স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ৬ জানুয়ারি। কাজাখস্তানে কয়েকদিন ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে আনতে একটি আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনীর অংশ হিসেবে মধ্য এশিয়ার দেশটিতে প্যারাট্রুপার পাঠিয়েছে রাশিয়া।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত কয়েকটি দেশের একটি সামরিক জোট বৃহস্পতিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এর আগে কাজাখ পুলিশ জানায়, তাদের সদস্যরা দেশের বৃহত্তম শহর আলমাতিতে ১০ দাঙ্গাকারীকে ‘নির্মূল’ করেছে।
জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির পর সৃষ্ট অসন্তোষ থেকে চলতি সপ্তাহে কাজাখস্তানজুড়ে যে ভয়াবহ বিক্ষোভ ও সহিংসতা হয়েছে, ১৯৯১ সালে স্বাধীনতার পর দেশটিতে আর কখনো এমন পরিস্থিতি দেখা যায়নি।এক পর্যায়ে প্রেসিডেন্ট কাসেম-জোমার্ট তোকায়েভ ‘বিদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সন্ত্রাসী গ্যাংয়ের’ সহিংস বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতে রাশিয়া, আর্মেনিয়া, বেলারুশ, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তানের সামরিক জোট কালেকটিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশনের সহায়তা চান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার সকালে নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েক ডজন সদস্য ও বেশ কয়েকটি সাঁজোয়া যান আলমাতির প্রধান চত্বরে প্রবেশ করে, ওই চত্বরে তখন তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করছিলেন সরকারবিরোধী কয়েকশ মানুষ।নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় গুলির শব্দ শোনা যায়; তবে এরপর থেকে ওই এলাকার পরিস্থিতি শান্ত আছে। যাচাই করা যায়নি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের আলমাতির কুয়াশাচ্ছন্ন সড়কে টহল দিতে, গুলি ছুড়তে দেখা গেছে; শহরজুড়ে ব্যাপক লুটপাটেরও খবর পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এক ভিডিওতে সড়কের উপর স্তূপ করে রাখা অস্ত্র এবং হাঁটতে থাকা মানুষজন সেসব অস্ত্র তুলে নিচ্ছে এমন দৃশ্য দেখানো হয়েছে।বিক্ষোভে এক হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছে, তাদের মধ্যে ৪০০-র বেশি হাসপাতালে ভর্তি বলে কাজাখ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা তাস।প্রথম দিকে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হলেও পরে রাজনৈতিক নানান অসন্তোষও তাতে যুক্ত হয়।বিক্ষোভকারীরা দীর্ঘ সময় ধরে কাজাখস্তান শাসন করা নুরসুলতান নাজারবায়েভ ও তার ঠিক করে দেওয়া উত্তরসূরী তোকায়েভের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন।
৮১ বছর বয়সী নাজারবায়েভ ২০১৯ সালে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ালেও এখনও রাজনৈতিকভাবে বেশ প্রভাবশালী, তার পরিবারই কাজাখস্তানের অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক বলে মনে করা হয়। এবার বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে তাকে দেখা যায়নি।
তার উত্তরসূরী তোকায়েভ বলেছেন, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো বিভিন্ন ভবন, স্থাপনা ও অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল।
তিনি বিদেশি দূতাবাস এবং বিদেশি কোম্পানির মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিতের নির্দেশ দিয়েছেন।
মঙ্গল ও বুধবার দেশটিতে রক্তক্ষয়ী সহিংসতায় পুলিশ ও ন্যাশনাল গার্ডের ৮ সদস্য নিহত হয়েছে বলে কাজাখ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বুধবার জানায় রুশ বার্তা সংস্থা স্পুৎনিক।
পরে আলমাতি বিমানবন্দরে ‘সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান’ চলাকালে আরও ২ সেনা নিহত হয় বলে কাজাখ গণমাধ্যমগুলোতে বলা হয়েছে, জানিয়েছে রাশিয়ার বার্তা সংস্থাগুলো।