স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,৮ মার্চ: শীতের ছুটি শেষে আফগানিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পুনরায় খুলেছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন তালেবানের নিষেধাজ্ঞার কারণে ক্লাসে ফিরতে পারছেন না নারী শিক্ষার্থীরা। আর এভাবেই ক্রমশ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে আফগান নারীদের জগৎ।গত বছরের শেষ দিয়ে তালেবান প্রশাসনের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।কম্পিউটার সাইন্সে চতুর্থ বর্ষের এক নারী শিক্ষার্থী দুঃখ ও ক্ষোভ নিয়ে বিবিসিকে বলেন, ‘‘এখন আমি আর কেউ না।‘‘আমার পরিকল্পনা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষ করে আমি আমার মাস্টার্স করব, তারপর পিএইচডি। আমি আমার দেশ, জাতি ও মানুষের জন্য কাজ করতে চেয়েছিলাম। আমি এখন আর সেটা করতে পারব না।”
অথচ মাত্র কয়েক মাস আগে তিনি এবং তার বান্ধুরা মিলে কিভাবে গ্রাজুয়েশনের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করবেন তা নিয়ে আলোচনা করেছেন।এমন বেশ কয়েকজন নারী শিক্ষার্থী বিবিসি-কে বলেছেন, ফেলে আসা খুশি ও আশায় পূর্ণ সময়ের কথা মনে করে এখন তারা শুধু কাঁদেন আর তাদের ভাই ও কাজিনদের পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া চেয়ে চেয়ে দেখেন।তাদের মধ্যে মাত্র একজন তার নিজের নামের প্রথম অংশ প্রকাশ করতে রাজি হয়েছেন। তার নাম আতেফা, বয়স ১৯ বছর। হেরাতের বাসিন্দা কম্পিউটার সাইন্সের এই শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কোনো স্মৃতিও নেই, যেটা তিনি এখন মনে করবেন।কারণ, তিনি মাত্রই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে একজন ‘ওয়েবসাইট ডেভেলপার’ হওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। তার ওই সব ‘স্বপ্ন নষ্ট হয়ে গেছে’, বলেন তিনি।‘‘আমি এবং আমার বন্ধুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে কঠোর পরিশ্রম করেছি। কিন্তু আমার স্বপ্ন সত্যি করা গেলো না…এটা তার আগেই শেষ হয়ে গেলো।”শুধু উচ্চ শিক্ষার অধিকারই নয় বরং তালেবান পুনরায় ক্ষমতায় এসে সে দেশের নারীদের কাজ করার অধিকারসহ আরো অনেক অধিকার কেড়ে নিয়েছে।
আফগানিস্তানে মেয়েদের মাধ্যমিক স্কুলগুলো আরো আগেই বন্ধ করে দেয় তালেবান।তালেবান প্রশাসনের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা অবশ্য দাবি করেছেন, এ ব্যবস্থা অস্থায়ী। তাদের কেউ কেউ কারণ ব্যাখ্যায় কঠোর পোশাক বিধি, তহবিলের অভাব বা ইসলামিক ধারায় পাঠ্যক্রম ঠিক করাসহ অনেক রকম কথাই বলছেন।২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সরকারকে উৎখাত করে পুনরায় আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে তালেবান। তখন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারী ও পুরুষ শিক্ষার্থীদের ক্লাসে আলাদা বসার নিয়ম জারি হয়।কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের একজন নারী শিক্ষার্থী বিবিসিকে বলেন, ‘‘যদি তারা আমাদের হিজাব পরতে বলে তবে আমরা খুশি মনেই তা মেনে নেব।
‘‘যদি আমাদের আলাদা ক্লাস করতে বলা হয়, আমরা খুশি মনে সেটাও মেনে নেব। শুধু আমাদের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দিন।”নারী শিক্ষার্থীদের এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ করা পুরুষ শিক্ষার্থীদের জন্যও ভয়ঙ্কর কষ্ট বয়ে নিয়ে এসেছে।তাদের একজন বিবিসি-কে বলেন, ‘‘ক্লাসে ফিরে মনে হচ্ছে যেন জানাযায় এসেছি।‘‘মনে হচ্ছে, আমাদের বিশ্বাবিদ্যালয়ের কেউ মারা গেছেন। সবাই খুবই হতাশ। আমি কারণ জানি….কিন্তু সেটা নিয়ে কথা বলতে ভয় পাই। আমার মনে হয়, যদি কথা বলি তবে তালেবান সরকার আমাকে গ্রেপ্তার করবে।”আফগানিস্তানে এখন মেয়েরা শুধুমাত্র প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। পারওয়ান প্রদেশের এক তরুণ বলেন, ‘‘শুধু পুরুষদের নিয়ে আপনি আমাদের দেশ গড়তে পারবেন না। নারীদেরও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করা প্রয়োজন।”