Sunday, May 18, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদজাপান-দক্ষিণ কোরিয়া সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা

জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,১৭ মার্চ: অতীতের বিরোধ ভুলে টোকিওতে বৈঠক করেছেন জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষ দুই নেতা, যা দুই দেশের সম্পর্কে একটি নতুন মাইলফলক বলে স্বীকৃত হচ্ছে।দুই নেতার এ বৈঠকের আগে এক সপ্তাহে উত্তর কোরিয়া চার চারটি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে এ অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়িয়েছে।সেই উত্তেজনার আবহেই জাপান-দক্ষিণ কোরিয়ার নেতার এ বৈঠক স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, দু’দেশের মধ্যকার অতীতের বিরোধের চেয়েও কেন প্রাধান্য পাচ্ছে নিরাপত্তার বিষয়টি।আঞ্চলিক হুমকির মুখে নিজেদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে অতীতের বরফ শীতল সম্পর্ক ভেঙে সামনে এগিয়ে যেতে চাইছে এশিয়ার এই দুই প্রতিবেশী দেশ।

বিবিসি জানায়, বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইয়ল জাপানের রাজধানী টোকিওতে পৌঁছান। গত এক যুগের মধ্যে সিউলের কোনও নেতার এটাই প্রথম জাপান সফর।টোকিওর আমন্ত্রণে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট এই সফর করেন। সরাসরি জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।দুই নেতা বৈঠকে কয়েকটি বিষয়ে একমত হয়েছেন বলে জানায় বিবিসি। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, এখন থেকে দুই নেতা নিয়মিত পরষ্পরের দেশে সফরে যাবেন এবং বাণিজ্য নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধের নিষ্পত্তি করবেন।এছাড়া, জাপান দক্ষিণ কোরিয়ার উপর থেকে ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে রাজি হয়েছে। আর দক্ষিণ কোরিয়া জাপানের বিরুদ্ধে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) করা তাদের অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেবে বলে জানিয়েছে।বিবিসি এই দুই দেশের বিরোধ ভুলে সম্পর্কোন্নয়নের কারণ এবং ফল বিশ্লেষণ করেছে।

সিউল প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যদিও তাদের প্রত্যাশাই বেশি:

 জাপানের সঙ্গে এমন একটি বৈঠকের আবহ তৈরির কঠিন কাজটি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক খুব সফলভাবেই করেছেন।সেই ২০১১ সালের পর এই প্রথম দক্ষিণ কোরিয়ার কোনও প্রেসিডেন্টকে টোকিওতে আমান্ত্রণ জানানো হয়েছে।এতদিন ধরে এই দুই প্রতিবেশী দেশ ঐতিহাসিক নানা জটিলতায় জর্জিরিত ছিল। ১৯১০ সাল থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়া জাপানের উপনিবেশ ছিল।  ওই সময়ে জাপানের সেনারা লাখ লাখ কোরীয়কে খনি ও কারখানায় কাজ করতে বাধ্য করেছে। কোরীয় নারীদের তারা করে রেখেছিল যৌনদাসী। পুরাতন ওই ক্ষত এখনো কেউ ভুলে যায়নি বা মাফ করাও হয়নি।তবে জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক করাকে প্রাধান্য দিয়ে গত সপ্তাহে একটি উদ্যোগ নেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে জাপানি সেনাদের দাসত্বের শিকার হওয়া কয়েকজনের জন্য জাপানের কাছ থেকে সিউলের যে ক্ষতিপূরণের দাবি ছিল তা প্রত্যাহার করে নেন তিনি।

