স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ৪ এপ্রিল। কিইভের নিকটবর্তী শহরগুলোর রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কয়েকশ মৃতদেহ পাওয়ার পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু করেছে ইউক্রেইনের কর্তৃপক্ষ।ওই মৃতদেহগুলোর কয়েকটির হাত পিছমোড়া করে বাঁধা এবং তাদের খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
কিইভ অঞ্চল থেকে রাশিয়ার বাহিনীগুলো সরে যাওয়ার পর সেখানকার কয়েকটি ছোট শহরে এসব লাশ পাওয়া যায়। ইউক্রেইনের অন্যান্য অংশে আক্রমণ জোরদার করার জন্য এসব শহর থেকে রাশিয়ার সেনাদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ইউক্রেইনের রাজধানী কিইভের কেন্দ্রস্থল থেকে ৩৭ কিলোমিটার উত্তরপশ্চিমের শহর বুচায় রয়টার্সের সাংবাদিকরা রাস্তার পাশে পড়ে থাকা এক ব্যক্তির লাশ দেখতে পান, তার হাত পিছমোড়া করে বাঁধা এবং মাথায় গুলির আঘাত ছিল।বুচার ডেপুটি মেয়র তারাস শাপরাভস্কি জানান, চলতি সপ্তাহের প্রথমদিকে শহরটি থেকে রাশিয়ার বাহিনীগুলোকে প্রত্যাহার করার পর তারা ৩০০ লাশ পেয়েছেন, তাদের মধ্যে ৫০ জনকে রুশ বাহিনী বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করেছে।
তবে কতোটি লাশ পাওয়া গেছে এবং কারা তাদের হত্যার জন্য দায়ী, তা রয়টার্স স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করতে পারেনি।রোববার এক বিবৃতিতে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, বুচাতে রাশিয়ার সেনাদের কথিত ‘অপরাধের’ অভিযোগ জানাতে ইউক্রেইনের কর্তৃপক্ষ যে সব ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করেছে সেগুলোর সবই ‘প্ররোচনা’, রাশিয়ার সেনাদের হাতে বুচার কোনো বাসিন্দা সহিংসতার শিকার হয়নি।
চলতি সপ্তাহে ইউক্রেইনীয় এক গির্জার প্রাঙ্গণে একটি গণকবর পাওয়া গেছে। কৃত্রিমউপগ্রহের ছবিগুলোতে সেখানে খনন করা ৪৫ ফুট লম্বা একটি পরিখা দেখা গেছে। রয়টার্সের সাংবাদিকরা বুচার একটি গির্জার গণকবর পরিদর্শন করেছেন যেটি তখনো পর্যন্ত উন্মুক্ত ছিল, এখানে চাপা দেওয়া লাল মাটির ভেতর থেকে লাশের হাত-পা বাইরে বের হয়ে ছিল।
এখানে চালানো ধ্বংসযজ্ঞ ও বেসামরিকে প্রতি চালানো সম্ভাব্য সহিংসতার ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর রাশিয়া ও দেশটির নেতা ভ্লাদিমির পুতিনের ব্যাপক নিন্দা শুরু হয়েছে।এসব অভিযোগের স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। এসব ছবিকে ‘তলপেটে সজোরে ঘুষি মারার মতো’ বলে বর্ণনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। ‘পুতিন ও তার সমর্থকরা এর পরিণতি অনুভব করবে’ বলে মন্তব্য করেছেন জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলজ। সামনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার জন্য পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
অতিরিক্ত আরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিষয়ে জাপান মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা করবে বলে জানিয়েছে।জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টিনা লামব্রেখট বলেছেন, রাশিয়ার গ্যাস আমদানি নিষিদ্ধ করার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবশ্যই আলোচনা করতে হবে।১৫ সদস্যের জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের চলতি মাসের সভাপতির দায়িত্বে থাকা ব্রিটেনের মিশন জানিয়েছে, রাশিয়া অনুরোধ সত্ত্বেও নিরাপত্তা পরিষদ ইউক্রেইন নিয়ে সোমবার আলোচনায় বসবে না, সূচী অনুযায়ী মঙ্গলবারই বসবে।রাশিয়ার সেনারা বেসামরিকদের হত্যা করেছে, কিইভ এমন অভিযোগ করার পর বুচায় ‘ইউক্রেইনীয় উগ্রপন্থিদের প্ররোচনা’ নিয়ে আলোচনার জন্য সোমবার নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক আহ্বানের অনুরোধ জানিয়েছিল রাশিয়া।