Wednesday, January 15, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদবিদ্রোহের ধাক্কা সামলে উঠতে কী করবেন পুতিন

বিদ্রোহের ধাক্কা সামলে উঠতে কী করবেন পুতিন

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,২৬ জুন: মাত্র দেড় দিনের বিদ্রোহ ২৩ বছরের শাসনামলে গড়ে ওঠা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ‘স্ট্রং ম্যান’ ইমেজে যে জোর ধাক্কা দিয়েছে তা সামলে উঠতে কী করতে চলেছেন তিনি।তিনি আদৌ এই ধাক্কা সামলে উঠতে পারবেন কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।বিবিসি-র বিশ্ব সম্পর্ক বিষয়ক সম্পাদক জন সিম্পসন বলেন, গত ২০ বছরের বেশি সময় পুতিন অনেক উত্থান-পতন দেখেছেন বটে। কিন্তু সবসময় তিনি তার ‘বিগ বস’ সুলভ ইমেজ সাফল্যের সঙ্গে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন।‘‘কিন্তু শনিবার যেটা হলো তা তার শাসন ব্যবস্থার খুব খুবই দুর্বলাবস্থা প্রকাশ করেছে।”পুতিনের খালি গায়ে ঘোড়ায় চড়া বা কুস্তি লড়ার ছবিগুলোর কথা উল্লেখ করে সিম্পসন আরো বলেন, ‘‘আপনি নিশ্চয়ই তার ওই ছবি‍গুলোর কথা মনে করতে পারছেন। ইয়েভগেনি প্রিগোজিনের উত্থান তার ওই সব কিছুকে চ্যালেঞ্জ করেছে।

‘‘সত্যি বলতে, অদ্ভুত এক অপরাধী পটভূমির সাথে তিনি প্রিগোজিনের মত একজন অহংকারী ও দাম্ভিক মানুষকে খুঁজে পেয়েছেন….যিনি নিষ্ঠুরতা এবং বর্বরতার উপর ভিত্তি করে খুবই আকর্ষনীয় একটি সামরিক সংস্থা গড়ে তুলেছেন। যার ফলে এখন পুতিনের পুরো কাঠামো ধসে পড়তে শুরু করেছে।”শনিবার ভোররাতে হঠাৎ করেই পুরো বিশ্ব অবাক চোখে দেখতে থাকে পুতিনের প্রশ্রয়েই এতদিন বেড়ে ওঠা একটি বাহিনী প্রবল আক্রোশ নিয়ে মস্কো অভিমুখে যাত্রা করেছে।ইয়েভগেনি প্রিগোজিন, যাকে ‘পুতিন্স শেফ’ নামে ডাকা হত। দীর্ঘ দিন ধরে তিনি পুতিনের প্রতি তার অনুগত্যের প্রমাণ বার বার দিয়েছেন। ইউক্রেইন যুদ্ধে পুতিনের সবচেয়ে অগ্রাসী বাহিনী হয়ে ওঠে প্রিগোজিনের যোদ্ধারা। গত মাসেও এই ওয়াগনার বাহিনী সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে রাশিয়াকে ইউক্রেইনের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বাখমুত শহরের দখল পাইয়ে দিয়েছে।প্রিগোজিনের ওয়াগনার যোদ্ধারা মস্কোর দিকে যাত্রা শুরুর পর টেলিভিশনে সংক্ষিপ্ত এক ভাষণে পুতিন ওয়াগনার প্রধানের নাম উল্লেখ না করে তাদের ‘পিঠে ছুরি মেরেছে’ এবং ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে বর্ণনা করেন।

কোথায় পুতিন:

টেলিভিশনে ওই ভাষণের পর থেকে পুতিনকে আর জনসম্মুখে দেখা যায়নি বা বিদ্রোহীদের ফিরে যাওয়া নিয়েও তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। খুব শীঘ্রই তার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই বলেও ক্রেমলিন থেকে জানানো হয়ছে।যদিও রোববার রাশিয়ার রাষ্ট্রায়াত্ত টেলিভিশনে পুতিনের একটি সাক্ষাৎকার প্রচার করা হয়েছে। যেটি দেখেই বোঝা যাচ্ছে সেটি বিদ্রোহের আগে রেকর্ড করা। সেখানে পুতিন ইউক্রেইন যুদ্ধে রাশিয়ার অগ্রগতির বিষয়ে তার আত্মবিশ্বাসের কথা বলেন।ওয়াগনার বাহিনী শনিবার মস্কোর কাছাকাছি পৌঁছে গেলে নগর প্রশাসন থেকে সন্ত্রাস-বিরোধী নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছিল। বিদ্রোহীরা মস্কোর ২০০ কিলোমিটার দূর থেকেই ফিরে গেলও নগরীতে রোববারও জোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জারি আছে বলে জানায় বিবিসি।

