Friday, April 19, 2024
বাড়িবিশ্ব সংবাদবিক্ষোভের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় মন্ত্রিসভার পদত্যাগ

বিক্ষোভের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় মন্ত্রিসভার পদত্যাগ

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ৪ এপ্রিল।  চরম অর্থনৈতিক সংকটের জেরে দেশজুড়ে অব্যাহত বিক্ষোভের মধ্যে পদত্যাগ করেছেন শ্রীলঙ্কার মন্ত্রিসভার সদস্যরা।বিবিসি জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কার মন্ত্রিসভার ২৬ সদস্য রোববার একযোগে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে এবং তার ভাই প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে পদত্যাগ করেননি।

শ্রীলঙ্কার ডেইলি মিরর জানিয়েছে, মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র নিয়ে মাহিন্দা রাজাপাকসে সোমবার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করবেন। পরে তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে পারেন। সেখানে বিরোধী দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে সর্বদলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ঘোষণা থাকতে পারে। মন্ত্রিসভার পদত্যাগের পরও কারফিউ উপেক্ষা করে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে শ্রীলঙ্কায়। বিক্ষোভকারীরা ক্ষমতা থেকে রাজাপাকসে পরিবারের বিদায় চাইছে। তারা বলছে, রাজাপাকসেরা ক্ষমতা না ছাড়লে এই পদত্যাগ অর্থহীন।

শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা প্রেসিডেন্ট গোটাবায়ার বড় ভাই। তাদের সবার ছোট ভাই বাসিল রাজাপাকসে ছিলেন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে। আর পরিবারের সবার বড় ভাই চমল রাজাপাকসে কৃষি মন্ত্রণালয় সামলাচ্ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দার ছেলে নামাল রাজাপাকসে ছিলেন ক্রীড়া মন্ত্রী।পদত্যাগের পর প্রধানমন্ত্রীর ছেলে নামাল রাজাপাকসা টুইট করে বলেছেন, তাদের এই সিদ্ধান্ত সরকার ও জনগণের জন্য ‘স্থিতিশীলতা আনতে সাহায্য করবে’।

তবে অনেক বিক্ষাভকারীর অভিযোগ, দেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য প্রেসিডেন্ট এবং তার পরিবারই দায়ী। দেশের মানুষ ক্ষুব্ধ, কারণ তারা এখনও ক্ষমতায় আছে।এক টুইটার ব্যবহারকারী পদত্যাগের বিষয়টিকে উপহাস করে লিখেছেন, ‘এটা একটা নোংরা কৌতুক’। আরেকজন একে বর্ণনা করেছেন ‘স্বৈরাচারের খেলার একটি চাল’ হিসেবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আরেকজন লিখেছেন, “আমরা তোমাদের সবার বিদায় দেখতে চাই – রাজাপাকসে পরিবার, মন্ত্রিসভা, তাদের রাজনৈতিক চাটুকার, দুর্নীতিবাজ মদদদাতা, সহযোগী সংবাদকর্মী। সবাইকে বিদায় নিতে হবে।”১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ তলানিতে নেমে যাওয়া এর একটি বড় কারণ।এ বছর কলম্বোকে প্রায় ৬৯০ কোটি ডলারের ঋণ পরিশোধ করতে হবে, অথচ জ্বালানি তেল, খাদ্য, কাগজের মতো নিত্যপণ্য আমদানির মত যথেষ্ট বিদেশি মুদ্রাও সরকারের হাতে নেই।

এ পরিস্থিতিতে দেখা দিয়েছে চরম বিদ্যুৎ সংকট। প্রতিদিন ১০ ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং হচ্ছে, বন্ধ রাখতে হচ্ছে সড়ক বাতি।শ্রীলঙ্কার পরিসংখ্যান বিভাগ জানিয়েছে, মার্চে মূল্যস্ফীতি হয়েছে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ১৮.৭ শতাংশ। খাদপণ্যের মূল্যস্ফীতি ৩০.২ শতাংশে পৌঁছেছে।গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের বাসভবনের বাইরে বিক্ষোভ শুরু হলে কারফিউ জারি করে সরকার। শুক্রবার সকালে ওই কারফিউ তুলে নিলেও শনিবার আবারও জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। বিক্ষোভ দমাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রবশের পথও সীমিত করা হয়।

সিলোন টুডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির ১১টি বিরোধী দলের প্রতিনিধিরা রোববার সকালে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে এবং প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের সঙ্গে দেখা করে একটি সর্বদলীয় বা বহুদলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব দেন। দেশটির সাবেক শিল্পমন্ত্রী বিমল বীরাবানসা রোববার বিকালে কলম্বোতে সাংবাদিকদের বলেন, “মানুষ বর্তমান মন্ত্রিসভার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। আমাদের দেশকে নানা বিভেদের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। এর সমাধানে আরেকটি নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করার সময় আমাদের নেই। সুতরাং সবচেয়ে ভালো সমাধান হতে পারে বর্তমান মন্ত্রিসভা ভেঙে দিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা।  

“আর এই নতুন সরকার গঠন করতে হবে সব দলের সাথে আলোচনা করে। এ সরকার গঠনের মূল লক্ষ্য হবে বর্তমান সঙ্কট থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে বের করা এবং পরবর্তী নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।”    বীরাবানসা দাবি করেন, তাদের ওই প্রস্তাব প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী দুজনের তরফ থেকেই ‘ইতিবাচক’ সাড়া পেয়েছে।শ্রীলঙ্কার আরেক ইংরেজি দৈনিক ডেইলি মিরর লঙ্কা সূত্রের বরাত দিয়ে রোববার খবর দিয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসেও পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একজনের নামও প্রস্তাব করা হয়েছে।

তবে ওই খবরের সত্যতা অস্বীকার করে রাতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, মাহিন্দা রাজাপাকসে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দেনননি।মাহিন্দা রাজাপাকসে পদত্যাগ নাম করলেও তার মন্ত্রিসভার সদস্যরা রাতে তার হাতে পদত্যাগপত্র তুলে দেন এবং পরবর্তী করণীয় নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘ বৈঠক হয় বলে মিররের প্রতিবেদনে জানানো হয়।পত্রিকাটি লিখেছে, সোমবারও কলম্বোর বিভিন্ন স্থানে কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভের ঘোষণা রয়েছে বিরোধী দলগুলোর। তারা রাজাপাকসেদের বড় দুই ভাইয়েরও পদত্যাগ চাইছে।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য