিল হোয়াইট হাউসে?
রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধে ট্রাম্পের আমেরিকা নীতি যে বদলে গিয়েছে তার আভাষ আগে থেকেই মিলছিল। সরাসরি জেলেনস্কিকে ‘একনায়ক’ বলে তোপ দেগেছিলেন ট্রাম্প। এরইমাঝে শুক্রবার হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জেলেনস্কি। শুরুতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে অভিবাদনে কোনও খামতি রাখেননি ট্রাম্প। কালো এসইউভি থেকে জেলেনস্কি নেমে আসার সময় তাঁর পোশাক নজরে পড়ে সকলের। প্রথামাফিক স্যুটের বদলে ছিল অত্যন্ত সাদামাটা পোশাক। যা দেখে ব্যাঙ্গাত্মক সুরে ট্রাম্প বলেন, “আপনারা সকলে অত্যন্ত সাজগোজ করে আছেন।”
এরপর হোয়াইট হাউসের বৈঠকে আলোচনার প্রথম ৪০ মিনিট অত্যন্ত সুস্থভাবেই কাটে। খনিজ চুক্তি সাক্ষর করতে বিশেষ ব্যবস্থাও করে রেখেছিল হোয়াইট হাউস। আলোচনার মাঝেই জেলেনস্কি যুদ্ধ থামানোর বার্তা দিয়ে দৃঢ় কণ্ঠে ট্রাম্প বলেন, “আপনি হয় সন্ধি করুন, না হলে আমরা মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা থেকে বেরিয়ে যাব। আপনি প্রবল সমস্যার মুখে রয়েছে। এই যুদ্ধ আপনি জিতছেন না।” পাশাপাশি বলেন, “আপনার উচিত কৃতজ্ঞ থাকা। আমরা অনেক কিছুই দিয়েছি আপনাদের। আমরা না থাকলে দুই সপ্তাহ টিকতে পারতেন না।” এর জবাবে জেলেনস্কি অবাক হয়ে বলেন, যেখানে তাঁদের দেশে মানুষ মারা যাচ্ছেন, আগুনে জ্বলছে শহরগুলি, সেখানে আপসের কথা আসছে কোথা থেকে। একইসঙ্গে জেলেনস্কি বলেন, “আর এই ‘টিকে থাকার গল্প’ ঠিক একই সুরে পুতিনের মুখেও শুনেছি আমরা।” একইসঙ্গে বলেন, “আমরা নিজের দেশে রয়েছি এবং যুদ্ধে যথেষ্ট ভালো পরিস্থিতিতে আছি। আপনাদের সমর্থনের জন্য আমেরিকাকে ধন্যবাদও জানিয়েছি।” জেলেনস্কির মুখে এই মন্তব্য শুনে স্তম্ভিত হয়ে যান ট্রাম্প।
এই পরিস্থিতিতেই আলোচনায় প্রবেশ করেন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভেন্স। তিনি বলেন, “এই যুদ্ধ থামানোর জন্য প্রয়োজন কূটনৈতিক পদক্ষেপ।” পালটা জেলেনস্কি বলেন, “কী ধরনের কূটনীতির কথা বলছেন জেডি? কোন কূটনীতির কথা বলতে চাইছেন?” ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, “এমন কূটনীতি যা আপনার দেশকে ধ্বংস থেকে রক্ষা করবে।” জেলেনস্কিকে রীতিমতো তিরস্কার করে ভেন্স বলেন, “ওভাল অফিসে এসে মার্কিন মিডিয়ার সামনে আপনার এমন আচরণ অত্যন্ত অসম্মানজনক। এই যুদ্ধ থামাতে প্রেসিডেন্টের উদ্যোগকে ধন্যবাদ জানানো উচিত আপনার।”
এই পরিস্থিতিতে জেলেনস্কি কথা বলার চেষ্টা করলে তাঁকে থামিয়ে চিৎকার করে ট্রাম্প বলেন, “পরিস্থিতি যদি এমন অবস্থায় থাকে তবে কোনও সমাধান সূত্র বের হবে না। আপনি লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন নিয়ে জুয়া খেলছেন। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সঙ্গে জুয়া খেলছেন। ইউক্রেনের ভবিষ্যতের জন্যও আপনার নীতি ঠিক নয়।” এই উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় চলাকালীন ঘর থেকে সাংবাদিকদের বের করে দেন ট্রাম্প। তাঁরা বেরিয়ে যাওয়ার পর, হোয়াইট হাউসের রুজভেল্ট রুমে ফের একত্রিত হন ভেন্স, বিদেশ সচিব মার্কো রুবিও ও অর্থসচিব স্কট বেসেন্ট। ফের আলোচনা শুরু প্রস্তাব দেওয়া হলে ক্ষুব্ধ ট্রাম্প বলেন, “জেলেনস্কি তাঁকে অপমান করেছেন। উনি এটা ভালো করেননি। ওনার আচরণে আমরা সকলে অপমানিত হয়েছি। শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প জানান, জেলেনস্কির সঙ্গে আর আলোচনার জায়গা নেই। এরপর হোয়াইট হাউসে অপেক্ষারত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ও তাঁর প্রতিনিধি দলকে ট্রাম্প নির্দেশ পাঠান, তাঁরা যেন হোয়াইট হাউস ছেড়ে চলে যান।
যদিও ইউক্রেনের প্রতিনিধি দল জানায়, তাঁরা আলোচনা চালিয়ে যেতে চান। তবে তাঁদের সে প্রস্তাব খারিজ করা হয়। এই সময় দেখা যায় প্রেস সচিবের অফিসের বাইরে দুপুরের খাবার হিসেবে স্যালাড, চিকেন-সহ আরও নানা ধরনের খাবার এসেছে। তবে দুপুরের খাবারের আগেই ইউক্রেনের প্রতিনিধি দলকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ১.৪২ মিনিটে হোয়াইট হাউস ছেড়ে বেরিয়ে যান জেলেনস্কি। ধন্যবাদ আমেরিকা, আপনার সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ, এই সফরের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।