তবে পুতিন বর্তমানে মস্কোয় অবস্থান করছেন কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।  কেউ কেউ বলছেন, বিদ্রোহের কারণে পুতিনের যে দুর্বল ভাবমূর্তি প্রকাশ পেয়েছে সেখান থেকে বের হয়ে আসতে তিনি পাল্টা আক্রমণ করবেনই করবেন। এজন্য হয় তিনি ইউক্রেইনে আক্রমণ আরো জোরদার করতে পারেন, অথবা দেশের ভেতর বিরোধীদের উপর আরো খড়গহস্ত হবেন।পোলিশ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য রাদেক সিকোরস্কি বিবিসি-কে বলেন, ‘‘এবার পুতিন খুব সম্ভবত তার প্রতি আনুগত্য নিয়ে যারা দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাবেন।‘‘এর অর্থ তার শাসন ব্যবস্থা আরো কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠবে এবং একই সঙ্গে তিনি আরো নৃশংস হয়ে উঠবেন।”

সমালোচকরা যা বলছেন:

পুতিন সমালোচকরা অবশ্য শনিবারের ওই বিদ্রোহকে ‘পুতিনের শেষের শুরু’ বলে মনে করছেন।তাদের একজন রাশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিখাইল কাসিয়ানভ। যিনি পুতিনের আমলেই ২০০০ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু পুতিন তাকে বরখাস্ত করেন এবং তিনি পুতিনের বড় সমালোচকদের একজন হয়ে ওঠেন।বিবিসি তাকে প্রশ্ন করেছিল, প্রিগোজিন কোথায় যেতে চলেছেন। জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হয় তিনি প্রথমে বেলারুশেই যাবেন। কিন্তু সেখান থেকে তিনি খুব সম্ভবত আফ্রিকা অথবা অন্য কোথাও জঙ্গলে পালিয়ে যাবেন অথবা এমন কিছু করবেন।‘‘পুতিন তাকে কিছুতেই ক্ষমা করবেন না। কারণ, প্রিগোজিন পুতিনের শাসনের স্থিতিশীলতাকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। ফলাফল স্বরূপ তার জীবন এখন বড় একটি প্রশ্নের নিচে চাপা পড়ে যাবে।”বিদ্রোহ পুতিনের কতটা ক্ষতি করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘এটা তার শেষের শুরু….এই মুহূর্তে তিনি বিশাল বড় সংকটের মধ্যে পড়েছেন।”

কী বলছেন পুতিনপন্থিরা:

রাশিয়ার সরকার যে কিছুটা সংকটে পড়েছে তা পুতিনের সাবেক এক উপদেষ্টাও স্বীকার করে নিয়েছেন।রাশিয়ার রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ এবং পুতিনের সাবেক উপদেষ্টা সের্গেই মারকভ বিবিসিকে বলেন, ওয়াগনার বিদ্রোহ নিশ্চিতভাবেই ‘রাশিয়া সরকারের ভেতর কিছু সংকট দেখা দেওয়ার একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত’।বলেন, ‘‘তাই ভ্লাদিমির পুতিনকে তার নীতি পরিবর্তন করতে হবে এবং রুশ সমাজের ও রাশিয়ার সেনাবাহিনীর একটি অংশের দাবি মেনে ইউক্রেইনের যুদ্ধ জয়ের জন্য [একটি কঠোর] নীতি গ্রহণ করতে হবে।”ওয়াগনার বিদ্রোহ পুতিন এবং পুরো রাশিয়ার জন্য ‘সংকটময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে’ বলেও স্বীকার করেন তিনি। বলেন, এটা ‘বড় ধরণের গৃহযুদ্ধের দিকে’ মোড় নিতে পারতো।পুতিন কিছু ‘ভুল করেছেন’ বলেও মনে করেন তিনি। বলেন, ‘‘সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো তিনি পশ্চিমা রাজনীতিকদের অনেক বেশি বিশ্বাস করে ফেলেছেন। এখন থেকে পুতিন হয়তো শুধু তার সামরিক বাহিনীর উপরই নির্ভর করবেন।”

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য