তার পরিবর্তে দক্ষিণ কোরিয়ার নিজেই ক্ষতিপূরণের অর্থ যোগাড় করে নেওয়ার জন্য রাজি হন ইয়ুন। জাপানি কারখানায় শ্রমে বাধ্য হওয়া দক্ষিণ কোরীয়দেরকেও সিউলের পক্ষ থেকেই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন তিনি।এর মধ্য দিয়ে উত্তরপূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তার খাতিরে জাপানের সঙ্গে অতীত বিরোধকে ইয়ুন সরিয়ে রাখারই চেষ্টা নিয়েছেন। যদিও দক্ষিণ কোরিয়ার বিরোধী দলের নেতা এই চুক্তিকে ‘দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে অপমানজনক ঘটনা’ বলে বর্ণনা করেছেন।বিরেধীদের সমালোচনার মুখে পড়লেও এই উদ্যোগের কারণেই প্রেসিডেন্ট ইয়ুনকে টোকিও সফরের আমন্ত্রণ জানায় জাপান।কূটনীতিকরা এই ঘটনায় বেশ বিস্মিত এবং প্রভাবিত হয়েছেন। তারা এটিকে সহসী এবং চতুর পদক্ষেপ হিসেবেই দেখছেন। বিশেষ করে রাজনীতিতে একেবারেই আনকোরা কারো কাছ থেকে এ ধরণের সিদ্ধান্ত, যার বৈদেশিক নীতি বিষয়ে কোনো পূর্বঅভিজ্ঞতা নেই।গত বছর দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ইয়ুল একজন আইনজীবী ছিলেন। ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি জাপানের সঙ্গে ভাঙা সম্পর্ক মেরামতকে তার পররাষ্ট্রনীতির মূল ভিত্তি বানিয়েছেন।

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী উত্তর কোরিয়া এখন পরমাণু অস্ত্র শক্তিধর। দেশটি দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য দিন দিন বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। এ পরিস্থিতিতে সিউল টোকিওর সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় এবং দুই দেশের সেনাবাহিনীর যৌথভাবে কাজ করাই লাভজনক হবে বলে মনে করছে।একইসঙ্গে ইয়ুন তার শক্তিশালী মিত্র যুক্তরাষ্ট্রকেও খুশি করতে চাইছেন। চীনকে প্রতিহত করতে যুক্তরাষ্ট্র এখন মরিয়া হয়ে নিজেদের মিত্রদের মধ্যে বিরোধ মেটানোর চেষ্টা করছে।যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জাপানের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের চুক্তিকে ‘একটি যুগান্তকারী নতুন অধ্যায়’ বলেছেন। এমনকী তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়ুনকে হোয়াইট হাউজ সফরে যাওয়ার রাষ্ট্রীয় আমন্ত্রণপত্রও পাঠিয়েছেন বলে জানায় বিবিসি।এটা অবশ্যই বিশ্বে দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থানের নতুন অধ্যায়।

এটি জাপানেরও কৌশলগত জয়:

শুধু দুই দেশের শীর্ষ নেতারাই নন বরং পররাষ্ট্র এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও নিরাপত্তা আলোচনার জন্য নিয়মিত বৈঠকে বসবেন বলে ঠিক হয়েছে।টোকিও এবং সিউলের মধ্যে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হলে দুই দেশই যে লাভবান হবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এটা জাপানের জন্য কৌশলগত এবং কূটনৈতিক বিজয়ও বটে।বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ জাপান আগামী মে মাসে হিরোশিমায় বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির সাত দেশের জোট জি-৭ এর পরবর্তী সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।ওই সম্মেলনে উত্তর কোরিয়া ও চীনের কাছ থেকে পাওয়া হুমকি নিয়ে আলোচনা হবে।দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা সম্পর্ক থাকলে তা জাপানের জন্য ওইসব হুমকি কীভাবে মোকাবেলা করা হবে সে বিষয়ে আরও দৃঢ় অবস্থান নিতে সহায়ক হবে। যুক্তরাষ্ট্রকেও তারা গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিতে পারবে।উত্তর কোরিয়া ও চীনের কারণে উত্তরপূর্ব এশিয়া ক্রমশ অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। এ পরিস্থিতিতে টোকিও ওয়াশিংটনকে আস্বস্ত করতে চায় যে, ওই অঞ্চলে তারাই যুক্তরাষ্ট্রের মূল মিত্র এবং পাওয়ারব্রোকার হিসেবে এখনও তাদের উপরই নির্ভর করতে পারে।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য

error: <b>Alert: </b>Content selection is disabled!!